শিশুদের যেন আমরা

সুখের বিষয় হলো, দেরিতে হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে উঠেছে। সমস্যাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। রায়ে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভারী ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। আদালতের এই নির্দেশ যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আইন প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ বিবেচনা করে আদালত সরকারকে এমন নির্দেশনাও দিয়েছেন যে আইন প্রণয়নের আগ পর্যন্ত শিশুদের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভারী ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করে সরকারি সার্কুলার আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জারি করতে হবে।
এসব সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আমাদের আশাবাদী করে, বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও কেন যেন বিষয়টি নিয়ে শঙ্কামুক্ত হতে পারছি না। মনে সন্দেহ জাগছে, বইয়ের বোঝা হালকা হলেই পড়ার বোঝা হালকা হবে তো! নাকি অন্য উপায়ে বইয়ের বোঝা ও পড়ার বোঝা দুটোই স্থানান্তরিত হবে শিশুদের বাসার পড়ার টেবিলে, তাদের মা-বাবার তত্ত্বাবধানে কিংবা কোচিং সেন্টার বা অন্য কোনো স্থানে। বইয়ের বোঝা হালকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি অযাচিত হোমওয়ার্কের বোঝাও হালকা হয়, তবে নিঃসন্দেহে ব্যাপারটি সুখকর। তবে বোঝা স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনাটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য প্রমাণিত হলে, তা হবে হিতে বিপরীত এবং অত্যন্ত পীড়াদায়ক।
BF&locale=en_US&sdk=joey” name=”f48cb47f73f6e” width=”1000px” height=”1000px” frameborder=”0″ scrolling=”no” allowfullscreen=”allowfullscreen” data-mce-fragment=”1″>

আইন প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে আইনের যথাযথভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে। শিশুদের অতিরিক্ত পড়ার বোঝা যেন বাসা, কোচিং সেন্টার বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত না হয়, সে বিষয়ে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে

ভারী ব্যাগের অর্থ কিন্তু শুধুই বইয়ের বোঝা নয়, বরং এ বোঝা দায়িত্বেরও। এই দায়িত্ব প্রত্যক্ষভাবে কাঁধে করে বয়ে না বেড়ানোই কেবল এ দায়িত্ব থেকে পরিত্রাণের ইঙ্গিত বহন করে না। তাই চক্ষুর গোচরে এবং চক্ষুর অগোচরে অতিরিক্ত দায়িত্বের দায়ভার থেকে কোমলমতি শিশুদের মুক্তি প্রদানে কতটুকু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে। শিশুরা হাঁটাচলা কিংবা নিজেদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল আয়ত্ত করার আগেই শিখছে দায়িত্ব বহন করার জটিল কৌশল। অতিরিক্ত ভারী বোঝা বহন করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আমরা সবাই জানি। অনেক মা-বাবাকেই দেখি এগিয়ে আসেন সন্তানের সাহায্যে। এক হাতে সন্তান আর অন্য হাতে সন্তানের ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে চলেন স্কুলমুখে। ইদানীং ট্রলিব্যাগের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। তাই বইয়ের বোঝা শারীরিকভাবে বহন করার জন্য হয়তো বিকল্প কিছু পথও রয়েছে। কিন্তু মানসিক চাপের বোঝা বহনের বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন। তাই অতিরিক্ত দায়িত্বের ভারে জর্জরিত শিশুর মনস্তাত্ত্বিক জগৎ লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যায়। সে বোঝা বইবে কে? হাইকোর্টের রায় কিংবা সরকারের প্রণীত সার্কুলার শিশুদের মনোজগতের ওপর প্রভাব সৃষ্টিকারী বোঝা অপসারণে সফল হবে তো!



মন্তব্য চালু নেই