সন্তান নেওয়ার ১৩ অপ্রত্যাশিত খরচ

সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছেন? অথবা সন্তান জন্মের অপেক্ষায় আছেন? সন্তান জন্ম নেওয়ার পর অনেক খরচ বাবা-মার ওপর চেপে বসে। যা হবু বাবা-মা চিন্তাই করেন না। কি ধরণের খরচ বা কেমন হতে পারে তা যদি আগে থেকে জেনে রাখা যায় তাহলে ভবিষ্যতের অনেক সমস্যাই এড়ানো যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার সকল বাবা-মা এবং তাদের অফিসের কর্মচারীদের ওপর জরিপ করে বের করেছে ১৩ অপ্রত্যাশিত খরচের খাত। যা হয়তো আপনি চিন্তাও করেননি।

যাতায়াত খরচ:
নতুন বাবা-মার ক্ষেত্রে যাতায়াত খরচ আগের তুলনায় বেড়ে যায়। আপনি কোথাও গেলে আপনার সন্তানকে নিয়ে কোনও লোকাল বাসে উঠতে চাইবেন না। প্রাইভেট গাড়ি বা বেবি ট্যাক্সি আপনার পছন্দের শীর্ষে থাকবে। একই সঙ্গে শিশুদের প্রয়োজনীয় জিনিস সবসময় সব জায়গায় পাওয়া যায় না। বিশেষ এলাকায় পাওয়া যায়। বাসায় যদি আপনি আপনার শিশু রেখে আসেন তাহলে বাড়ি ফেরার তাড়াও আপনার মধ্যে কাজ করবে।

নতুন নতুন বোতল কেনার খরচ:
হয়তো ভাবছেন শিশুদের জন্য একটা বা দুইটা ফিডারের বোতল কিনলেই হয়ে যাবে। এটাতে খরচের কি হলো। কিন্তু শিশুরা সব বোতলে দুধ খেতে চায় না। অনেক অভিভাবকই অভিযোগ করেন শিশুরা সব ধরণের বোতল পছন্দ করে না। কোন ধরণের বোতল তারা পছন্দ করে এটা বের করতেই আপনাকে বিভিন্ন ধরণের বোতল কিনতে হবে। আপনাকে সেক্ষেত্রে প্রস্তুত থাকতে হবে এর জন্য।

বিভিন্ন বিল:
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আর পানির বিল পরিশোধ করার প্রস্তুতি নিতে হবে আপনাকে। আপনি আর আপনার সঙ্গী হয়তো একটু গরম বা শীতে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু শিশুরা অনেক বেশি নাজুক থাকে। একটু ঘামলে বা একটু ঠান্ডায় তাদের সর্দি-কাশি এমনকি নিউমোনিয়া হয়ে যায়। হয়তো আপনাকে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি সময় ফ্যান বা হিটার চালিয়ে রাখতে হবে। ছোট শিশুকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে পানির ব্যবহারও বেড়ে যায়।

ডে কেয়ার:
কর্মজীবী বাবা-মার ক্ষেত্রে অফিস সময়ে শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হয়। সবসময় আপনার সন্তানের দাদা-দাদী বা নানা-নানী পাশে থাকতে পারে না। এক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হয় ডে কেয়ারের। কিন্তু ডে কেয়ারের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই সন্তানের জন্য এ খরচের কথা অবশ্যই আপনাকে ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে রাখতে হবে।

নার্সিং খরচ:
শিশু হবার পর প্রসূতি মার আলাদা সেবা যত্নের প্রয়োজন হয়। এই বিশেষ সেবাযত্নের জন্য খরচও বেড়ে যায়। এসময় মায়ের জন্য ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি প্রভৃতি কেনার দরকার হয়।

শিশুর জামা কাপড়:
শিশুরা খুব দ্রুত বড় হয়। এক মাস আগের জামা তাদের গায়ে লাগে না। এজন্য নিত্যনতুন জামা কাপড় কিনতে হয় বাবা-মাকে। শিশুরা যে পোশাকে আরাম পায় সেটা ছাড়া অন্য পোশাক পড়তে চায় না। দেখা যায় প্রচুর পোশাক জমে যায় তাদের।

শিশুদের বিশেষ ব্যাগ:
ফিডার, প্যাসিফায়ার, ডায়াপার, খেলনা ইত্যাদির জন্য বিশেষ ব্যাগ সবসময় আপনাকে রাখতে হবে। কোথাও গেলে অথবা ঘরের মধ্যে এ জিনিসগুলো এক জায়গায় গুছিয়ে রাখতে হলে ব্যাগের প্রয়োজন হয়।

বীমা:
শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপনাকে স্বাস্থ্য বা জীবনবীমা করতে হবে। সেক্ষেত্রে তার প্রিমিয়াম জমা দেওয়া, বীমা করার যাবতীয় খরচের টাকা আপনাকে গুনতে হবে।

গর্ভকালীন পোশাক:
নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে সব পোশাক ফিট হয় না। এ সময় পড়তে হয় বিশেষ পোশাক। এই বিশেষ পোশাক সব জায়গায় পাবেনও না আপনি। অন্যান্য পোশাকের তুলনায় এর মূল্য অনেক বেশি।

বিশেষ খাবার:
নবজাতক শিশুকে দুই ঘন্টা পরপর খাওয়াতে হয়। সারারাত তারা জেগে থাকে। এ সময় মাকে বিশেষ খাবার খেতে হয়। যদি দেখাশোনা করার বিশেষ কেউ না থাকে তবে আপনাকে এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা সহজে তৈরি করা যায়। অথবা আপনাকে ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর করতে হতে পারে।

অনিয়মিত ছুটি:
নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও পুরুষেরা পিতৃত্বকালীন ছুটি পান না। যা পান তা অত্যন্ত কম। পরিবারের ছোট সদস্যের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বাবাকে মাঝে মাঝেই বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয়। যা আয়ের ওপরে প্রভাব ফেলে।

চিকিৎসা:
ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। হবু বাবা-মারা ভাবেন শুধু প্রসবকালীন সময়ে হাসপাতালের বিল দিয়ে দিলেই হবে। এরপর আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু ঋতু পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণে শিশুদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করতে হয়। চিকিৎসার খরচ এ সময় বেশিই থাকে।

সময় : শিশুকালেই সময়ের মূল্য রচনা আমরা শিখেছি। সময়ের চেয়ে মূলবান কিছু নয়। সবচেয়ে মূল্যবান যে বস্তু এসময় খরচ হয় তা হলো সময়। তবে বাবা-মার কাছে এটা অপচয় নয়। সময়কে সঠিকভাবেই ব্যবহার করছে তারা।

সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



মন্তব্য চালু নেই