শ্বশুর বাড়ি না বাপের বাড়ি?

চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ফাইনালে আজ ভারতে সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সমর্থকদের মধ্যেও বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। তবে বাংলাদেশি মেয়ে যখন ভারতের পুত্রবধূ তখন উভয় সংকটেই পড়তে হয়। শ্বশুর বাড়ি না বাপের বাড়ি?

বাংলাদেশের খুলনার মেয়ে সৃজনী চট্টোপাধ্যায়। কলকাতায় বিয়ে হয়েছে তার। খুলনা থেকেই ভারতীয় পত্রিকা এই সময়কে তিনি জানিয়েছেন, ‘এমন অবস্থায় কোনো দিন পড়িনি৷ এখন থেকে ভবিষ্যতেও হয়তো এই সমস্যা হবে৷ কিন্তু এ বারের মতো নয়৷ কারণ, এটাই তো প্রথম৷ তাই, কী যে করব, বুঝতে পারছি না৷ ভারত-বাংলাদেশ ফাইনালে মুখোমুখি৷ এ নিয়েই যত সমস্যা আমার৷ রোববার (আজ) কার হয়ে গলা ফাটাব? ভারত না বাংলাদেশ।’

সৃজনী আরো বলেন, ‘এ বার ২১ ফেব্রুয়ারি, ভাষা দিবসে বিয়ে হয়েছে আমার৷ বর ভারতের৷ কলকাতার৷ কুন্ডু থেকে হলাম চট্টোপাধ্যায়৷ আর তার পরেই কি না এই ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ! হায়, কী যে করি! আমার বর অবশ্য ক্রিকেট নিয়ে তেমন হইচই করে না৷ আমি কাকে সমর্থন করব, সে নিয়েও ওর কোনো মতামত নেই৷ কিন্তু সেই ছোট্ট থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য চিত্কার করেছি৷এ বার?’

এজন্য নাকি তাকে কথাও শুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দুদিন ধরে প্রচুর ফোন পাচ্ছি৷ বন্ধুদের৷ সবাই মজা করে বলছে, কী রে, এ বার তুই কাকে সমর্থন করবি?’

সৃজনী আরো বলেন, ‘সত্যি কথাটাই বলে ফেলি, বাংলাদেশ জিতলে বেশি ভালো লাগবে৷ হারলে, দুঃখ বেশি পাব৷ বাংলাদেশে জন্ম৷ এখানেই বেড়ে ওঠা৷ আমার সব কিছুই তো এই দেশে৷ তাই, ক্রিকেটেও বাংলাদেশকেই সমর্থন করে এসেছি৷ করবও আজীবন৷ আবার ভারত যখন বাংলাদেশ বাদ দিয়ে অন্য কোনো দলের সঙ্গে খেলে, তখন আমি আবার ধোনিদের সমর্থন করতাম৷ তাই করব৷’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ খেললে অন্য ব্যাপার৷ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে যখন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ হল, তখনও সাকিবদের জয় চেয়েছি মনে প্রাণে৷এবার অবশ্য এতটা হৃদয় দিয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না৷ আসলে, আমি তো এখন ভারতেরও! তাই, সহজ করে বলি, এটাই মনে হয় সবচেয়ে নিরাপদ, ভালো খেলা দেখতে চাই৷ যেই জিতুক, যেই হারুক, খেলাটা যেন ভালো হয়৷

তিনি আরো জানান, ‘খুলনায় আমরা যেখানে থাকি, সেখানে কলকাতার মানুষরা যাতায়াত করেন৷ আর আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা তো আছেই৷ খেলা থাকলে, সবাই খুব মজা করে৷ এই ম্যাচটা নিয়েও দেখলাম, পাড়ায় পতাকা টাঙাচ্ছে৷ ছবি লাগানো হচ্ছে৷ এই ফাইনাল নিয়ে এখানে ব্যাপক উত্সাহ৷ গত বিশ্বকাপের খেলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়৷ এ বার নিজের দেশে খেলা৷ সবাই দারুণ উত্তেজিত৷’

নিজের ভালোলাগা সম্পর্কে সৃজনী আরো বলেন, এ সবের মধ্যেই আমি চাইছি, যুবরাজ সিং যেন রান পায়৷ ও যেন দারুণ খেলে৷ আসলে, আমি ওর খুব ভক্ত৷ বিরাট কোহলি আছে৷ ধোনি আছে৷ রোহিত শর্মাও দারুণ৷ কিন্তু যুবরাজ আমার কাছে সেরা৷ ওর খেলা, ওর ক্যান্সার জয় করে ফিরে আসা, আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে৷ যুবরাজ এখানে অনেকের কাছেই প্রেরণা৷ লড়াইয়ের নায়ক৷

বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাকিবকে খুব ভালো লাগে৷ মাশরফিও ভালো৷ এখন আবার সৌম্য সরকার বলে বাচ্চা ছেলেটাকে বেশ ভালো লাগছে৷

এই সময়কে নিজের কথাগুলো বলে তিনি আরো জানান, ‘খুলনায় বসে কথা বললেও ফাইনাল ম্যাচটা কলকাতায় বসেই দেখতে হবে৷ রোববার বিকেলে ম্যাচ শুরুর আগে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ নাকি ‘বাপের বাড়ি’, কী হবে কে জানে!



মন্তব্য চালু নেই