শুভ জন্মাষ্টমী

শুভ জন্মাষ্টমী হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র জন্মতিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথিকে ভক্তরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।

জন্মাষ্টমীর দিনটি সরকারি ছুটির দিন। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করা হয়েছে। মন্দির ছাড়াও ঘরে ঘরে ভক্তরা উপবাস থেকে জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা ও পূজা করবেন।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, সরকার কাউকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেওয়া মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, জনগণ যার যার ধর্ম পালন করবে। কেউ যদি তার ধর্ম পালন করতে না চায়, সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অধিকার তার নেই।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেওয়া সহ্য করা হবে না এবং এর থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে করে খাটো না ভাবার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জাতির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আপনাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তাই আমরা চাই, আপনারা নিজস্ব ও মাতৃভূমির অধিকার নিয়ে এ দেশে বসবাস করবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। সকল ধর্মের মানুষ সমান ধর্মীয় অধিকার নিয়ে এ দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।

দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ গীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানব প্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার।

হিন্দু ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।

দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার আজ শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৯টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রী শ্রী গীতাযজ্ঞ এবং মন্দিরের পুকুরে পোনা অবমুক্তকরণ। এ ছাড়াও বিকেল ৪টায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলে অংশগ্রহণ। ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের মেয়র সাঈদ খোকন এবং আনিসুল হক। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মেজর জেনারেল (অব) সি আর দত্তও এ সময় উপস্থিত থাকবেন।

মিছিলটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোট-জাতীয় প্রেসক্লাব-পল্টন-শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার-গোলাপ শাহ্ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড-রায় সাহেব বাজার-বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। আলোচনা সভার উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার পংকজ শরণ।

এ দিকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি এবং ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল কুমার চ্যাটারজি ও সাধরণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল এক বিবৃতিতে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই