বোর্ডের ভুলে আত্মহননকারী হৃদয় পেয়েছে জিপিএ-৫

সন্তানহারা মায়ের এ আর্তনাদের সান্ত্বনা দেবে কে?

কল্যাণ কুমার চন্দ. বরিশাল : “আজ এ প্লাস দিয়ে কি হবে? আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। আমার খোকা এ প্লাস পেয়েছে এ খবর আজ শুনতে চাই না। এ খবরে কি আমার হৃদয় ফিরে এসে বলবে মা আমায় টাকা দাও বন্ধুদের মিষ্টি খাওয়াব। আমি এ প্লাস পেয়েছি ভাল কলেজে ভর্তি হব। এ সু-সংবাদ কি আমার কোল জুড়াবে। আমার সন্তান কোথায়? তাকে ফিরিয়ে দিন। তার এ প্লাস পাওয়ার খবর আমি তার মুখ থেকেই শুনতে চাই”।
সূত্রমতে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার খবর শুনে গত বুধবার আত্মহত্যা করেছিলো নগরীর উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা মেধাবী ছাত্র সর্বজিৎ ঘোষ হৃদয়। শনিবার সন্ধ্যায় নিহত ছেলের অকৃতকার্যর স্থলে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর শুনে হৃদয়ের মা শিলা ঘোষ এভাবেই বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন।

শনিবার রাতে নিহত হৃদয়ের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, সন্তান হারা মায়ের আর্তনাতে নির্বাক হয়ে আছেন আশপাশের মানুষ। পাস করেও ফেল করার কলঙ্ক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করা হৃদয়ের মাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা নেই কারো। সকলেই জানে হৃদয়কে আর কোনদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বিলাপ করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন হৃদয়ের মা শিলা ঘোষ। বরিশাল শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের ভুলের কারনেই মেধাবী ছাত্র হৃদয় আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে বাধ্য হয়েছে। হৃদয়ের বাবা নগরীর কাটপট্টি রোড এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী শেখর ঘোষ বলেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমার ছেলে বলি হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না এবং আমি তা কোনদিনই মেনে নিতেও পারবো না। এ ব্যাপারে আমি বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবো।

সূত্রমতে, গত বুধবার সারাদেশের সাথে একযোগে ঘোষিত ফলাফলে সর্বজিত ঘোষ হৃদয় ধর্ম বিষয় ব্যতিত অন্যসবগুলো বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলো বলে রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। ধর্মে ফেল করার কলঙ্ক সইতে না পেরে হৃদয় নগরীর প্যারারা রোডের নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। সূত্রে আরও জানা গেছে, নগরীর খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সববিষয়ে পাশ করেও হিন্দু ধর্মের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ধর্মে ফেল করার বিষয়ে অভিভাবকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে অনেক অভিভাবক ও সচেতন নগরবাসী বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে সুনির্দিষ্ট কারন যাচাইয়ের দাবি করেন। ফলশ্রুতিতে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কারন খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অকৃর্তকায্যদের খাতা পুনর্মূল্যায়ণে দেখা যায় প্রধান পরীক্ষক ‘খ’ সেটের যে উত্তরমালা তৈরী করে দিয়েছিলেন তা ‘গ’ সেটের। ফলে ‘খ’ সেটে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের উত্তরের সাথে প্রধান পরীক্ষকের ভুল উত্তরমালার সমন্বয় হয়নি। পরবর্তীতে পুর্ণমূল্যায়ণের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে নিহত সর্বজিৎ হিন্দু ধর্মেও জিপিএ-৫ পেয়েছে।

সূত্রমতে, শুধু সর্বজিৎ-ই নয়; একইভাবে ‘খ’ সেটে অংশগ্রহণ করা ১ হাজার ৪৯২জন পরীক্ষার্থীর হিন্দু ধর্মের নৈর্ব্যক্তিক (সকল সেট) পুনরায় পরীক্ষার মাধ্যমে ১ হাজার ১৪১ জন পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাশ করেছে। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯ জন। এছাড়া এ পুনঃপরীক্ষণে ৫ হাজার ৮০৯ জনের ফলাফল উন্নীত হয়েছে। সেখান থেকেও নতুন ১৫ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, দু’জন প্রধান পরীক্ষকের অদক্ষতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সর্বজিৎ ঘোষ হৃদয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, হৃদয়ের আত্মহত্যা দুঃখজনক বিষয়। এজন্য আমরাও শোকাহত। তার পরিবারকে শান্তনা জানানোর ভাষা আমার নেই।



মন্তব্য চালু নেই