শিরোপা জিতে ইতিহাস বার্সার

নেইমার ও লুইস সুয়ারেজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের আশা নিয়ে বার্সেলোনায় এসেছেন। বার্লিনের ফাইনালে জুভেন্টাসকে বার্সেলোনা ৩-১ গোলে হারানোয় দুজনের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো, ফাইনালে গোল করলেন ব্রাজিল ও উরুগুয়ের তারকা। লিওনেল মেসি গোল না পাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতা বার্সার কী একটা অপূূর্ণতা থেকে গেলো না! গোল নিয়ে অবশ্য কোনো মাথা ব্যধা থাকার কথা নয়। বার্সেলোনার তিনটি গোলেই অবদান রাখা এই আর্জেন্টাইন তারকাই যে ফাইনালের অলিখিত সেরা খেলোয়াড়। যদিও ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা।

শনিবার বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। প্রথমার্ধ ১-০ থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতায় ফেরে জুভেন্টাস। ৫৪ মিনিটে ১-১ গোলে সমতা ফেরায় জুভরা। বার্সা শিবির কিছুটা চাপে। তবে লিওনেল মেসির মতো তারকা যেই দলে থাকে তাদের তো নির্ভারই থাকার কথা। হ্যাঁ, মেসি ফের ঝলক দেখালেন, দলকে এগিয়ে নিলেন। ৬৭ মিনিটে মাঝমাঠ ট্রেডমার্ক দৌড় দেন মেসি। ডি বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শট নেন এলএম টেন। দুর্দান্ত দৃঢ়তায় বুফন শট ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বলে লুইস সুয়ারেজের নেয়া বুলেটগতির শট বুফন তো দূরের কথা কোনো গোলরক্ষকের পক্ষেই ঠেকানো সম্ভব নয়।

এর চার মিনিট পর নেইমারের গোল হ্যান্ডবলের কারণে বাতিল করে দেন ম্যাচ রেফারি। ডি বক্সের ভেতরে থেকে দুর্দান্ত হেড করে গোল করেছিলেন নেইমার। তবে বলে মাথা ছোঁয়ানোর আগেই হাতে স্পর্শ লাগে ব্রাজিলিয়ান তারকার। ফলে গোল বাতিল করেন রেফারি।

শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে শুরুতেই ম্যাজিেকের দেখা মিলল। বার্লিনের ফাইনালে চতুর্থ মিনিটে মেসি ঝলকে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। চার মিনিটের মাথায় জুভেন্টােসের ডি বক্সের ভেতর ইনিয়েস্তার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলেন মেসি। একপর্যায়ে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা ইভান র‌্যাকিটিককে পাস দেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। আলেতা শটে বুফনকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান র‌্যাকিটিক।

প্রথমার্ধ ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে শেষ করে বার্সেলোনা। তবে ব্যবধান আরো বড় হতে পারতো কাতালানদের। ৩৮ ও ৩৯ মিনিটে পরপর দুবার গোল মিস করেন লুইস সুয়ারেজ। ৩৮ মিনিটে সুয়ারেজের নেয়া জোরালো শট বারপোস্টের ওপর দিকে চলে যায়। পরের মিনিটে ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে পারেননি লিভারপুলের সাবেক তারকা। এবার বল তুলে দেন জুভ গোলরক্ষক বুফনের হাতে।

বিরতির এক মিনিট আগে মেসি ঝলকে ব্যবধান দ্বিগুন করার সুযোগ পেয়েছিল কাতালানরা। মাঝমাঠ থেকে ট্রেডমার্ক দৌড় দিকে পরপর তিনজনকে কাটিয়ে বল নিয়ে জুভেন্টাসের ডি বক্সে ঢুকেন মেসি। তবে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় বল মাঠছাড়া হয়ে গেলে হতাশ হন কাতালান সমর্থকরা।

মেসিপ্রথমার্ধ ১-০ তে শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে বার্সেলোনা। তবে ৫৪ মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে কালো-সাদার ঢেউ তুলে জুভেন্টাস্। ডি বক্সের ভেতর থেকে তেভেজের নেয়া জোরালো শট দুর্দান্ত দৃঢ়তায় রুখে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক টার স্টেগান। তবে ফিরতি বলে আলভেরো মোরাতোর শট আর রুখতে পারেননি তিনি। সেমিফাইনালের দুই লেগের পর ফাইনালেও গোল করে অসাধারণ কীর্গি গড়েন মোরাতা।

৬৭ মিনিটে সুয়ারেজের গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার পর একের পর এক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমে উঠে। তবে কোনো দলই গোলের দেখা পাচ্ছিল না। ২-১ ব্যবধানে খেলা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দর্শকরা। তখনই দেখা মিলল ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য। মাঝমাঠের সামান্য ভেতরে বল পান মেসি। মেসি বাড়িয়ে দেন নেইমারকে। নেইমার সামান্য এগিয়ে বদলি খেলোয়াড় পেদ্রো রদ্রিগেজকে বাড়িয়ে দেন। রদ্রিগেজ জুভ ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে নেইমারকে বল ফেরত দেন। বল ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল করার স্বপ্ন পূরণ করতে ভুল করেননি নেইমার।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে ট্রেবল জয় সম্পন্ন করে লুইস এনরিকের বার্সেলোনা। ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান ক্লাব হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের রেকর্ড গড়ে কাতালানরা। এর আগে ২০০৯ সালে পেপ গার্দিওলার অধীনে ট্রেবল জয় করেছিল কাতালানরা।

ম্যাচের ৩-১ গোলের স্কোরলা্ইন দেখে মনে হতে পারে ম্যাচটি হয়তো হেসেখেলেই জিতেছে মেসি-নেইমারের দল। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইতালিয়ান জায়ান্টদের হারাতে রীতিমতো কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে মেসিদের। তেভেজ ও মোরাতা গোলের সহজ দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে বার্লিনের ফাইনালের ফলাফলটি অন্যরকম হতে পারতো। তবে বার্সেলোনা সেরা ও শ্রেষ্ঠ দল হিসেবেই শিরোপা জয় করেছে সেটা বার্সাবিরোধী ফুটবল সমর্থকরাও একবাক্যে মেনে নিবেন।



মন্তব্য চালু নেই