শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মীর কাসেম

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় ও অন্যান্য আইনি বিষয়াদির নিষ্পত্তির পর শিবিরের প্রতিষ্ঠা সভাপতি মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

জামায়াত-শিবিরের ‘শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি’র নেপথ্যের কারিগর মীর কাসেম আলীর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত হয় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের মাধ্যমে।

১৯৭০ সালে ১৮ বছর বয়সে ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন এই ধনকুবের। ১৯৭১ সালে ছাত্রনেতা থেকে হয়ে ওঠেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান সংগঠক। এই আলবদর বাহিনীই একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, গুপ্তহত্যা, লুণ্ঠনসহ নানা অপকর্ম চালায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার হাত ধরেই নতুন করে যাত্রা শুরু করে জামায়াতের স্বাধীনতা পরবর্তী ছাত্র সংগঠন- ছাত্রশিবির। মূলত, নাম বদল করেই ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ইসলামী ছাত্রসংঘ। নতুন এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মীর কাসেম আলী।

শিবিরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শিবিরের যাত্রা শুরু হয়। মীর কাসেম আলী নিজে এর সভাপতি হন।

শিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন ছয়জন সদস্যের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তিনি ছিলেন সংগঠনটির দ্বিতীয় সভাপতি।

মীর কাসেম ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার মুন্সিডাঙ্গি সুতালরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছাত্রজীবন কাটে চট্টগ্রামে। ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে একই কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইসলাম ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন। পরে তাকে চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি করা হয়। ওই পদে থেকেই মীর কাসেম গড়ে তোলেন আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম শাখা।

একাত্তরের ৭ নভেম্বর রাজনৈতিক জীবনে আবার পদোন্নতি হয় তার। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আগ পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। স্বাধীনতার পর জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে মীর কাসেম আত্মগোপন করেন।

১৯৭৭ সালে তারই হাত ধরে আবার যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা বিরোধী দল জামাতের ছাত্র সংগঠন- ছাত্রশিবির।

১৯৮০ সালে সরাসরি জামায়াতে যোগ দেন মীর কাসেম। ওই বছর তিনি সৌদিভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর বাংলদেশের পরিচালক হন।

তবে মীর কাসেমের প্রাতিষ্ঠানিক উত্থান হয় ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান তিনি।

এরপর চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, গণমাধ্যম ও শিক্ষাসহ—সব খাতেই বিচরণ করেন তিনি। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক এই শিবির সভাপতি।

এছাড়া তিনি ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য। যার অধীনে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যালস, ডায়াগনিস্ট সেন্টার, হাসপাতাল প্রভৃতি।

দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনেরও প্রধান উদ্যোক্তা তিনি। এর অধীনে রয়েছে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকা ও দিগন্ত টিভি।

‘কেয়ারি’ নামে কমপক্ষে ১০টি কোম্পানির পরিচালক মীর কাসেম। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন্সে যাওয়ার জন্য রয়েছে তার একক মালিকানাধীন বিলাসবহুল পাঁচটি প্রমোদতরী।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য মীর কাসেমকে বলা হয়, দলটির ‘খাজাঞ্চি’ (অর্থের জোগানদাতা)।



মন্তব্য চালু নেই