সবার মুখেই এক কথা ‘আজ থেকে আমরা স্বাধীন দেশের অধিবাসী’

দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে নিজ ভূমে পরবাসী থাকার পর গতকাল মধ্যরাতে এ অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটল। এ উপলক্ষে গতকাল ছিটমহলগুলোতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজন করা হয় মিলাদ-মাহফিল, দোয়া ও প্রার্থনার। গতকাল ৩১ জুলাই মধ্য রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়। ভারতের পক্ষে কোচবিহার জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মধ্যে এ বিনিময়প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে নিজ ভূমে পরবাসী থাকার পর, আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। স্বাধীন দেশে বসবাসের মজাই আলাদা। দীর্ঘদিনের ছিটমহলের অবহেলিত জীবনের অবসান হলো। আজ থেকে কেউ আমাদেরকে ছিটমহলের মানুষ বলে গালি দিতে পারবে না। একজন নাগরিক হিসেবে নাগরিক সুযোগ সুবিধা ও ভোট দেয়ার অধিকার পেলাম।

পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি ছিটমহলসহ সারা দেশে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এসব ছিটমহল আজ থেকে বাংলাদেশের। আবার ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। সে সব ছিটমহল আজ থেকে ভারতের। মানুষ হিসেবে ছিটমহলবাসীর মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবা ভোগ করার সম্পূর্ণ অধিকার পেলাম। এখানকার কোমলমতি শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ-সুবিধা, চিকিৎসাসেবা ভোগ করার সুযোগ পেল। আইনশৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখানে সর্বদা সবাই আইনের শাসন পাচ্ছে। এসব ছিটমহলে এখন আর কোনো অপরাধী এসে অপরাধ করতে পারবে না। অপরাধীদের অভয়ারণ্য আজ থেকে উঠে গেল। সবাই বাংলাদেশের আইনকানুন মেনে চলতে বাধ্য হলো। সব ছিটমহলে সবার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। নিজ ভূমে পরবাসীর জীবন থেকে মুক্তি পেল। তাই আনন্দ প্রকাশের ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

কথা হয় গাড়াতি ছিটমহলের কলেজছাত্রী রোজালিয়া তাবাস্সুম রোজার সাথে। তিনি বলেন, এখন থেকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পড়াশুনা করার সুযোগ পেলাম। আর কখনো মিথ্যা পরিচয় দিয়ে স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালে যেতে হবে না। আমরা আজ থেকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হলাম। গাড়াতি ছিটমহলের অধিবাসী এমদাদুল হক সরকার বলেন, ছিটমহলে তৃণমূলপর্যায়ে কোনো ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। এখানে রাস্তাঘাট, কালভার্ট নেই। ছিটমহল অধিবাসী হিসেবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত ছিলাম। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অসুখ, বিসুখ হলে ডাক্তারের পরিবর্তে ঝাড়-ফুঁক বা কবিরাজের কাছে ছুটে যেতে হয়। তা ছাড়া ছিটমহলে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এ নীতিতে সবাই বিশ্বাসী ছিল। আমরা শুনেছি, বাংলাদেশ সরকার ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য দুইশত কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। সেই টাকা দিয়ে যাতে দ্রুত আমাদের অবহেলিত জনপদে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট তৈরি হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বর্তমানে ছিটমহল অধিবাসীদের মধ্যে জমাজমি বণ্টন নিয়ে নানা রকম আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেননা, ছিটমহলবাসী স্থানীয় শান্তি কমিটির মাধ্যমে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় করে আসছেন। এখন তাদের ক্রয়কৃত জমিজমার কী অবস্থা হবে এ আতঙ্ক সবার মধ্যে বিরাজমান। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। আবার ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। এসব ছিটমহলে অনেক ভূমিহীন রয়েছেন। এসব ভূমিহীন মানুষ অন্যের জমিতে বাড়িঘর তুলে জীবনযাপন করে আসছেন। তবে ছিটমহলে অনেক খাসজমি রয়েছে। খাসজমি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভোগ দখল করে খাচ্ছেন। জেলার রাজস্ব অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯০৫ সালের তফসিলভুক্ত সার্ভে রেকর্ডসের (সিএস) ভিত্তিতে ছিটমহলের অধিবাসীরা এসব ভূমির মালিকানা লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে স্যার রেডক্লিফের সীমান্ত নকশায় যেসব ভূখণ্ড বাদ পড়ে সেগুলোকে ছিটমহল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ভারতের ছিটমহল ভারতে এবং বাংলাদেশের ছিটমহল বাংলাদেশে ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল করা হতো। ১৯৮৮ সালের পর ছিটমহলে স্থানীয় শান্তি কমিটির সিলমোহরে সাদা কাগজে জমি কেনাবেচা শুরু করা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতা এবং দু’জন সাক্ষী সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন। সেটাই দলিল হিসেবে গণ্য করা হয়। এ দিকে ছিটমহলের জমাজমির ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: মাহমুদুল আলমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সরকারিভাবে যে রকম নির্দেশ আসবে, জমিজমা ঠিক সেভাবে বণ্টন করা হবে। পঞ্চগড় ও নীলফামারীর ছিটমহল বিনিময় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শালবাড়ি ছিটমহলের চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, শান্তি কমিটির মাধ্যমে যেভাবে জমি কেনাবেচা হয়েছে সেভাবেই জমিবণ্টন ও দখল থাকবে।

