শিশুকে কি ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ানো ঠিক?

নবজাতক শিশুকে খাওয়ানোর পদ্ধতি নির্ধারণ করা প্রতিটি নারীর ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি ব্রেস্ট ফিডিং ও করাতে পারেন অথবা ফর্মুলা খাবারও খাওয়াতে পারেন। মা ও সন্তানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য খাওয়ানোর সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ব্রেস্ট ফিডিংকেই শিশুর জন্য সবচেয়ে উপকারি বলে মনে করেন। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় মা ও সন্তান উভয়েরই কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায় সঠিক পদ্ধতিটি আয়ত্তে নিতে। এছাড়াও নানা বিধ কারণে অনেক মা-ই বাধ্য হন ফিডারকে বেছে নিতে।

দ্যা আমেরিকান একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স এর পরামর্শ মতে, শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং তারপর বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিতে হবে। শিশুকে অন্তত এক বছর বা তার বেশি সময় বুকের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।

নিউ ইয়র্কের দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ রচস্টার স্কুল অফ মেডিসিন এর শিশুরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা এবং স্ত্রীরোগবিদ্যা এর অধ্যাপক ডা. রুথ লরেন্স বলেন, “শিশুকে খাওয়ানোর পদ্ধতি নির্ধারণের সময় একজন নারীর প্রথমেই চিন্তা করা উচিৎ কোন পদ্ধতিটি তার সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে এবং দ্বিতীয়ত তার নিজের জন্য কোন পদ্ধতিটি ভালো হবে”। তিনি আরো বলেন, “প্রত্যেক প্রজাতি তার বংশধরের জন্য দুধ উৎপন্ন করতে পারে, একমাত্র মানুষই তার সন্তানকে অন্য প্রজাতির দুধ খাওয়ায়, আর তাহল গরুর দুধ”। বিংশ শতাব্দীতে ব্রেস্ট ফিডিংকে সনাতন পদ্ধতি মনে করা হত এবং বোতল ফিডিংকে আধুনিক মনে করা হত। লরেন্স বলেন, “গত ২৫ বছরে আবার ব্রেস্ট ফিডিং এর দিকে ঝুঁকছে মানুষ”। যাই হোক, আজ তাহলে সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা বোতল ফিডিং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নেই চলুন।

বোতল ফিডিং এর সুবিধা :

১। দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া যায়

আপনি যদি আপনার সন্তানকে বোতলে করে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তাহলে এই দায়িত্বটা আপনার সঙ্গী বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে ভাগ করে নিতে পারেন।

২। শিশু কতটুকু খাচ্ছে তা নিরীক্ষণ করতে পারেন

বোতলে খাওয়ানোর ফলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার সন্তান কতটুকু দুধ পান করছে। অনেক মায়েরাই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন যে তার সন্তান ঠিক মত দুধ পান করছেনা।

৩। অনেকটা ফ্লেক্সিবল থাকতে পারেন

ব্রেস্ট ফিডিং এর ক্ষেত্রে শিশু কখন জাগছে বা ঘুমাছে তার উপর আপনাকে নির্ভর করতে হয় বিশেষ করে প্রথম কয়েক সপ্তাহ। আপনি বোতলে করে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত যদি নেন তাহলে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বা কাজে যোগদানের ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারেন। তখন দায়িত্বটা অন্য কাউকে বুঝিয়ে দিতে পারেন।

৪। বেশি ঘুমাতে পারেন

ফর্মুলা মিল্ক খুব সহজে হজম হয়না তাই বোতল ফিডিং করানো হয় যে শিশুদের তারা ব্রেস্ট ফিডিং করানো শিশুদের চেয়ে বেশি ঘুমায়।

৫। যেকোন স্থানে খাওয়ানো যায়

বেশিরভাগ নতুন মায়েরাই অন্যদের সামনে বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে অস্বস্তিবোধ করেন। বোতোলে করে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এই ধরণের কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়না।

বোতল ফিডিং এর অসুবিধা :

১। স্বাস্থ্য উপকারিতার অভাব

বুকের দুধের পরিবর্তে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর সবচেয়ে বড় অপকারিতা হচ্ছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য উপকারিতার অভাব। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

২। বন্ধনের ঘাটতি

ব্রেস্ট ফিডিং এর ক্ষেত্রে সন্তানের সাথে মায়ের বন্ধন তৈরি হয়, বোতোলে করে খাওয়ালে এই অনন্য সম্ভাবনাটি আপনি হারাতে পারেন।

৩। ফ্রি নয়

ফর্মুলা মিল্ক আপনাকে কিনে খাওয়াতে হয় এবং তৈরি করতে হয়। আর ব্রেস্ট মিল্ক প্রাকৃতিক ভাবে শিশুর জন্য পরিপূর্ণ পুষ্টি নিয়ে তৈরি হয় আপনার মাঝে যা যখনি শিশুর ক্ষুধা পায় তখনই খেতে পারে।

৪। খুব সহজে হজম হয়না

ফর্মুলা মিল্ক খুব সহজে হজম হয়না বলে শিশুর বিভিন্ন ধরণের পেটের সমস্যা হতে দেখা যায় যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া।

৫। অনেক সময় নেয়

ব্রেস্ট ফিডিং করালে বাচ্চার ক্ষুধা লাগলেই আপনি তাকে খাওয়াতে পারেন। কিন্তু বোতলে করে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য সময় লাগে এবং সব সময় ঘরে পর্যাপ্ত দুধ আছে কিনা তা স্মরণে রাখতে হয়।

ব্রেস্ট ফিডিং করালে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ কম হয়, ডেলিভারির ৬ সপ্তাহের মধ্যে জরায়ু তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়, অনেক বেশি ক্যালোরি খরচ হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়, ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যা সব মায়েদেরই মনে রাখা প্রয়োজন তাহল, শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বুকের দুধ খাওয়ানো। একজন আদর্শ মা শিশুর জন্য কোন টি বেশি উপকারি হবে সেটাই বেছে নিবেন।



মন্তব্য চালু নেই