‘সত্যানুসন্ধানী বালকের চোখে ছাত্রজীবন’

শাহরিয়ার মাহমুদ নয়ন: “শুধু বইয়ের কীট হয়ে যে ছাত্রজীবন কাটাতে চায়—আমি তাকে চাইনা। আমি চাই সেই ছেলে যে হবে নিষ্ঠাবান, সৎ চরিত্র, সাহসী আর প্রকৃত শক্তিশালী। প্রয়োজনের তাগিদে যে ছেলে কিল ঘুষিও চালাতে পারে—আমি চাই সেই সাস্থ্যবান ছেলে”।

এই বাণীটি আমার নয়। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় জনাব এ,কে ফজলুল হকের। জনাব এ,কে ফজলুল হক সাহেব একজন ছাত্রের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য গুলো চেয়েছেন তা সব গুলো একজনের মধ্যে জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঠিকই থাকে, কিন্তু জীবনের মাঝপথে এসে তারা তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা মূল্যবান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্য থেকে অনেক দূরে সরে পড়ে যেখান থেকে ফিরে আসাটা হয়তবা সপ্নের ব্যাপার। কয়জন ছাত্র-ই বা দেশের মেরুদন্ড হতে পারে!

যে পর্যায়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা হোচট খায় তা আমি ব্যাখ্যা করছ:
৫ম শ্রেণী থেকে কলেজ পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীরা যারা পরিবারের কঠোর অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়েছে তাদের মধ্যে জনাব এ,কে ফজলুল হক সাহেবের উল্লেখিত বৈশিষ্টগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এসব ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের লেখাপড়া সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সাথে সাথে বিশ্ববদ্যালয়ের পড়ার সপ্নে ভাসতে থাকে। তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর অনেক দূরবর্তী অঞ্চল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে অচেনা অঞ্চল সমুহে স্থানান্তরিত হয়।

তারা যখন নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ক্লাস করতে শুরু করে তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়ে কিংবা কেউ প্রেমে। আবার কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অসৎ সঙ্গের সাথে মিশে মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ে। আবার কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী তাদের পারিবারিক সমস্যা এড়ানোর জন্য নিজেদের দৈনন্দিন লেখা-পড়াকে সাময়িকভাবে বাদ দিয়ে বিভিন্ন চাকরি বা বেশ কয়েকটি টিউশনিতে ঝুঁকে পড়ে যার কারনে উল্লেখিত পক্ষগণ মা-বাবার সপ্ন পূরণে(লেখা-পড়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা) করতে বাধাগ্রস্থ হয়।

আমি আর একটি ব্যতিক্রম উদাহরণ দিচ্ছিঃ ধরুন আমি আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম ক্লাস করলাম। শিলা নামক একমেয়ের সাথে আমার পরিচয় হল। যেকোন বিষয়ের উপর যেমন-দুজন গ্রুপিং করে পড়ালেখা অথবা প্রেজেন্টেশনের জন্য নিজেদের তৈরী করা বা যেখানে যাইনাকেন এক সাথে দুজনে-ই যায়। আমাদের বন্ধুত্বটা এমন যে আমাদের সকল বন্ধু-বান্ধবরা জানে যে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। একদিন হঠাৎ ভাবলাম আমাদের এই দুজনের সম্পর্কটা আর একটু বাড়ানো দরকার।

এরপর হল দুজন দুজনার ভালবাসার পর্যায়। এই ভালবাসাটা এক দিকে হয় রূপ নিবে গভীর প্রেমে আর নয়তো বা অন্যদিকে যৌন মিলুন। এই দুইটি বিষয়ের উপর আমাদের মধ্যে একে অপরের আমাদের মধ্যে একে অপরের উপর নির্ভরশীলতা কাজ করবে। এরপর ধরুন আমাদের গভীর প্রেম বা যৌনতার অসম্পূর্ণ সম্পর্কের যে কোন ভাবেই সমাপ্ত হল। ঐ মূহুর্তে অনেকে ব্যর্থতার বোঝা বা স্মৃতির বোঝাটাকে হালকা করতে গিয়ে মাদকদ্রব্য বা বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ে যেখান থেকে ফিরে আসাটা সত্যি-ই আত্মশুদ্ধির ব্যাপার।

ঐ অবস্থায় তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা যে আসলে কোন কাজটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক। এই উদাহরণটিও প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের জীবনে উদ্দেশ্য পূরণের এক অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো নিজেদের মধ্যে খাপ খাওয়ানো অনেকটা কঠিন। আজ করব, কাল করব বলে কখনোই করে উঠতে পারিনা। এজন্য নিয়মিত কোয়ান্টাম চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যাইহোক,ঐ অবস্থা থেকে প্রত্যেক জনকে ইনশাল্লাহ্ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একটু মনযোগ সহকারে নিম্নোক্ত চিত্রটি লক্ষ্য করুনঃ

ভোর ৬ টা(ফজর), দুপুর ১ টা বেজে ৩০ মিনিট(দুপুর), বিকেল ৫ টা(আছর), সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৩০ মিনিট(মাগরিব) এবং ৮বেজে ৩০ মিনিট(এশা) । পাচ ওয়াক্ত নামাজকে যদি তারা তাদের জীবনে প্রধান কাজ বানায় তাহলে অন্যান্য স্বাভাবিক কাজগুলো তাকে খুঁজে নিবে। সে হয়তবা ভোর ৬ টা বা তার আগে ঘুম থেকে উঠে জামাতের উদ্দেশ্যে গেল এবং নামাজ আদায় করল। তারপর সে মনেমনে ভাবল যে দুপুর ১ টা বেজে ৩০ মিনিটে যোহরের জামাতে আমার অবশ্য-ই অংশগ্রহন(যেহেতু এটা তার মৌলিক কাজ) করতে হবে এবং সে এও ভাব্বে যে জামাতের ভাইয়েরা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

সুতরাং সে ফজরের নামাজ থেকে যোহরের নামাজের আগের মধ্যবর্তী যে ৮ ঘন্টা সময় আছে সে তার যাবতীয় কাজ এক ৮ ঘন্টার মধ্যে সেরে নিবে এবং বাকি ওয়াক্তগুলো সে এভাবেই পালন করবে। দৈনন্দিন এই নিয়মটা যদি সে কয়েকদিন করতে থাকে তাহলে ইনশাল্লাহ্ সে তার যাবতীয় মানসিক দুশ্চিন্তা ও আবেগ ঝেড়ে তার মূল্যবান সময় ও কাজকে মূল্যায়ন করতে শেখবে এবং এই নিয়মটা ক্রমাগতভাবে নিজের মধ্যে চালিয়ে নিলে সে বিভিন্নভাবে ধর্মজ্ঞান লাভ ও আমল করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে সে ইতিবাচক দৃষ্টভঙ্গী লাভ করে পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবে। তখন সে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নিন্মোক্ত ছন্দদয় নিজের মধ্যে অনুভব করতে পারবে—-

“মরিতে চাহিনা আমি
সুন্দর ভূবনে
মানবের মাঝে আমি বাঁচতে চাই
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই”।

ছাত্র জীবনে উন্নতি করতে হলে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন গুলোকে তাদের জীবনের একান্ত মৌলিক কাজ হিসেবে মেনে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ধাপে আসা সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করতে হবে; কেননা এই ছাত্র-জীবনে আমাদের সম্মুখে আসা প্রতিটি সমস্যাই আমাদের জীবনের সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যগুলোকে পূরন করার সু্যোগ মাত্র। লেখাটা পাঠকের জন্য নয় শুধু উড়তি বয়সী সব ছেলেমেয়েদের জন্য।



মন্তব্য চালু নেই