শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: ১৬ বছরেও হয়নি বিচার

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় করা মামলার সুরাহা ১৬ বছরেও হয়নি। এ মামলার বিচারে তেমন অগ্রগতি নেই। অনেকটাই থমকে আছে বিচারিক কার্যক্রম।

সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারা, আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির না করার কারণে দীর্ঘ ১৬ বছরেও মামলার বিচার শেষ করা যায়নি। আর গত ছয় বছরে মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগমের ট্রাইব্যুনালে মামলাটি বিচারাধীন। মামলাটিতে রোববার (৮ মে) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন কোনো সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় এবং আসামিদেরকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির না করায় বিচারক আগামী ১৫ মে পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য করেছেন। এভাবেই একের পর এক তারিখ পার হচ্ছে।

মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, সাক্ষী না আসায় মামলাটির বিচার শেষ করা যাচ্ছে না। সমন পাঠিয়ে, এমনকি ওয়ারেন্ট ইস্যু করেও সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাক্ষীদের ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া। তাদের বিরুদ্ধে সমন পাঠালেও সেটা কার্যকর হচ্ছে না।

মামলাটির অভিযোগপত্রে ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এদের মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য গোপালগঞ্জের আদালত গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে দায়ের করা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পরবর্তী সময়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আসার পর বিভিন্ন সময়ে ৬ বছরে মাত্র ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ করার কথা ছিল। ওই সমাবেশের প্যান্ডেল তৈরির সময়ে ২০ জুলাই ওই কলেজের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় করা মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান। মামলার অপর আসামিরা হলেন- মো. এহিবুল্লাহ, মুন্সি ইব্রাহিম, মো. মাহমুদ আজহার, মো. রাশেদ ড্রাইভার, মো. শাহ নেওয়াজ, মো. ইউসুফ, মো. লোকমান, শেখ মো. এনামুল ও মো. মিজানুর রহমান।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুফতি আব্দুল হান্নান আফগানিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানে তিনি তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। তিনি দেশে ফিরে হরকাতুল জেহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামক সংগঠনের সদস্য হন। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য গোপালগঞ্জের বিসিক এলাকায় অবৈধভাবে সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি সাবানের কারখানা স্থাপন করেন। সে কারখানায় সহযোগীদের নিয়োগ দেন। সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। সাবান তৈরির কাঁচামাল আনার আড়ালে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা বোমা তৈরির উপকরণ কারখানায় এনে রাখতেন। প্রধানমন্ত্রীর কোটালীপাড়ায় আসার কথা শুনে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা সাবান কারখানায় শক্তিশালী বোমা তৈরি করেন। বোমা তৈরির পর ২০০০ সালের ১৯ জুলাই সাবান কারখানার গাড়িতে করে রাতের আঁধারে নিয়ে এসে সমাবেশস্থলের পাশে পুঁতে রাখেন।



মন্তব্য চালু নেই