সচিবালয়ের ২১ লিফটের ১৯টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের বেশির ভাগ লিফট দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ২১টি লিফটের মধ্যে ১৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে লিফটের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, গত কয়েক বছরে সচিবালয়ে চার দফা অগ্নিকাণ্ড এবং লিফট আটকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরাতন লিফটগুলো পরিবর্তন না করলে বড় ধরনের দুঘর্টার আশঙ্কা করছেন তারা।

সম্প্রতি সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় উঠতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আটকা পড়েন। লিফটটি প্রায়ই আটকে থাকে। এর আগে লিফট দুর্ঘটনায় একজনের পা ভেঙে যায়।

২০১২ সালের ২৭ আগস্ট সচিবালয়ের লিফটে দেড় মিনিট আটকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তার কোনো খবর নেই।

২০১১ সালের ২১ এপ্রিল লিফটে আটকা পড়েছিলেন ভারতের বিমানমন্ত্রী ভায়ালার রাভি ও তার সফরসঙ্গীরা। সেদিন তারা সাত মিনিট লিফটে আটকে ছিলেন। পরে পাশের লিফটে করে তিনি ২০ তলায় ওঠেন। এ সময় লিফটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আহমেদ হোসেন।

এ ছাড়া সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের একটি লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ১০ মিনিট আটকা ছিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের সচিবালয় শাখার প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, সচিবালয়ে সব লিফট প্রায় পুরো মেয়াদ পূর্ণ করেছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে নতুন লিফট স্থাপন করা যাচ্ছে না।

মাহাবুবুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সেখানে নতুন লিফটের চাহিদা চাওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের বেশির ভাগ লিফটই ঝুঁকিপূর্ণ।

আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়ে যে ৪ নম্বর ভবন, সেটিতে রয়েছে চারটি লিফট। এর মধ্যে তিনটি লিফটে নানা সমস্যা দেখা দেয় প্রায়ই।

৬ নম্বর ভবনে দপ্তর রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগের। এসব মন্ত্রণালয়ে দাপ্তরিক কাজে প্রতিদিন শত শত সরকারি কর্মকর্তা ও জনগণ এ ছয়টি লিফট দিয়ে ওঠানামা করে। এর মধ্যে দুটি পুরনো। লিফট ২টি মাঝে মাঝে আটকে থাকে। আর দুটি লিফট ভালো থাকলেও মাঝে মাঝে আটকে যায় সেগুলোও।

৭ নম্বর ভবনের চারটি লিফটের মধ্যে ৩টি নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে মাঝে এসব লিফট আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই ভবনে রযেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থাণীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, শ্রম মন্ত্রণালয়. যুব ক্রীড়া এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

অগ্নিঝুঁকিও আছে সচিবালয়ে। এই ঝুঁকি কমাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও সরকারের কাছে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়। সেগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।

সচিবালয়ে বহুতল ভবনে লিফটগুলোর কী অবস্থা জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, “ভাই আমরা ১৮ তলায় ওঠানামা করতে গিয়ে ভয়ে থাকি। অনেক দিন আমরা লিফটে আটকা পড়েছি। লিফটগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার।”

লিপটসহ নানা ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “সচিবালয়ের নিরাপত্তা যথেষ্ট। এর পরও নানা ঘটনা ঘটছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। লিফটগুলো দেখতে বলা হয়েছে।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং সচিবরা অফিস করেন, সেখানকার লিফট এমন অবস্থায় থাকলে তা দুঃখজনক। ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী লিফটের আকৃতি, বিধিমালা অনুসরণ করে লিফট লাগানোর পর প্রতি ছয় মাসে একবার অন্তত লিফট রক্ষণাবেক্ষণ করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে জানান তিনি।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই