সন্তান জন্মের জন্য এখন আর পুরুষের দরকার হবে না!

সন্তান জন্মে আর পুরুষের প্রয়োজন হবে না, এমন কথাই জানিয়েছেন চীনের বিজ্ঞানিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টেম সেল নামে প্রভাবশালী একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা।

জার্নালে নানজিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ড. জিয়াহাও শা এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষকদল কৃত্রিম শুক্রাণু তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই শুক্রাণুর সাহায্যে এরই মধ্যেই জন্ম নিয়েছে ইঁদুর।

ড. জিয়াহাও শা বলেন, গবেষণা ঠিকপথে এগোলে সেদিন আর বেশি দূরে নেই, যখন সন্তান জন্মের জন্য আর পুরুষের শরীরে সৃষ্ট শুক্রাণুর প্রয়োজন হবে না। পরীক্ষাগারে উৎপন্ন শুক্রাণুর সঙ্গে নারীর ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়েই সৃষ্টি করা যাবে সন্তান।

এদিকে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, যে পদ্ধতিতে ড. জিয়াহাও গবেষণাটি চালান, তাঁর নাম ‘স্টেম সেল টেকনিক’। যদিও পদ্ধতিটি অনেক পুরোনো। তবে এই পদ্ধতিতে কিছু নতুন সংযোজন বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাকে সফল রূপ দিয়েছে।

ড. জিয়াহাও জানান, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা প্রথমে ইঁদুরের ভ্রুণ থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করেন। এরপর সেটিকে বিশেষ কিছু রাসায়নিক মিশ্রণে রাখা হয়। মিশ্রণে রাখার পর স্টেম সেলটি ভেঙে গিয়ে ‘জার্ম সেলে’ রূপান্তরিত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এটিই হলো শুক্রাণু তৈরির প্রথম ধাপ।

এরপর কৃত্রিমভাবে তৈরি ‘টেস্টিকিউলার সেলের’ মধ্যে রাখা হয় ওই জার্ম সেলটিকে। ল্যাবরেটরিতেই শুক্রথলির মতো পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ওই টেস্টিকিউলার সেলের মধ্যে মেশানো হয় টেস্টোস্টেরন হরমোনও। এভাবেই তৈরি হয়েছে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম শুক্রাণুটি।

তবে এই সাফল্যের পরও বিজ্ঞানীরা অবশ্য একে পুরোপুরি শুক্রাণু বলছেন না। পরিবর্তে এর নাম দিয়েছেন ‘স্পার্মাটিডস’। এর কারণ হলো, কৃত্রিমভাবে তৈরি শুক্রাণুতে মাথার অংশ ঠিক থাকলেও এতে লেজের অংশটি থাকে না। এই ‘স্পার্মাটিডস’ শুক্রাণুর মতো সাঁতার কেটে এগিয়ে যেতেও অক্ষম।

ড. জিয়াহাও জানিয়েছেন, এই স্পার্মাটিডসকেই পরীক্ষাগারে মানুষের কৃত্রিম গর্ভধারণের পদ্ধতি আইভিএফের (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) মতো করে ইঁদুরের ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। কৃত্তিমভাবে ডিম্বাণু প্রবেশের এই পদ্ধতিটির বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন আইসিএসআই (ইনট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন)। পরে ল্যাবরেটরিতেই স্মার্টাটিডস ও ইঁদুরের ডিম্বাণুর মিলনে কৃত্রিমভাবে ইঁদুরের নতুন ভ্রুণ তৈরি হয়। পরে এটি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠতে থাকে।

এর আগেও অবশ্য ২০১১ সালে জাপানে এই স্টেম সেল প্রযুক্তির প্রয়োগ হয়েছিল। তখন ইঁদুরের ভ্রুণের স্টেম সেল থেকে জার্ম সেল তৈরি করা গেলেও সেটিকে বিজ্ঞানীরা পুরুষ ইঁদুরের শুক্রথলির মধ্যেই প্রবেশ করিয়েছিলেন। তবে এবারকার পুরো পক্রিয়াটিই পরীক্ষাগারে হয়নি।

গবেষকদলের আশা, পরীক্ষাটি সফল হলে পুরুষদের শুক্রাণুসংকট ও শুক্রাণুজনিত অক্ষমতার কারণে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা দূর হবে। এতে নারীরা পুরুষের শরীরে সৃষ্ট শুক্রাণু ছাড়াই গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হবে।

আর ড. জিয়াহাও শা বলেছেন, এই আবিষ্কার যদি মানুষের ক্ষেত্রে নিরাপদ হয় এবং সফল প্রয়োগ করানো সম্ভব হয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে বন্ধ্যাত্ব সমস্যাটি পুরোপুরি নিরসন হবে।



মন্তব্য চালু নেই