সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী

২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বইয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

রোববার সকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নচিত্র নিয়ে বক্তৃতার এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী বাজেট বইয়ের ১১তম পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এতে বলা হয়েছে- ‘মাধ্যমিক শিক্ষায় আমরা অনেকদিন ধরে পিছিয়ে আছি। এই স্তরে শিক্ষার মান বেশ নিম্ন পর্যায়ে আছে।’ কিন্তু এ জাতীয় কথা আমাদের বিরোধীরাও বলে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা কি তুলনা করবো আমেরিকার সঙ্গে, নাকি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে কি ছিলো তার সঙ্গে ?

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী শিক্ষানুরাগী। কিন্তু যারা বইটিতে লিখেছেন তারা কিভাবে এসব মন্তব্য করলেন। অর্থমন্ত্রী হয়তো বিষয়টি দেখার সুযোগ পাননি, উনি ব্যস্ত মানুষ। তাই বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বলছি।

মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, পরীক্ষা দিচ্ছে, ভালো ফল করছে। এতো মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ- তারপরেও কিভাবে বলে মাধ্যমিক শিক্ষায় উন্নয়ন হয়নি। এর জবাব আমি কি দিবো। আমার কি বলার আছে।

তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য দরকার ১৬ হাজার কোটি টাকা। দেওয়া হয়েছে মাত্র চার হাজার কোটি। এ দিয়ে বেতন দিবো নাকি অবকাঠামো উন্নয়ন করবো। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ছয় ভাগ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা দরকার।

মন্ত্রী আরো বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) কত দূরদর্শী ছিলেন। এবার বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৩ ভাগ। যা সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অষ্টম। যেখানে ঘানা, কেনিয়ার মতো দেশে শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হয় ৩১ ভাগ। আমাদের ব্যয় সেখানে মাত্র ৪ দশমিক ৩ ভাগ।

দেশে এই মুহুর্তে একজনও স্যান্ডেলবিহীন মানুষ নেই। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। আমি গ্রামগঞ্জে ঘুরে দেখি, কোথাও একটি মানুষ স্যান্ডেলবিহীন নেই। আমি নিজে স্কুলে গেছি খালি পায়ে। আজকে সেটা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমি দেশি-বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি – প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য সঠিক এবং এটা বাস্তবায়ন হবেই। ২০২১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান শিক্ষার যে পরিকল্পনা সরকার নিয়েছিলো তাতে অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জনগনের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। হাজার বছর এ অঞ্চলের মানুষ হয় কিনে, না হয় ভিক্ষা করে, না হলে রিলিফ খেয়ে বেচে ছিলো। আমরা এখন সাহসের সঙ্গে বলতে পারি- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ অঞ্চলে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ। আজকে আমরা খাদ্য বিক্রি করতে পারি, রিলিফও পাঠাতে পারি- এটা আমাদের পরিবর্তন।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। এতো কিছুর পরে চোখ বুঝে কেবল বললেই হবে না- দেশ এগুচ্ছে না। দেশের অগ্রগতি হচ্ছে না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা চোখ নেই তিনিও দেখতে পাচ্ছেন। আর যার কিছু দেখার মন নেই তিনি তো কিছু দেখতে পাবেন না। কারণ তিনি দেখেও না দেখে আছেন। তাদের আর দেখারও প্রয়োজন নেই। দেশবাসী জেগে উঠেছে। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তি নিয়ে এমপিদের দাবির সঙ্গে একমত পোষন করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনাদের সমস্ত দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। আপনাদের দাবি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে, ধীরে ধীরে সব বাস্তবায়ন হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রাথমিকের ৯৯ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন কর্মী হিসেবে তার নির্দেশমতো কাজ করার চেষ্টা করি। ভুলত্রুটি থাকতে পারে। সংসদ সদস্যরা শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, প্রস্তাব করেছেন। আমরা সবকিছু নোট রেখেছি। ভবিষ্যতে সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫২ লাখ। আমার অনেকে বিদেশী বন্ধু বলেন তোমার শিক্ষার্থীরা গাছতলায় বসে। আমি তাদের বলি এতে আমি অখুশি নই। কারণ আমাদের শিক্ষায় ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটেছে বলেই শিক্ষার্থী বেড়েছে।



মন্তব্য চালু নেই