শ্রমিকের বেতন দিতে হাজার কোটি টাকার জমি বিক্রি

এক হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) গুলশানস্থ সাড়ে ১০ বিঘা জমি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ টাকা পাটকল শ্রমকিদের বেতন, পাটকলশিল্পের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে।

রোববার দুপুর সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মির্জা আজম বলেন, ‘প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে গুলশানে বিজিএমসির সাড়ে ১০ বিঘা জমি বিক্রি করা হয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে। এই জায়গায় বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ করা হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে খেলার মাঠের জন্য জমিটি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১০ বিঘা জমি বিক্রি বাবদ আমরা এক হাজার কোটি টাকা পাচ্ছি। এ টাকা দিয়েই আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বন্ধ পাটকল চালু ও এ খাতের উন্নয়ন করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জমিটি খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এই জমিতে কোনো প্রকার আয়বর্ধক প্রকল্প চালু না করে সেটি খেলাধুলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এই এলাকায় ব্যবসায়িক কোনো প্রকল্প হলে তাতে পরিবেশ আরো বিষিয়ে উঠবে, যানজট বাড়বে। সবকিছু চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী আমাদের এক হাজার কোটি টাকার জমি গুলশানের সাধারণ মানুষের জন্য বিনোদনের স্পট তথা খেলাধুলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল বিজেএমসির সম্পত্তি বিক্রি না করে তাতে আয়বর্ধক প্রকল্প চালু করতে। নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এই জমিতে একটি ফাইভ স্টার হোটেল ও আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গুলশানের মানুষের কথা চিন্তা করেই জমিটি খেলাধুলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সঙ্গে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে এক হাজার টাকায় বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছেন।’

গুলশানে বিজিএমসির সাড়ে দশ বিঘা জমিতে বর্তমানে ইটালির অ্যাম্বাসি ও বিজিএমসি চেয়ারম্যানের বাড়ি রয়েছে। ইটালি রাষ্ট্রদূতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের অফিস সহসা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে পারবে। ১৫ দিনের মধ্যে দখল হস্তান্তর শেষ করা গেলে ইটালি রাষ্ট্রদূতের অফিসসহ যাবতীয় স্থাপনা ভেঙে খেলার মাঠ তৈরি করবে পূর্ত মন্ত্রণালয়। বিনিময়ে এক হাজার কোটি টাকা পাবে জমির মালিক বিজিএমসি।’

সরকারি পাটকলের লোকসান কমে আসবে বলেও আশাবাদী প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন যেভাবে লোকসান দেখানো হয়, তা মূলত লোকসান নয়, বরং চুরি ও দুর্নীতি। আমরা এসব লোকসানের নামে চুরির বিষয়টি উদঘাটন করেছি। এ জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করি পাটকলে লোকসান কমে আসবে।’ বন্ধ পাটকলগুলো চালু করা হবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে এপ্রিলের শুরুর দিকে পাঁচ দফা দাবিতে শ্রমিকদের টানা আন্দোলনের মুখে অচল হয়ে পড়ে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাত পাটকলে টানা ছয় দিনের শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে কারখানাগুলোতে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ঘাটতি হয়।

তাই গত এপ্রিল ১১ আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ ও পাট কেনার জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।



মন্তব্য চালু নেই