সঞ্জয়ের জেলজীবন

বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। রুপালি পর্দায় তাকে নানারূপে দেখেছেন দর্শক। কখনো রোমান্টিক ঘরানার চরিত্রে কখনো বা আন্ডার ওর্য়াল্ডের ডন।

রিল লাইফে এমন বৈচিত্র্যময় জীবনের মতো বাস্তব জীবনও নানা বাঁকে ভরপুর সঞ্জয়ের। ড্রাগ, বিয়ে ভাঙা, মায়ের মৃত্যু, টাডাসহ কিসের মুখোমুখি হননি তিনি। এর আগে অনেকবারই অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন এই অভিনেতা। কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি।

কিছুদিন হলো তার জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। চরচ্চিত্রটি পর্দায় আসার আগে তার জীবনের কিছু ঘটনা শেয়ার করেছেন সঞ্জয়। সম্প্রতি দিল্লীর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে জেলজীবন, নেশাগ্রস্থ হওয়ার গল্প বলেন এই অভিনেতা।

বক্তব্যর প্রথমে জেলজীবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জীবনে দুইবার অনেকটা সময় জেলে কাটিয়েছি। প্রথম দিকে বাবা এবং বোন প্রিয়ার পক্ষে সে সময়টা খুব কঠিন ছিল। প্রিয়া রাখির দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত। শেষবার পুনের জেলে কাটিয়েছি। সেখানে লাখ লাখ মাছির বাস। পোশাক থেকে খাবার সব কিছুতেই মাছি থাকত। প্রতিদিন ডাল থেকে মাছি তুলে তারপর খাবারটা খেয়ে নিতাম। আমার সঙ্গে যে সেল ভাগ করত সে ঘেন্না পেত সেই ডাল খেতে। আমি বলতাম, তুই কত দিন না খেয়ে থাকবি? আরে জেলে প্রোটিন পাবি কোথায়? ডালে প্রোটিন থাকে।’

সঞ্জয় আরও বলেন, ‘‘তিন বছর সন্তানদের না দেখে থাকাটা খুব কষ্টের ছিল। মাসে দুইবার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতাম। প্রতিবারই ওদের বলতাম, ‘আমি এখন পাহাড়ে শুটিং করছি। সেখানে নেটওয়ার্ক খুব খারাপ। তাই কথা বলায় সমস্যা হচ্ছে।’ আমার স্ত্রী বাচ্চাদের জেলে নিয়ে আসার কথা বলেছিল। কিন্তু আমি বারণ করেছিলাম। আমি চাইনি ওরা আমায় ছেঁড়া পোশা আর মাথায় টুপি পরা দৃশ্য দেখুক। এই ছবি সঙ্গে করে ওরা বাঁচুক তা আমি চাইনি।’

সঞ্জয়ের জীবন খোলা বইয়ের মতো হলেও কখনো এ সব বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি। এ সময় ড্রাগ নিয়ে বলার সময় তিনি অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ড্রাগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনো অজুহাত দিতে চাই না। মাকে হারানোর পর ড্রাগ নেওয়া শুরু করি। কিন্তু সেটা অজুহাত ছাড়া আর কিছু না। আসলে এই অজুহাত দাড় করিয়ে নেশা করাটা ভয়ঙ্কর। এটা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ১২ বছর বয়সে আমি ড্রাগের কবলে পড়ি। এমন কোনো ড্রাগ নেই যার নেশা আমি করিনি্। বাবা যখন আমাকে আমেরিকায় নিয়ে যান, রিহ্যাবে আমাকে একটা ড্রাগের তালিকা দেওয়া হয়। এই তালিকার সবকটা ড্রাগেই টিক দিয়েছিলাম। কারণ ওই তালিকার সব ড্রাগ আমি সেবন করেছিলাম। তখন চিকিৎসকরা আমায় দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তাররা বলেছিলেন, ‘যে পরিমাণ ড্রাগ আপনি ব্যবহার করেছেন তাতে আপনার বেঁচে থাকারই কথা ছিল না। এত ড্রাগ নিলে কেউ বাঁচতে পারে না।’’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি পরিবারের জন্য ড্রাগ ছাড়িনি। ছেড়েছি কারণ এর থেকে বের হতে। আমি ওই জীবন চাইনি। রিহ্যাব থেকে বের হওয়ার পরের সময়গুলো সব চেয়ে কঠিন। তখন ভেতর থেকে প্রচণ্ড একটা ইচ্ছে জন্ম নেয়। একবার ড্রাগ নিলে কী হবে! বারবার এটাই মনে হত। তখনই মনের জোর প্রয়োজন হয়। আমি তরুণ প্রজন্মের সকলকে বলছি, নিজেকে ভালোবাসো, কাজকে ভালোবাসো পরিবারকে ভালোবাসো। ড্রাগ নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো জীবন নয়।’



মন্তব্য চালু নেই