সংলাপ হলেও নির্বাচন কমিশন হবে আগের পদ্ধতিতে

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ণের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাই যতই সংলাপ হোক, রাষ্ট্রপতির কাছে যতই দাবি উঠুক, আসন্ন নির্বাচন কমিশন (ইসি) হতে যাচ্ছে আগের পদ্ধতি অর্থাৎ সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমেই। নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা ও সংলাপে অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এমন আভাসই দিয়েছেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

এসব নেতা জানান, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন আইন প্রণয়নের দাবিটি বেশ জোরালোভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে প্রায় প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপতি নিজেও তাদের কথা মন দিয়ে শুনছেন। কিন্তু, বর্তমান ইসির মেয়াদ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাওয়ায় যা করার দ্রুত করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। আর নতুন যে কোনও আইন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই আগের মতোই সার্চ কমিটি গঠন করেই এবারের নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। তবে এর পরের নির্বাচন কমিশন নিয়ে যাতে আর তেমন কথা না ওঠে সেজন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করে এর আগের নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার অভিমত, এর পরের নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সুবিধামতো কোনও সময়ে সংসদে এ সংক্রান্ত আইন পাশ করে নেওয়া হবে। তারা জানান, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুরু হওয়া সংলাপ শেষই হবে মধ্য জানুয়ারিতে। যতই তাড়াহুড়ো করা হোক ৮ ফেব্রুয়ারির আগে আইন প্রণয়ন করা ও ইসি নিয়োগ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

নতুন কমিশন গঠন কোনও প্রক্রিয়ায় হবে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমি যতদূর বুঝি আগের নিয়মেই এবারের কমিশন গঠন হবে। আইন করে কমিশন গঠন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপার, সময়ের ব্যাপার। সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তাই হবে।’

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ। তিন দফায় বিএনপি জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে ইতোমধ্যেই সংলাপ শেষ করেছেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি এসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শ পেয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি ছাড়া বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতিকে। ‘সার্চ কমিটি’র প্রস্তাবও এসেছে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে।
আগামী ৭ জানুয়ারি বিকল্পধারা ও জাসদের (রব) সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফার এ আলোচনা শেষ হবে। চতুর্থ দফায় আওয়ামী লীগসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়েও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। তবে এবারই আইন প্রণয়ন করে কমিশন গঠন করা হলে তড়িঘড়ি হয়ে যাবে। এবার আগের নিয়মেই কমিশন গঠনের ব্যাপারে পরামর্শ থাকবে ক্ষমতাসীনদের।

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও আগ্রহ আছে। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারির আগে কমিশন গঠন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ায় এবার আগের নিয়মে কমিশন গঠনের জন্যে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার মনে হয় একটি আইন প্রণয়নের জন্যে যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপার আছে। কোনও কিছু তাড়াহুড়োর ব্যাপার নয়। যেহেতু সময় অল্প, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কমিশন নিয়োগ দিতে হবে, তাই এবার আইন প্রণয়ন করে নাও হতে পারে।’

রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির ওপরেই এ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আসবো। আওয়ামী লীগ মনে করে রাষ্ট্রপতি প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ— তিনিই এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আওয়ামী লীগের তার প্রতি আস্থা আছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আইন প্রণয়ন করার কথা বললেই হয়ে যাবে না। এটি একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। এজন্যে সময় লাগবে। খসড়া হবে, সংশোধন হবে। সংসদে যাবে। উত্থাপন হবে, তারপর কমিটিতে যাবে—এসব নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। আইন করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও দুই/তিন মাস লেগে যাবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংলাপে অংশ নেওয়া জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার বলেন, ‘আমরা আইন প্রণয়নের কথা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি। রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলে এবারও সম্ভব।’ তবে তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমেও এবারের কমিশন গঠন হতে পারে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমরা আইনের কথা বলেছি রাষ্ট্রপতিকে। তবে এবার সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হবে বলে মনে হয়।’



মন্তব্য চালু নেই