আজ থেকে ছিটমহলগুলো বাংলাদেশ হলো। এখন অবহেলিত ছিটমহলে রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট নির্মাণ করা প্রয়োজন। ছেলেমেয়ের পড়ালেখার জন্য নতুন করে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা গড়ে তোলার প্রয়োজন। জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। ছিটমহলের অধিবাসীদের সাথে বাংলাদেশীদের মধুর সম্পর্ক রয়েছে। কারো সাথে কোনো ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ নেই। সে হিসেবে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছে।

এ দিকে ডাবরভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক সরকারকে ছিটমহল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করার মজাই আলাদা। ছিটমহলবাসী আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তারা আজ থেকে সব অধিকার পেলেন। এখন তারা প্রয়োজনীয় সব সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। গাড়াতি ছিটমহলের চেয়ারম্যান আবদুর লতিফ সরকার বলেন, আজ আমি মহাখুশি, আনন্দে আত্মহারা। সরকার দীর্ঘ ৬৮ বছর পর আমাদের বঞ্চনার অবসান ঘটাল। আমরা গাড়াতি ছিটমহলের অধিবাসীরা মহা আনন্দে বৃহস্পতিবার রাতে পিকনিক, নাটক, গান-বাজনা করে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেছি। তিনি আরো বলেন, ছিটমহলগুলো সবার চোখে অবহেলিত স্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এখানে কোনো স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, ক্লিনিক, মাতৃসদন গড়ে ওঠার সুযোগ হয়নি। বর্তমান আমরা বাংলাদেশী নাগরিক। সে হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান তাড়াতাড়ি গড়ে তোলার জোর দাবি জানাছি। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির তথ্য ও ডকুমেন্টশন সম্পাদক ছিটমহল গবেষক এ এস এম ইউনুস আলী বলেন, ১৯০৫ সালে সিএস জরিপে যেভাবে নাগরিকেরা ভূমির মালিকানা লাভ করেন, ঠিক সেভাবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছিটমহল অধিবাসী যার যতটুকু জমি আছে তার ততটুকু জমি রেকর্ড করা যেতে পারে। পাশাপাশি খাস জমিগুলো ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে।

সূত্রে প্রকাশ, গতকাল ৩১ জুলাই মধ্য রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় করা হলো। ভারতের পক্ষে কোচবিহার জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মধ্যে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, মসজিদে ও মন্দিরে বিশেষ মুনাজাত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ছিটবাসীর উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

শুক্রবার বেলা ২টায় কুড়িগ্রামের দাসিয়ার ছড়াসহ ১১১টি ছিটমহলে উৎসব পালনের এ অভিন্ন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ছিটবাসীর মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।

বিকেলে নৌকাবাইচ, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি, বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মঈনুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে ছিটমহলের মানুষ লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মধ্যে ছিলেন। রাত ১২টার পর তারা বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ছিটবাসীর উন্নয়নে কাজ করব। যারা ছিটবাসীর মুক্তির জন্য দীর্ঘ দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। জাতীয় পার্টি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও তাদের অভিনন্দন জানাই।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি মঈনুল হক জানান, আমরা ছিটমহলবাসী অন্ধকার জীবন নিয়ে দীর্ঘ সময় পার করেছি। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে সদয় হয়ে ছিটমহল বিনিময় করেছেন। এ জন্য আমি ছিটবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। তারা যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহল ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি ছিটমহল, যা দুই দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হবে এসব ছিটবাসীর প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখেন। এতে আমরা ছিটবাসী দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার কথা ভুলে যেতে পারি।

ছিটবাসীর উৎসবে যোগ দেয়া একই ছিটের বাসিন্দা ও দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, আমরা আজ (গত) রাত থেকে স্বাধীন দেশের নাগরিক। আর কেউ বলতে পারবে না আমরা ছিটের মানুষ।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ছিটমহল বিনিময় দিবস। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ভেতর কুটি সিটে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিষ্টান্ন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

অবশেষে বহুল আলোচিত ৬৮ বছরের ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার ৩১ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে অবসান হলো। দুই দেশের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ খুঁজে পেলেন ঠিকানা। পেলেন নাগরিকত্ব। সেই সাথে বদলে গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র।

৩১ জুলাই মধ্যরাতের পরই প্রতিটি ছিটমহলের মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। রাতভর ছিটবাসী নেচে-গেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছিলেন ছিটমহলবাসী।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি মইনুল হক জানান, আজ আমাদের আনন্দে ভাসার সময়। আমরা সে জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ভারত পুনর্বাসনের জন্য কুচবিহারে আন্তর্জাতিক মানের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের জন্য মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা ও হলদিবাড়িতে চারতলা আবাসন গড়বে। প্রতিটি পরিবার ৮০০ থেকে ৯০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট পাবেন বলে জানা গেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ সরকারের ১১১টি ছিটমহলের উন্নয়নে বরাদ্দ রেখেছে ২০০ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল।

এ দিকে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর ছিটমহল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২ ছিটমহলবাসীর মধ্যে যৌথ গণনার সময় বাদ পড়া লোকজন ১ আগস্ট থেকে যে যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের নাগরিক বলে গণ্য হবেন, এমন তথ্য জানিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন ও প্রাপ্ত জরিপ সূত্রে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের ১১১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা ৪৪ হাজার ৪৪৯ জন। ভারতে যাওয়ার জন্য ৯৭৯ জন ফরম পূরণ করেছেন। এর মধ্যে ১৬৩ জন মুসলমানও রয়েছেন। তারা ১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো সময় ভারতে যেতে পারবেন। এ দিকে গত রোববার জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ১৩৫ নম্বর গোতামারী ছিটমহলের মাহবুবার রহমান ও রাশেদুল ইসলাম নামের দু’জন নাগরিক ভারতের নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। জানা যায়, ভারতের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি পরিবার ৮০০ থেকে ৯০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট পাবেন বলে সরকারি ঘোষণার পর এরা ফরম পূরণ করেন। এরই মধ্যে অনেকে ছিটমহলের বাসিন্দা হতে বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছেন। সদর উপজেলার ভেতর ছিটের বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ৬৮ বছর পর হলেও তারা নাগরিকত্ব পেয়েছেন এটিই তাদের সর্বোচ্চ পাওনা। এখন তাদের আর কেউ ছিটের মানুষ বলে ঘৃণা করবেন না।

অন্য দিকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে সাড়ে ১৪ হাজার নাগরিকের কেউ বাংলাদেশে আসতে চায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসন।

দেখা গেছে, জরিপকালীন বিভিন্ন কাজের জন্য লালমনিরহাটের ৫৯টি ছিটমহলের পাঁচ শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু ছিটমহলের বাইরে অবস্থান করায় জরিপে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। জরিপে বাদ পড়া বাঁশপচাই ছিটমহলের ২৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে শ্রীমতি ফুলমতি রানী (৬২), জুলেখা বেগম (৫৫), আনছার আলী (৪২), আনু বাদশা (২২), গোলে বেগম (৫৭) জানান, ২০১১ সালের জরিপের সময় আমরা ছিটমহলের বাইরে থাকায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি। ফলে বর্তমান জরিপেও (৬ থেকে ১৬ জুলাই ২০১৫) আমাদের নাম তালিকায় তোলা হয়নি। তাই আমরা আমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তা ছাড়া সরকারি সুযোগ-সুবিধা, জমিসংক্রান্ত বিষয়, চাকরি, লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও আমাদের ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন তারা।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, যেহেতু লালমনিরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি ছিটমহল রয়েছে তাই ছিটমহলে জরিপ চলাকালে ছোটখাটো কিছু ত্রুটি থাকতেই পারে। এগুলো চলতি সপ্তাহে ঠিক করে ফেলা হবে। ৩১ জুলাই মধ্য রাত থেকে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দীর্ঘ দিনের বন্দিদশা থেকে ছিটমহলের মানুষ মুক্তি পাবেন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবেন।



মন্তব্য চালু নেই