সংর্ঘষ-সহিংসতায় সম্পন্ন ভোট, চলছে গণনা

সহিংসতা, ভোট কারচুপি, ভোট বর্জন ও নানা অনিমমের মধ্যে দিয়ে ২য় ধাপের ৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে চলছে ভোট গণনা। দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃণমূলের ইউপি নির্বাচন। আজ ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে যশোর, জামালপুর ও কেরাণীগঞ্জসহ আরো বেশ কিছু জায়গায় সহিংসতার ফলে এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া কুষ্টিয়া, সীতাকুণ্ডু, কুমিল্লাসহ কিছু এলাকায় অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গোলযোগ ও অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল থেকে বিভাগওয়ারি ইউপি’র ভোটের খোঁজখবর নিয়েছেন চার নির্বাচন কমিশনার।

সার্বিক ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আবু হাফিজ জানান, আমরা মনিটরিং করছি। গণমাধ্যম, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভালোভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রথম ধাপে ২২ মার্চের নির্বাচনে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ আসে। এবারও তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না ইসি। এ লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আবু হাফিজ বলেন, ‘যেখানে কোনো অনিয়মের তথ্য আসছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখন ভালোভাবে ভোট হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট ছিল বলে ইউপি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তারা উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরেছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যেতে থাকে ভোটের চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাড়তে থাকে সহিংসতা। কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির পাশাপাশি একের পর এক চলতে থাকে কেন্দ্র দখল। কোথাও কোথাও ভোটাররা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে ব্যর্থ মনোরথে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে। ভোটারদের অভিযোগ, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ব্যালট পেপারে অবাধে সিল মারতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে এসে নির্বাচনে অনিয়ম সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)’র কাছে।

২য় ধাপে শুরু হওয়া ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি, জালভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে জাতীয় পার্টিও। দলটির পক্ষে লিখিত অভিযোগে কুমিল্লার সব ক’টি ইউপির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২য় ধাপে ৬৮৭ ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় বাতিল ও পিছিয়ে গেছে ৪৮ ইউপির ভোট। ফলে ৩১ মার্চ ৬৩৯ ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, ২য় ধাপে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে মোট ৩৩ হাজার ২৯০ জন প্রার্থী রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩ হাজার ১১৪ জন। এরমধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৫৫৯ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে এক হাজার ৫৫৫ জন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৬ হাজার ৭৯৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৩ হাজার ৩৭৭ জন। এসব ইউপিতে মোট ভোটার ১ কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৩৩৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ২০৫টি। ভোটকক্ষ ২৩ হাজার ২১টি। দ্বিতীয় ধাপের ভোটে মোট ১ লাখ ২ হাজার ২৬৮ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার ৬ হাজার ২০৫ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৩২ হাজার ২১ জন ও পোলিং অফিসার ছিলেন ৬৪ হাজার ৪২ জন।



মন্তব্য চালু নেই