শুধু বীজের জন্য করলা চাষ : সফল হাজারো কৃষক

মোঃ শামীম আখতার, উপজেলা প্রতিনিধি, মিঠাপুকুর (রংপুর) : মিঠাপুকুরের রাণীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের হায়দার আলী (৫৫)। ১০ একর জমিতে করলা চাষ করেছেন। তিনি সব্জী হিসেবে বাজারে বিক্রি না করে বীজ করেন সবটুকু ক্ষেতের করলা। শুধু হায়দার আলীই নয়- তাঁর ছেলে রবিউল ইসলাম, নাজমুল হকসহ নয়াপাড়া, পাইকান, আফজালপুর ও হাবিবপুর গ্রামের হাজারখানেক কৃষক বীজ উৎপাদনের জন্য করলা চাষ করেছেন। এসব এলাকায় উচ্চা, জংলী ও স্থানীয় জাত চাষাবাদ করা হয়। এরমধ্যে, বীজ উৎপাদন হচ্ছে স্থানীয় জাতের বেশি। অন্যান্য জাতের চেয়ে এই জাতের বীজে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি বলে জানান কৃষকেরা।

প্রায় ৪০ বছর আগেরকার কথা। নয়াপাড়া গ্রামের হায়দার আলীর পিতা আফাজ উদ্দিন প্রথম শুরু করেন করলা বীজ উৎপাদন। প্রথম সময়কার দিকে নিজের জমিতে চাষাবাদের জন্য এই বীজ সংগ্রহ করা হতো। ধিরে ধিরে প্রসার ঘটে এই বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার। আশপাশের এলাকা থেকে করলা চাষীরা বীজ ক্রয় করতে আসেন। শুরু হয় বানিজ্যিক ভিত্তিতে করলা বীজ সংগ্রহের কাজ। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় ওই গ্রামের অন্য চাষীরাও শুরু করেন করলা বীজ সংরক্ষনের। আফাজ উদ্দিন বেঁচে নেই- রয়েছে করলার বীজ উৎপাদনের কাজ।

সরেজমিনে রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া, আফজালপুর, হাবিবপুর ও লতিবপুর ইউনিয়নের পাইকান গ্রামের গিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেছে করলা বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে। ক্ষেতের পাশের ও রাস্তার ধারে লাল, সবুজ ও হলুদ রঙে রাঙিয়ে আছে এসব গ্রাম। একেকটি করলাতে মিশে আছে একেকজন চাষির স্বপ্ন।

নয়াপাড়া গ্রামের হায়দার আলী বলেন, আমার সবটুকু জমিতে করলা চাষ করেছি। করলা বীজ বিক্রি করে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ করা যায়। প্রথম দিকে আমার বাবা এই করলা বীজ উৎপাদন শুরু করেছিল। তাঁর দেখাদেখি আশপাশের গ্রামের কৃষকেরা করলা বীজ করা শুরু করে। তিনি আরও বলেন, অনেক স্থানে এখন করলা বীজ উৎপাদন করা হয়। কিন্তু, রাণীপুকুর এলাকার করলা বীজ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই বীজ দিয়ে অধিক উৎপাদন সম্ভব। তাই, প্রতিদিন পাইকাররা এখানে এসে করলার বীজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের নাজমুল হক বলেন, রাণীপুকুর ও লতিবপুর ইউনিয়নের এক হাজারেরও বেশি কৃষক শুধুমাত্র বীজ করার জন্য করলা চাষ করছেন। তিনি আরও বলেন, করলা বীজ উৎপাদন করে বাড়ীতে দালান ঘর তুলেছি। সন্তানেরা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে।

রাণীপুকুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, মিঠাপুকুর উপজেলার মধ্যে বেশি করলা চাষ হয় রাণীপুকুর এলাকায়। এই এলাকার করলা বীজ গুনে ও মানে অনন্য। তাই, দেশ-বিদেশের পাইকারেরা প্রতিদিন ভীড় জমান রাণীপুকুর এলাকায়। চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি করলা বীজ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা দরে। ক’মাস পেড়িয়ে গেলেই এই বীজ বিক্রি হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, মিঠাপুকুরের রাণীপুকুর ও লতিবপুর ইউনিয়নের ৭/৮ গ্রামের প্রায় ১ হাজার কৃষক করলা বীজ উৎপাদন করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিন এসব বীজের গুনগত মান অনেক উন্নত। উৎপাদন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসারকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই