কর কমলো চার খাতে

সংসদে অর্থবিল পাস

কর কমলো চার খাতে
জাতীয় সংসদে সোমবার পাস হওয়া অর্থবিলে তৈরি পোশাক খাতসহ চারটি খাতে কর কমেছে। এ খাতগুলোতে কর কমানোর প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের রপ্তানিতে উৎসে কর, ক্যানসারের ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদারি ক্ষেত্রে সব ধরনের কর, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও প্রকৌশল কলেজের মূসক, পোল্ট্রি ও মাছ চাষের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন। এই চার খাতের করই কমেছে।

অর্থবিল-২০১৫ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর আগে জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ওপর তার সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে প্রস্তাবিত বাজেট থেকে বেশ কয়েকটি খাতে শুল্ক ও কর কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে মৎস্য ও পোল্ট্রি খাতে চাষের সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা আয়কর মুক্ত হবে,  পোশাকখাতে উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করা হচ্ছে, মোবাইল ফোনে কথার ওপর সারচার্জ পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা হচ্ছে, ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর শুল্ক থাকছে না। বই আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ক্যানসার রোগীদের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। মোটরসাইকেল ও টিভি সরঞ্জমাদি আমদানির ওপর কর বাড়ছে, নতুন ব্যাংকের ওপর  থেকে করপোরেট কর কমছে, ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কর কমছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ওপর অর্থমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :

মাননীয় স্পিকার
বাজেট পেশের পর বরাবরের মত এবারও সংসদে ও সংসদের বাইরে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা এবং কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন বাজেটের বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বক্তব্য বিবৃতি দেয়া হয়েছে, বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ লেখা হয়েছে। বাজেটে জাতির আশা আকাংখার প্রতিফলন হয়েছে, আশা জাগানিয়া এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ সমৃদ্ধির সোপান বয়ে উন্নত সমাজ ও দেশ গড়ার পথে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে মর্মে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে বাজেটকে উচ্চাভিলাষী, বাস্তবায়ন সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশসহ এর কিছু কিছু দিক নিয়ে অনেকে সমালোচনামূলক বক্তৃতা, বিবৃতি ও মতামত তুলে ধরেছেন। আমি আগেও বলেছি- গঠন মূলক সমালোচনা আমাদের কর্মকৌশলকে নির্ভুল করতে সহায়তা করে, সম্ভব করে গঠনমূলক বাস্তবসম্মত, সময়ানুগ বাজেট প্রণয়নে এবং বাস্তবায়নে। তাই, যাদের আলোচনা/ সমালোচনা আমাদের বাজেট ভাবনাকে ক্রমাগত ঋদ্ধ করে চলেছে তাদের সকলের প্রতি এই সুযোগে আমি আপনার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চাই। একই সাথে, সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাজেটের এই সমাপনী অধিবেশনে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের প্রস্তাবনা সম্পর্কে পক্ষে-বিপক্ষে যে সকল বক্তব্য উঠে এসেছে সে বিষয়ে আমাদের সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে চাই।

অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বিষয়ক বক্তব্য

মাননীয় স্পিকার
২। আপনি জানেন, বাজেটের আলোচনায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রতি বছরই বেশ কথা হয়।  এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ইতোমধ্যে বিবিএস সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে। এই হিসাব অনুসারে অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৬.৫১ শতাংশে। এই অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাজনৈতিক সহিংসতায় জনগণের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি আর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয়েছে। তা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই উচ্চহার আমাদের একটি বার্তাই দেয়। সেটি হলো, আমাদের সরকারের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের সাথে জনগণের গভীর একাত্মতা। এটি ক্রমান্বয়ে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে সুসংহত করে তুলছে। ধীরে ধীরে এমন এক শক্ত ভিত তৈরি হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় যেকোন সংকটে দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিবে। সামনের দিনগুলোতে জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি দ্রুততর করতে চাই। এ লক্ষ্যে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ৭.০ শতাংশে নির্ধারণ করেছি। বলা বাহুল্য, আমাদের নির্ধারিত এই লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি বাস্তব সম্মত।

৩। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো যেমন চিহ্নিত করেছি তেমনি এ থেকে উত্তরণের বিস্তারিত রূপরেখাও তুলে ধরেছি প্রস্তাবিত বাজেটে। আমরা সরকারি বিনিয়োগ বাড়াবো, একইসাথে সরকারি বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের গতি তরান্বিত করতে এবং এর গুণগত মান নিশ্চিত করতেও আমরা নিয়েছি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। পাশাপাশি, পাইপ লাইনে থাকা বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একইসাথে, প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি বেসরকারি বিনিয়োগের দিকে। লক্ষ্য করার বিষয় যে, ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চলতি মূল্যে জিডিপি’র আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। জিডিপি’র আকার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপি’র ২১.০ থেকে ২২.০ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকলেও প্রকৃত অর্থে বেসরকারি বিনিয়োগও এসময়ে বেড়েছে বেশ অনেকখানি (১.৯ গুণ)। তবে, প্রবৃদ্ধির কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে আমরা মধ্যমেয়াদে (২০১৭-১৮) জিডিপি’র ২৪.০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা রাখার জায়গাটি হলো বেসরকারি খাতের বিকাশ উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। এ বিষয়ে আমাদের সরকারের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি নেই। আমরা উপযোগ সেবাসমূহ যেমন বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সহজলভ্য করে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি;  যোগাযোগ অবকাঠামোতেও ইতোমধ্যে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় বহুল আকাঙ্খিত পদ্মাসেতু প্রকল্পসহ এই খাতে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এছাড়া, ঋণের সুদের হারও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তদুপরি, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তথ্য-প্রযুক্তি সেবার অর্থবহ সম্প্রসারণ, ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নসহ সুশাসন প্রতিষ্ঠার নানা উদ্যোগ বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। আমার বিশ্বাস, আমাদের সরকারের সহায়ক ভূমিকা এবং ব্যক্তি উদ্যোগের স্বতস্ফূর্ত বিকাশ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রয়োজনীয় বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করবে। এছাড়া, শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়নে আমাদের নেয়া পদক্ষেপসমূহ এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়নে

উৎপাদনশীলতা বাড়ছে।

মাননীয় স্পিকার
৪। কৃষি খাতে অব্যাহত উন্নয়ন, বিকাশমান গ্রামীণ অর্থনীতি, রেমিট্যান্স প্রবাহ কিংবা নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের সুবাদে মধ্যবৃত্ত শ্রেণির বর্ধিত আয় সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ চহিদার গতি তরান্বিত হবে যা, দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করবে। একইসাথে থাকছে ভারসাম্যপূর্ণ বহিঃখাত। বাণিজ্য সহযোগী দেশসমূহের অর্থনৈতিক দৃশ্যকল্প আশাব্যঞ্জক। দেশে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণেও ইতোমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে। ফলে, রপ্তানি খাতে চলতি অর্থবছরের সমস্যাসমূহ আগামী অর্থবছরে থাকছে না বলে আশা করা যায়। আমদানির প্রবৃদ্ধিও ভালো। রেমিট্যান্স প্রবাহে আছে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা ছাড়িয়েছে, যা দিয়ে ৭ মাসেরও অধিক সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি জিএনআই বাড়াতে শ্রম, সেবা ও পণ্যের বহি:বাজার সম্প্রসারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সর্বোপরি, অব্যাহত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সুবিধাতো রয়েছেই।

৫। একটি বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আপনি জানেন, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বাধাকেই বড় করে দেখেছে। এটি হলো রাজনৈতিক সুস্থিতি। দেশের আপামর জনসাধারণের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সুবিবেচনা চলমান রাজনৈতিক সুস্থিতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে, এ প্রত্যাশা করা অমূলক হবে না বলেই আমি মনে করি। কাজেই ৭.০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন বর্তমান বাংলাদেশের জন্য কোন অসম্ভব কল্পনা কিংবা অলীক স্বপ্ন নয়।

উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা বনাম বাস্তবায়ন সক্ষমতা বিষয়ক

মাননীয় স্পিকার
৬। সার্বিকভাবে বাজেটকে কেউ কেউ উচ্চাভিলাষী হিসেবে অভিহিত করেছেন। আপনি লক্ষ্য করবেন আমাদের বিগত বছরের বাজেটের পরও একই সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা জানেন আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে গড়ে প্রায় ৬.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৯-১৪ মেয়াদে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০১৯-২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি। এ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বাজেটের আকার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে হবে। কাজেই আমাদের বাজেট কিছুটা উচ্চাভিলাষী হবে সেটাই স্বাভাবিক। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল জিডিপি`র ১৪.৩ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার আমরা ধরেছি জিডিপি`র ১৭.২ শতাংশ।

৭। আপনারা দেখেছেন বিগত অর্থবছরসমূহে আমরা কত দক্ষতার সাথে বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের গড় সক্ষমতা ৯১ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের অর্জন এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেটের প্রস্তাব করেছি। আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা আছে বিধায় ২০০৮-০৯ সালে যে বাজেট ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার তাকে আমরা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পেরেছি। বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা সে নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রকৃত অর্জন কম। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই যে, গত দু’তিন বছরে বিভিন্ন সময়কালে অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে বাজেটের লক্ষ্যানুযায়ী রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় সম্ভব হয়নি, যা বাজেটের আর্থিক কাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ করে না। অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রভাব প্রমিত প্রক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় বিবেচনা করা দূরহ। আমরা জানি,  যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় ছিল তখন বাজেটের লক্ষ্যানুযায়ী রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা এবং প্রকৃত আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। অনুরূপভাবে ২০১১-১২ অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭ শতাংশই অর্জিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্বাভাবিক বছরগুলোতে আর্থিক কাঠামোর তেমন কোন দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়নি। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির অনুমান, Tax buoyancy ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাজেটের আর্থিক কাঠামো প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এবছরের বাজেটে কাঠামো প্রণয়নের ক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করা হয়েছে। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির অনুমান (Assumption), কর ব্যবস্থার চলমান সংস্কার, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনবল বৃদ্ধি ও কর্মপদ্ধতিগত সংস্কার, Tax buoyancy, প্রত্যাশিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিলে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত।

৮। বাজেট বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট অন্য যে বিষয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে তা হলো এডিপি`র আকার ও এর বাস্তবায়ন সক্ষমতা, বিশেষ করে এডিপি-তে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার বিষয়ে। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, আমরা এডিপি`র বাস্তবায়ন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে এডিপি`র আকার ছিল ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই তা আগামী অর্থবছরে ১ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। আমার বাজেট বক্তৃতায় আমি এডিপি বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের প্রয়াসের প্রতি আলোকপাত করেছি। যার মধ্যে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি কর্তৃক Fast Track প্রকল্পসমূহের মনিটরিং, বৃহৎ দশটি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নে বিশেষ নজরদারির জন্য টাস্কফোর্স গঠন, ধীরগতিসম্পন্ন ৫০টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের পুল গঠনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অত্যধিক ব্যয়ের প্রবণতা হ্রাস করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ জোরদার করা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনার জন্য সচিব পর্যায়ে একটি স্থায়ী কমিটি আমরা গঠনের উদ্যোগ নেব। সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আর্থিক ক্ষমতা অর্পন ও পুনঃঅর্পন সংক্রান্ত আদেশ সংশোধন করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়সমূহ এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিকট অধিক ক্ষমতা অর্পন করা হয়েছে যা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকে সহজতর করবে। এ প্রেক্ষিতে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই যে, এসব উদ্যোগের ফলে আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা আরো বাড়বে এবং আমরা প্রস্তাবিত এডিপি অবশ্যই সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।

বাজেট ঘাটতি নিয়ে অহেতুক উদ্বেগ

মাননীয় স্পিকার
৯। বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। বলা হয়েছে বাজেট ঘাটতির আকার অনেক বড়, ঘাটতি অর্থ সংস্থানে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ গ্রহণ করলে তাতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ইত্যাদি। আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট ঘাটতি জিডিপি`র ৫ শতাংশ। সরকারের প্রাজ্ঞ রাজস্বনীতি অনুসরণের ফলে বাজেট ঘাটতি কখনই গত ছয় বছরে জিডিপি`র ৫ শতাংশ অতিক্রম করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০০৯-১০ হতে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি ছিল গড়ে জিডিপি`র ৩.৬ শতাংশ। বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় পরিমিত। ২০১৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত (৭.২), শ্রীলংকা (৫.৯) ও মালদ্বীপ (১০.৬) বাজেটে ঘাটতির তুলনায় আমাদের বাজেট ঘাটতি বেশ কম। ঘাটতি অর্থায়নের মাধ্যমে প্রাক্কলিত বাজেট বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সার্বিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক অনেক কর্মকান্ড (ভাতা, ভর্তুকি, প্রণোদনা) সংকোচনের প্রয়োজন হতো যা বরং জনগণের কল্যাণই হ্রাস করতো।

১০। আমরা ব্যক্তিখাত চালিত উন্নয়ন নীতি অনুসরণ করে আসছি। এ বছরে এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্দ্বিধায় বলা যায় সরকারের ঋণ গ্রহণ ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর কোন চাপ সৃষ্টি করেনি এবং ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ঋণ প্রবাহেও এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় স্পীকার আপনার মাধ্যমে আমি সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আগামী অর্থবছরে আর্থিক খাতে তারল্য, বৈদেশিক উৎস হতে অর্থ ব্যবহার বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ইত্যাদি কারণে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারের ঋণ গ্রহণ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে এবং ব্যক্তিখাতকে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার

মাননীয় স্পিকার
১১। সঞ্চয় পত্রের সুদের হার হ্রাসের সমালোচনা করে অনেক মাননীয় সংসদ সদস্য তাঁদের বক্তব্য প্রদান করেছেন। অন্যদিকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ অনেকে এর প্রশংসা করে সুদের হার হ্রাস ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতের সুদের হার আরো হ্রাসের দাবী জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মেয়াদি আমানতসহ অন্যান্য ধরনের আমানতের সুদের হার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু সঞ্চয় পত্রের সুদের হার এসব আমানতের সুদের হারের তুলনায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেশী থাকায় সঞ্চয় পত্রের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয় পত্র হতে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বছরের প্রথম ৭ মাসে নিট বিক্রি এ লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। প্রকৃত পক্ষে এ খাত হতে নিট সংগ্রহ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সঞ্চয় পত্রের সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতকে আমানতের সুদের হার বেশী রাখতে হয়েছিল, যার ফলে ঋণের সুদের হারও কমানো সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রেক্ষিতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সঞ্চয় পত্রের সুদের হার কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। তবে, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং Senior Citizen যারা সঞ্চয় পত্রে বিনিয়োগলব্ধ আয়ের ওপর বেশ নির্ভরশীল তাঁদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সুদের হার বাজারের অন্যান্য যেসব deposits রয়েছে সেসবের সুদের হার থেকে খানিকটা বেশি রাখা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাজারের সুদের হারের সঙ্গে অসমঞ্জস কোন মতেই হতে পারে না।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ

মাননীয় স্পিকার
১২। বাজেট আলোচনায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনা আমরা শুনেছি। বলা হয়েছে শিক্ষা খাতে সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না, বরাদ্দও বাড়ছে না, স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ মোট বাজেটে শতকরা হারে কমেছে। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই যে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতসহ সার্বিক মানব সম্পদ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উভয় খাতের বরাদ্দ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সার্বিক শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২২৬ কোটি টাকা যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৬১৭ কোটি টাকায়, অর্থাৎ বৃদ্ধির পরিমাণ ২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। যে কোন অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা হলেই মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ সচরাচর কমে যায়, আমরা গত ছয় বছর এই সম্ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি এবং আগামীতে এই খাতে কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যেই বাজেটের অগ্রাধিকার নির্ধারণে পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। এই পরিবর্তন আগামীতে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিতভাবেই বৃদ্ধি করবে। বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ৩য় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ৫ম। আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছি যে, ১ জুলাই, ২০১৫ থেকে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করা হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য অর্থ অর্থ বিভাগের বাজেটে সংস্থান রাখা আছে। পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হলে এ দু`মন্ত্রণালয়ের পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য বেতন খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষা খাতে আগামী অর্থবছরে সরকারের কর্মপরিকল্পনা আমি আমার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছি। এক্ষেত্রে আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষার সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি বেশি। জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য আমরা কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার করতে চাই। আমরা আরও জোর দিচ্ছি শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উচ্চ শিক্ষার প্রসারে। সার্বিকভাবে বলা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ পূর্বের যেকোন সময়ে তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। জিডিপি’র অনুপাত অনুযায়ী এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি আমার আগামী দিনের দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার।

১৩। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের বিষয়ে আমি বলতে চাই যে, এ খাতের বরাদ্দ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। পে-স্কেল বাস্তবায়নের ফলে প্রকৃত প্রস্তাবে এ খাতের বরাদ্দ আরো অনেক বাড়বে। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাস্তবায়ন দক্ষতা, বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে এ খাতে আগামীতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তবে, এ খাতে সরকারের সাফল্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিশু মৃত্যু হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য, কমিউনিটি ক্লিনিক ও টেলিমেডিসিন সেবার সম্প্রসারণ। এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে লিভার সংক্রান্ত জটিল রোগের চিকিৎসার ব্যয় হ্রাসে মূসক অব্যাহতির কথা আমরা এ বাজেটে প্রস্তাব করেছি। একইসাথে, এ খাতে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি/মওকুফ সুবিধা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা হয়েছে।

দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক

মাননীয় স্পিকার
১৪। দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারের কি পরিকল্পনা রয়েছে তা অনেকে জানতে চেয়েছেন। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের একটি পূর্বশর্ত হলো Human Capital Formation। বাংলাদেশের মত জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা পেতে হলে দক্ষতা উন্নয়ন ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে, তবে এর সমন্বয় সাধন এবং কার্যক্রমগুলোকে এক ছাতার নিচে আনয়নের জন্য আমরা একটি National Skills Development Authority (NSDA) গঠন করতে যাচ্ছি। তাছাড়া দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন অর্থের যোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে National Human Resources Development Fund (NHRDF) গঠনের কথা আমি আমার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছি। এর ফলে দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তহবিলের যোগান নিশ্চিত হবে। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে আরো অধিক কর্মসংস্থানের জন্য আমরা অর্থ বিভাগের অধীনে Skills for Employment Investment Program এর আওতায় তিন ধাপে মোট ১৫ লক্ষ লোকের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিমুখী দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। যার মধ্যে ৭০ শতাংশ কর্মীকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরির নিশ্চয়তা দেয়া হবে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও দক্ষতা বৃদ্ধির এ জাতীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম রয়েছে। উন্নত মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ১৫টি শিল্পে ৩০টি Center of Excellence (CoE) তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে পরীক্ষামূলকভাবে একটি Center of Excellence (CoE) তৈরি করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া শিল্প খাতের বিনিয়োগে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা (কর অবকাশ, এলাকাভিত্তিক কর রেয়াত), অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

১৫। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আমি আমার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছি। ইতোমধ্যে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি পুনরায় শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ায় ব্যক্তিখাতে জনশক্তি রপ্তানি পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। ফলে, শুধু মালয়েশিয়াতেই আগামী বছরে ৫ লক্ষ কর্মী পাঠাতে সক্ষম হব।

কৃষি খাত

মাননীয় স্পিকার
১৬। সংসদে বাজেট আলোচনায় কৃষিতে বরাবরের মত সার, বীজ, সেচসহ কৃষি উপকরণে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া, কৃষি গবেষণার মাধ্যমে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য দ্রুত প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। কৃষিবীমা ও কৃষি আদালত চালু করার বিষয়েও প্রস্তাব এসেছে। এ প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, কৃষি খাতকে দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই আমরা অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রেখে আসছি। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি আমরা। এর একটি প্রধান অংশ হলো সার, বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহৃত বিদ্যুতের রেয়াত সুবিধা এবং ইক্ষু চাষীদের প্রণোদনা প্রদান যা গত বছরসমূহের ন্যায় অব্যাহত রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে রাসায়নিক সারের মূল্য হ্রাস পেলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উন্নত বীজ উৎপাদন ও চাষীদের মাঝে বিতরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং কৃষি পুনর্বাসন মঞ্জুরি হিসেবে মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া উচ্চফলনশীল শস্যের জাত উদ্ভাবনসহ সার্বিক কৃষি গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নেও এ বছরের বাজেটে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। এক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা আমি আমার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছি। আমাদের সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। আমি নিশ্চিত এ অর্জন আমরা আগামীতেও ধরে রাখতে সক্ষম হব। আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে গো-সম্পদের উন্নয়নে, ব্যাপকভাবে দুধ সরবরাহ না বাড়াতে পারলে অপুষ্টি দূর করা বেশ দুরুহ হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত

মাননীয় স্পিকার
১৭। এবার আমি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সম্পর্কে যেসব আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সবসময়ই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে এসেছে। আগামী অর্থবছরেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে এ খাতকে। ধারাবাহিকভাবে অগ্রাধিকার বিবেচনায় বরাদ্দ প্রদান তারই প্রতিচ্ছবি। আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। মূলত: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যা সমাধানে আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম বদ্ধপরিকর। আমাদের সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বিগত ছয় বছরে ৪,৯৪২ মেগাওয়াট থেকে ১৩,৬৭৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ফলে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় লোডশেডিং যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল সেখানে চাহিদা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও লোডশেডিং এখন নেই বললেই চলে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০ অনুযায়ী, ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

১৮। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দীর্ঘ মেয়াদি মহাপরিকল্পনায় কয়লাকে মূল জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ভারতের NTPC ও বাংলাদেশের BPDB এর যৌথ উদ্যোগে রামপালে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য Bangladesh-India Friendship Power Company গঠন করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১,৪২৬ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য JICA এর সাথে Loan Agreement স্বাক্ষর করা হয়েছে। এছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আর্থিক সহায়তায় মহেশখালীতে ১২০০ মেগাওয়াট করে ৪৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪টি এবং পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ০১টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বৈচিত্রায়নে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ হতে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির কাজ চলমান রেখেছে। ক্রমান্বয়ে দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ গ্যাস/কয়লাভিত্তিক সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন জোরদার হবে।

১৯। বাজেট আলোচনায় বিদ্যুৎ সংক্রান্ত আরেকটি বিষয় এসেছে, সেটা হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ। এ বিষয়ে আমি সকলকে অবহিত করতে চাই যে, সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য বিগত পাঁচ বছরে ১,৫৫৫ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয়েছে। ফলে মোট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ৯,৫৫৫ সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ১১টি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সঞ্চালন অবকাঠামো সম্প্রসারণের কাজ পূর্ণদ্যোমে চলমান রয়েছে। এদিকে ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষ ৩১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১ কোটি ৬২ লক্ষ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আমার বাজেট বক্তৃতায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ

মাননীয় স্পিকার
২০। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নতুন এক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, সরকারি সকল কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম লক্ষ্য। সরকারের সদিচ্ছার কারণেই এ খাতে আমরা প্রত্যাশার চাইতেও অধিক সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আজ দেশে টেলিডেনসিটি ৭৯.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, ৪.৪৬ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন টেলিযোগাযোগ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ২০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হলে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ২০০ জিবিপিএস থেকে ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস এ উন্নীত হবে। এতে থ্রিজি মোবাইল সার্ভিস চালু হওয়া, ব্যান্ডউইথ চাহিদা পূরণ এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। ৪,৫৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদে, ৩২১টি পৌরসভায় এবং সিটি কর্পোরেশনসমূহের ৪০৭টি ওয়ার্ডে স্থাপিত ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন নানাবিধ সরকারি সেবা গ্রহণ করছে। সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে সরকারি সকল সেবা আজ জনগণের দোরগোড়ায়।

২১। আইটি খাতের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এ খাতে প্রতি বছর বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বাজেটে আইসিটি খাতের সার্বিক বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ হাজার ১০৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছয় বছরে আইসিটি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬০ শতাংশ। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

২২। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ এগিয়ে নিতে যে বিষয়গুলোকে আগামীতে গুরুত্ব দেওয়া হবে তা হলো- এলাকাভিত্তিক ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিটি জেলায় তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২টি জেলায় আইটি ভিলেজ স্থাপন, জনগণকে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সবকটি জেলায় ১ হাজার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন এবং ২০১৬ সালের মধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশ প্রথম স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১) উৎক্ষেপণ।

সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ

মাননীয় স্পিকার
২৩। অর্থনীতির তত্ত্বানুসারে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মত আমাদের দেশেও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিকাশ পর্বে সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য সৃষ্টির আশংকা ছিল তা বাস্তবে ঘটেনি। বরং, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে একদিকে যেমন উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে অপরদিকে তেমন যুগপৎভাবে দারিদ্র্য ও অসমতা কমেছে। এর মূল কারণ আমরা শুরু থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছি। বিগত  বছরগুলোতে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে আরও সুসংগঠিত করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের সরকার যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ও প্রশংশিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের আওতা ও সুবিধাসমূহের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছি। আমরা আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের নীতি-কৌশলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভাতার পরিমাণ ও পরিধি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছি। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ও উপবৃত্তি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ মহিলা ভাতার ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভাতার হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ছাত্র/ছাত্রীদের উপবৃত্তি গড়ে ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি করে তাঁদের মাসিক সম্মানীর পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন খাতে মোট ৩৫ হাজার ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি, যা জিডিপি`র ২.০৪ শতাংশ। এছাড়া, বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাবিখা, টিআর, ভিজিএফ, ভিজিডি খাতে বরাদ্দ অব্যাহত রেখেছি। এক্ষেত্রে ১৬.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি আমরা।

যোগাযোগ অবকাঠামো

মাননীয় স্পিকার
২৪।  সংসদের বাজেট আলোচনায় মাননীয় সংসদ সদস্যগণ যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের সম্প্রসারণ ও বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আমি এ প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য কার্যকর এবং ব্যয় সাশ্রয়ী পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উৎপাদনের উপকরণ ও উৎপাদিত পণ্যের সুষম বিতরণ যেমন নিশ্চিত করে তেমনি দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা শুরু থেকেই এর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রেখে এসেছি। আপনারা জানেন Fast Track ভুক্ত ৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টিই যোগাযোগ অবকাঠামো সংক্রান্ত। “পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ” প্রকল্পের পাশাপাশি Fast Track এ রয়েছে “ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট”, “পায়রা সমুদ্র বন্দর” ও “সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন” প্রকল্প। সার্বিকভাবে বৃহত্তর যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে মোট ২৭ হাজার ৮০১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি আমরা, যা মোট বাজেটের ৮.৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে যোগাযোগ খাতের চলমান সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক এবং মহাসড়কের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে আমরা অগ্রাধিকার প্রদান করেছি এবং এ বাবদ বরাদ্দ রেখেছি ২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে আরও যেসব বিষয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি তা হলো দেশের পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা, ২০ বছর মেয়াদি রেলওয়ে সেক্টর মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন এবং যানজটমুক্ত ঢাকা শহর গড়ে তুলতে মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন।

২৫।  কয়েকজন মাননীয় সংসদ সদস্য নতুন সড়ক আর নির্মাণ হবে না মর্মে আমি যে বক্তব্য রেখেছি তার সূত্র ধরে নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। আমি আমার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছি যে, বাংলাদেশে জনপ্রতি ও এলাকাপ্রতি সড়কের অনুপাত প্রায় সর্বোচ্চ। তাই এখন থেকে আমাদের নীতি হবে নতুন সড়ক নির্মাণের পরিবর্তে বিদ্যমান সড়কসমূহের উন্নয়ন। আমার এ বক্তব্য কেউ হয়ত ভুল বুঝে থাকতে পারেন। প্রকৃত পক্ষে আমি বলতে চেয়েছি আমরা কৃষি জমি নষ্ট করে বা বসতি এলাকা সংকুচিত করে আর নতুন রাস্তা তৈরি করব না- তবে কাঁচা রাস্তাকে পাকা করাসহ বিদ্যমান সড়কসমূহের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মানোন্নয়নের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অব্যাহত রাখা ।

ছিটমহল

মাননীয় স্পিকার
২৬। একজন মাননীয় সংসদ সদস্য ছিটমহলবাসীর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের সরকারের সফল পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম একটি মাইলফলক হলো ছিটমহল সমস্যার সমাধান। ছিটমহল সমস্যার সমাধানের ফলে এ সকল ছিটমহলে বসবাসকারী বাংলাদেশের জনগণের মূল স্রোতের সাথে একীভূত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ছিটমহলের যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানীয় জল সরবরাহসহ বিভিন্নমুখী উন্নয়নের জন্য দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি। প্রয়োজনে এ বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করা হবে।

মাননীয় স্পিকার
২৭। বিগত ০৪ জুন, ২০১৫ খ্রিঃ তারিখে আমি এ মহান জাতীয় সংসদে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করি। সেখানে আমি রাজস্ব আহরণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করি। সেগুলো মহান সংসদে কিভাবে বিতর্কিত হয়েছে এবং সারাদেশে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে তা আমলে নিয়ে এবং বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার বিভিন্ন প্রস্তাবাবলী কিভাবে সংশোধন করা যায় সে সম্বন্ধে এখন আমি বক্তব্য রাখছি। একইসঙ্গে কতিপয় করণিক ত্রুটি যা পরিলক্ষিত হয়েছে তারও সংশোধনের প্রস্তাব রাখছি।

মাননীয় স্পিকার
২৮। আমি প্রথমে আয়কর বিষয়ক প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করছিঃ
(১) প্রস্তাবিত অর্থ বিলে এলাকাভেদে ন্যূনতম করের ভিন্নতা প্রত্যাহার করে সকলের জন্য ন্যূনতম করের পরিমাণ ৪,০০০/- টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রামীণ এবং শহুরে করদাতাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় সকলের জন্য একই পরিমাণ ন্যূনতম করের প্রস্তাবিত বিধান প্রত্যাহার করে সিটি কর্পোরেশন ও এর বাইরে অবস্থিত করদাতাদের জন্য ন্যূনতম করের পরিমাণ এলাকাভিত্তিক তিনটি স্তরে নিম্নরূপে আরোপ করা যেতে পারেঃ
এলাকার বিবরণ ন্যূনতম করের হার (টাকা)
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা    ৫,০০০.০০
অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা    ৪,০০০.০০
সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতা    ৩,০০০.০০

(২)  প্রস্তাবিত অর্থ বিলে কোন ভবন বা বাড়ী বা এর কোন ইউনিট নির্মাণকালে নির্মাণ সামগ্রী বাকীতে ক্রয় করা হলে পরবর্তী বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিশোধে ব্যর্থ হলে উক্ত অপরিশোধিত অর্থ বাকীতে ক্রয়কারীর আয় হিসেবে গণ্য হবে মর্মে প্রস্তাব করা হয়েছে। রিয়েল এষ্টেট সেক্টর দেশের অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ ধরনের ব্যবসায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় বাকিতে মালামাল ক্রয়জনিত দেনা একটি অপরিহার্য অংশ। এ বাস্তবতা বিবেচনায় আনা দরকার। ব্যবসার প্রকৃতি বিবেচনায় রিয়েল এষ্টেট খাতকে নির্মাণ সামগ্রী বাকীতে ক্রয়ের পরবর্তী বছরে দেনার অর্থ পরিশোধের শর্ত এর আওতা বহির্ভূত রাখা যেতে পারে।

(৩) প্রস্তাবিত অর্থ বিলে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণকারী ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পিতা/মাতা বা অভিভাবকের টিআইএন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। তবে গ্রামাঞ্চলের এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যয় বড় শহরের তুলনায় বেশ কম। এ প্রেক্ষিতে ইংরেজী শিক্ষার বিকাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, সুনাম এবং ব্যয়ের বিষয় বিবেচনায় শুধু সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এ বিধান বলবৎ রেখে অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে তা প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

(৪) প্রস্তাবিত অর্থ বিলের দফা ৪৭ এ অনিবাসী করদাতাদের উৎসে কর কর্তনের খাত এবং কর কর্তনের হার সুনির্দিষ্ট করে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫৬(১) ধারা প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। উক্ত ধারায়technical services fee, technical know how fee or technical assistance fee এর উপর উৎসে কর কর্তনের হার পৃথকভাবে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এমতাবস্থায়, উক্ত ধারায় বর্ণিত টেবিলের দফা ২০ এ “Professional service” শব্দগুলির পর “,technical services fee, technical know how fee or technical assistance fee শব্দগুলি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

(৫)  বিদ্যমান আইনে খাদ্য পণ্য যথা চাল, চিনি, সয়াবিন তৈল ইত্যাদি আমদানী পর্যায়ে উৎসে অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হয় না। এবারের বাজেটে অন্যান্য পণ্যের সাথে “শুকনা মরিচ, তৈল বীজ, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্য তেল, চাল, চালের খুদ, গম, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি” আমদানী পর্যায়ে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত খাদ্য পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ সকল পণ্য আমদানীর উপর প্রস্তাবিত ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি।

(৬) ২০১৩ সালে ব্যাংক ব্যবসার অনুমতি প্রাপ্ত 4th generation ব্যাংকসমূহের করহার সংশোধনঃ বিদ্যমান আইনে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের করের হার ৪২.৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত অর্থ বিলে তফসিল-২ এর অনুচ্ছেদ-খ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(খ) তে ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) করের হার নিম্নরূপ প্রস্তাব করা হয়েছেঃ
ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত):
(অ)    এইরূপ প্রত্যেকটি কোম্পানীর ক্ষেত্রে যাহা publicly traded company-
(আ) এইরূপ প্রত্যেকটি কোম্পানীর ক্ষেত্রে যাহা publicly traded company নহে উক্ত আয়ের ৪০%; উক্ত আয়ের ৪২.৫%;

২০১৩ সালে সরকার বেসরকারী খাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাংককে অনুমতি প্রদান করেছে, যা 4th generation ব্যাংক নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী এই নতুন ব্যাংকসমূহ ২০১৬ সালের পূর্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না। ফলে প্রস্তাবিত বিধান অনুসারে নতুন ব্যাংকসমূহকে ৪২.৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে। দেশী অন্যান্য ব্যাংকসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিধায় ৪০ শতাংশ হারে কর প্রদান করবে। সেই বিবেচনায় নতুন ব্যাংকসমূহের উপর ৪২.৫ শতাংশ হারে কর আরোপের বিষয়টি যৌক্তিক নয়। এমতাবস্থায়, 4th generation ব্যাংক এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের করের হার ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। অন্যান্য ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত করের হার ৪২.৫ শতাংশ বহাল থাকবে।

মাননীয় স্পিকার
২৯।  আমি এখন স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বিষয়ক প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করছি।
(১)  মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আগামী জুলাই, ২০১৬ থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। সে কারণে এ বছর ১৯৯১ সালের মূল্য সংযোজন কর আইনে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। তবে করদাতাদের সুবিধার্থে বিদ্যমান আইন ও বিধিতে মূসক ব্যবস্থার পদ্ধতিগত সহজিকরণমূলক কতিপয় সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে। একইসাথে, নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর বিষয়ে FBCCI ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কতিপয় আইনগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

(২) ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত দেশে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশজ অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির চাহিদা বিবেচনায় একটি কর্মসংস্থানমুখী ও বিনিয়োগ বান্ধব একটি মূসক প্রশাসন ও নীতি কৌশল বর্তমান বাজেটে অনুসৃত হয়েছে। কৃষিখাত, পরিবেশ উন্নয়নে, পোল্ট্রি, ঔষধ ও বিদ্যুৎ খাতে নতুন প্রণোদনা প্রস্তাব ইতোপূর্বে করেছি। একইভাবে মূসকের আওতা বাড়ানো হয়েছে যাতে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।

(৩)  প্রস্তাবিত বাজেটে গৃহীত কার্যক্রম বিষয়ে মহান জাতীয় সংসদে আলোচনাসহ কতিপয় ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া দেশের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং ব্যবসায়ী সংগঠন থেকেও কিছু কিছু প্রস্তাব পুণ:বিবেচনার অনুরোধ পাওয়া গেছে। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট হতে মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব পুণঃবিবেচনার অনুরোধ পাওয়া গেছে। আলোচিত এ সকল বিষয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে এবং কতিপয় ক্ষেত্রে সংশোধনের কার্যক্রম পরবর্তীতে গ্রহণ করা হবে। তবে,

ক)  অভিভাবকদের সুবিধার্থে এবং উচ্চ শিক্ষা প্রসারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর টিউশন ফি এর উপর বাজেটে প্রস্তাবিত মূসক এর হার ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করছি।

খ) ইউনানী, আয়ুর্বেদ ও ভেষজ ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন পর্যায়ে প্রস্তাবিত মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করছি। অর্থাৎ এ খাতে আর মূসক আরোপিত হচ্ছে না।

গ) এছাড়া সিগারেটের ক্ষেত্রে বাজেটে প্রস্তাবিত মূল্য ও কর হারের কিছুটা সংশোধন আনয়ন করছি। নিম্নতম স্তরে প্রস্তাবিত মূল্য হবে ১৮ টাকা অর্থাৎ করভার সামান্য কমবে। নিম্নমানের মূল্য হবে ২০ টাকা হতে ৪২ টাকা পর্যন্ত। মধ্যমান ও উচ্চমানে প্রস্তাবিত মূল্য অপরিবর্তিত থাকবে অর্থাৎ যথাক্রমে ৪০ টাকা থেকে ৬৯ টাকা পর্যন্ত ও ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব বহাল থাকবে।

মাননীয় স্পিকার
৩০। আমি এখন আমদানি পর্যায়ের শুল্ক সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করছি।
(১)  প্রস্তাবিত বাজেটে আমি বিযুক্ত অবস্থায় মোটরসাইকেল আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছি এবং রং করা অবস্থায় আমদানি করার যে সুবিধা ছিল সেটাও রহিত করার  প্রস্তাব করেছি। আমি এখনও মনে করি দেশে যেহেতু পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে সেহেতু দেশীয় শিল্প প্রতিরক্ষণ বিবেচনায় আমাদের পদক্ষেপ যথাযথ ছিল। তবে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এসকল পদক্ষেপের ফলে কিছুটা প্রতিকূল অবস্থার মুখে পড়েছে মর্মে জানিয়েছে। এফবিসিসিআই এ বিষয়ে পরিবর্তন কিছুটা সহনীয় করার জন্য দাবী করেছে। বিশেষ করে পূর্ণাঙ্গ বা সিবিইউ (CBU) মোটরসাইকেলের সংগে বিযুক্ত মোটরসাইকেলের আমদানিতে কিছুটা শুল্ক করের কিছুটা তারতম্য থাকা যুক্তিসংগত বলে মনে করি। এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিযুক্ত অবস্থায় মোটরসাইকেল আমদানিতে পরিবর্তিত শুল্ক কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে সম্পূর্ণায়িত মোটরসাইকেল আমদানিতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে  ৬০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। তবে রং বিহীন অবস্থায় আমদানির বাধ্যবাধকতা আগামী ৩ বছরের জন্য স্থগিত করছি। আমি আশা করছি এ সময়ের মধ্যে মোটর সাইকেল সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব Painting Plant গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

(২) বাজেটে আমরা এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতী সুবিধা কিছুটা সংকুচিত করে ২ (দুই) লক্ষ বিটিইউ ক্ষমতার বেশী হলেই কেবল মূলধনী যন্ত্রপাতি সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানির বিধান প্রস্তাব করেছিলাম। ৯০ (নব্বই) হাজার থেকে ২ (দুই) লক্ষ বিটিইউ (BTU) ক্ষমতার এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে ডেটা সেন্টারের ব্যবহার্য Precision Air Conditioner এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী Inverter প্রযুক্তি সম্পন্ন Air Conditioner রয়েছে। তাছাড়া উক্ত ক্ষমতার এয়ার কন্ডিশনার অনেক ক্ষেত্রেই মাঝারী আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ এসব পণ্য এখনও দেশে তৈরি হয় না। এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ৯০ (নব্বই) হাজার থেকে ২ (দুই) লক্ষ বিটিইউ (BTU) ক্ষমতার এয়ার কন্ডিশনারের এর জন্য পৃথক এইচ.এস কোড সৃষ্টি করে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৪ শতাংশ রেগুলেটরী ডিউটি এবং অন্যান্য করাদি আরোপের প্রস্তাব করছি, তবে এক্ষেত্রে কোন সম্পূরক শুল্ক থাকবে না।

(৩) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয় বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন। তা হচ্ছে-ক্যানসার চিকিৎসার ঔষধ তৈরীতে ব্যবহার্য কাঁচামালের শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনেরও সুপারিশ রয়েছে। আমি আপনার মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসার ঔষধ তৈরীতে ব্যবহার্য কাঁচামালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও মূসক পুরোপুরি প্রত্যাহার করার জন্য প্রস্তাব করছি।

(৪) নূতন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর আসন্ন বাস্তবায়নকে বিবেচনায় নিয়ে কতিপয় চূড়ান্ত পণ্য (Finished Goods) আমদানিতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার হ্রাস করায় সংশ্লিষ্ট খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কিছুটা বিরূপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে মেটাল ক্যান, প্রিন্টেড লেবেল, তৈরী খাদ্য প্রভৃতি খাতের অপরিহার্য কাঁচামালসমূহ আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক কিছুটা হ্রাস করার প্রস্তাব করছি।

(৫) পানির কলে ব্যবহার্য এক ইঞ্চির অধিক ডায়াবিশিষ্ট ট্যাপস এবং কক (Taps & Cock) বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে মর্মে উৎপাদনকারীগণ জানিয়েছেন। কিন্তু এ জাতীয় পণ্য আমদানিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি সুবিধা কার্যকর থাকায় উৎপাদকগণ আমদানি পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ জাতীয় ট্যাপস এবং কক আমদানিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং অন্যান্য করাদি আরোপের প্রস্তাব করছি। একই বিবেচনায় খঈউ/খঊউ ঞঠ তৈরীতে ব্যবহার্য মেটাল ফ্রেম এর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ এ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।

(৬)  প্রস্তাবিত বাজেটে LED bulb এর শ্রেণীবিন্যাস এ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ সকল পরিবর্তনের ফলে LED bulb এর অপঘোষণার মাধ্যমে উন্নতমানের ডেকোরেশন লাইট, ঝাড়বাতি ইত্যাদি আমদানির পাশাপাশি এ জাতীয় পণ্যের চালানসমূহে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ের শুল্ক স্টেশন হতে জানানো হয়েছে। এ সকল অস্পষ্টতা দূর করা এবং অপঘোষণার আশংকা রোধকল্পে সংশ্লিষ্ট H.S. Code ৯৪০৫.৪০.৪২ এর বর্ণনা সংশোধন করার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি LED bulb ঘোষণায় আমদানিকৃত অন্যান্য ডেকোরেশন লাইট, ঝাড়বাতি আমদানিতে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য করাদি আরোপের প্রস্তাব করছি। একই বিবেচনায় Evaporative Air Cooler আমদানিতে বিদ্যমান মূলধনী যন্ত্রপাতি প্রত্যাহার করে ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক এবং অন্যান্য করাদি আরোপের প্রস্তাব করছি।

(৭)  বর্তমানে দেশে উন্নতমানের ডিস এন্টেনা ক্যাবল তৈরি হচ্ছে। বিদেশ হতে নিম্নমানের ডিস এন্টেনা ক্যাবল আমদানি করে দেশীয় শিল্পের ক্ষতি সাধন করছে। ফলে দেশীয় শিল্প অসমপ্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। উক্ত পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছে। উক্ত সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে ডিস এন্টেনা ক্যাবল (Coaxial cable) (H.S. Code 8544.20.00) এর প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

(৮) বই আমদানিতে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বেশ কয়েক বছর থেকেই আছে। জ্ঞানের জগত বিস্তৃত করা আমাদের সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে জ্ঞানের প্রসারে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে এই শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি।

(৯) উল্লিখিত পরিবর্তনসমূহ ছাড়াও কতিপয় ক্ষেত্রে Customs Act, ১৯৬৯ এর প্রথম তফসিল এ পণ্যের বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। ট্রান্সফরমার প্রস্তুতে ব্যবহার্য কপার তার, বাইসাইকেল শিল্পে ব্যবহার্য ওয়্যার রড এবং রেফ্রিজারেটর তৈরীর কাজে ব্যবহার্য কম্প্রেসার এর ক্ষেত্রে প্রথম তফসিলের বর্ণনা সংশোধন করার জন্য আমি প্রস্তাব করছি।

মাননীয় স্পিকার
৩১। পরিশেষে, আমি আমার বাজেট বক্তৃতার শেষ দু`টো অনুচ্ছেদের পুনরাবৃত্তি করে আমার বক্তব্য সমাপ্ত করতে চাই। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হলো আম জনতার আগ্রহ, উৎসাহ ও কর্মোদ্যম। উপযুক্ত অর্থনৈতিক নীতি-কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং সেই সাথে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা এই চালিকাশক্তির আগ্রহ ও কর্মোদ্যমকে বেগবান করে। জনগণের অকুন্ঠ সমর্থনে পর পর দুই মেয়াদে আমাদের সরকারের ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আমাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।  সবার সহযোগিতা পেলে বিশেষ করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে এ মেয়াদেও আমরা অনেক দূর এগুতে পারব। আমার বিশ্বাস চলতি মেয়াদ শেষেই বাংলাদেশের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের ব্যাপক হারে প্রসার ঘটবে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলো যানজটমুক্ত হবে, কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়াতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। শিক্ষায় দক্ষতা এবং স্বাস্থ্যসেবা সকলকে পৌঁছে না দিলে জাতি এগুতে পারে না। সুতরাং এক্ষেত্রেও আমাদের অগ্রযাত্রা দ্রুতায়িত করতে হবে। শুরুতেই বলেছি যে, দারিদ্র উচ্ছেদ ছাড়া মানুষের বিকাশ হয় না; এবং একইসঙ্গে বঞ্চিত এবং দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সামাজিক সুরক্ষা না দিলে সার্বজনীন উন্নয়ন সম্ভব হয় না। তাই, এদিকেও আমাদের এগুতে হবে। ২০২১ এ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপনের প্রাক্কালে এসব অর্জন হবে অপার আনন্দ ও গর্বের বিষয়।

৩২। শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বৈরিতা এবং এক ধরণের নির্বোধ দেশশত্রুতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সকল প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ করে আমাদের কর্মঠ, কষ্টসহিঞ্চু, সাহসী ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা সাধারণ জনগণ তাঁদের শ্রম, মেধা, প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতা দিয়ে এই অগ্রগতির চাকা সচল রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের এই অগ্রযাত্রা থাকবে নিয়ত সঞ্চরণশীল। আমি বরাবরই এদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। আবারও পুনরাবৃত্তি করবো যে, আমি অশোধনীয় আশাবাদী (Incorrigible Optimist)। আমরা সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বার্থে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাব। সব ধরনের অকল্যাণকর ও জনবিরোধী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবো। গড়ে তুলবো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নয়নকামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আমরা জোর কণ্ঠে ঘোষণা করতে চাই যে, আমাদের জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা আগামী দেড় দশকেই গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ্।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।



মন্তব্য চালু নেই