সমকামিতা বিষয়ে নতুন গবেষণা তথ্য

সমকামিতার কারণ বের করতে গিয়ে বারে বারেই হোঁচট খেয়েছেন গবেষকেরা। কারণ বিবর্তনের নিয়ম মানতে গেলে সমকামিতার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না। বিবর্তনের ধারায় বংশবৃদ্ধির যে সহজাত প্রবৃত্তি মানুষের মাঝে রয়েছে তার সাথে খাপ খায় না সমকামিতা। কিন্তু এরও রয়েছে একটি ব্যাখ্যা।

ইতোপূর্বে অনেক রকমের তত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে। কিছু তত্ব বলে, সমকামী মানুষেরা নিজেদের আত্মীয়দের প্রতি বেশ যত্নবান হয়, কিছু তত্ব বলে, পুরুষের মাঝে যে জিন সমকামিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, সেই একই জিন নারীর মাঝে থাকলে তিনি হয়ে থাকেন গর্ভধারণে বেশি সফল।

সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথের গবেষকেরা বেশ বিতর্কিত এক ধারণা উপস্থাপন করেন। তাদের মতে, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাইমেটের মাঝে সমকামিতার উদ্ভব হয়, কারণ এতে একে অপরের মাঝে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা সহজ হয়।

বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ধরে নেই বংশবৃদ্ধি করার মানসিকতাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক যেহেতু ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় এবং শারীরিক সুখ দেয়, এ কারণে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মাঝে একে ব্যবহার করে সামাজিক বন্ধন তৈরি এবং দৃঢ় করা হয়। এ ব্যাপারটি সমকামী জুটিদের মাঝেও দেখা যায়। বংশবৃদ্ধি সম্ভব না হলেও তাদের মাঝে বন্ধন থাকে দৃঢ়।

এ গবেষণায় ৯২ জন নারীকে প্রশ্ন করে দেখা হয় তারা সমকামী আচরণের প্রতি কতটা নমনীয়। যেমন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় একই লিঙ্গের কাউকে চুম্বন করতে তাদের কেমন লাগবে বা একই লিঙ্গের কেউ তাদের সাথে ফ্লার্ট করলে তাদের কেমন লাগবে।

এরপর গবেষকেরা এদের স্যালাইভায় (লালা) থাকা প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ পরিমাপ করেন। প্রোজেস্টেরন হলো সে হরমোন যা সামাজিক বন্ধনের সাথে সম্পর্কিত।

গবেষণায় পাওয়া যায়, যাদের শরীরে প্রোজেস্টেরনে মাত্রা বেশী, তারা সমকামিতার প্রতি বেশী উদার মনোভাব পোষণ করেন। গবেষকেরা মনে করেন, প্রোজেস্টেরনের কারণে মানুষ একে অন্যর সাথে সামাজিকতা বজায় রাখতে বেশী আগ্রহী হয় আর এ থেকে সমকামী এবং তার পাশাপাশি অসমকামী সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহী হয়।

গবেষণার অন্য পর্যায়ে ৫৯ জন মানুষ একটি পাজলের সমাধান করেন, যেখানে তিন ধরণের শূন্যস্থান পূরণ করতে দেওয়া হয়- friendship, sex এবং neutral।

গবেষণায় দেখা যায় যারা Friendship পাজলটির সমাধান করতে পারেন, অন্য দুই পাজল সমাধানকারীর তুলনায় তারা একই লিঙ্গের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে বেশী উদার হয়ে থাকেন। তারা সমকামী এবং অসমকামী উভয় ধরণের সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারেন।

তাদের এই গবেষণা অনেকের কাছে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্য মনে হলেও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেন। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের ডক্টর জেরার্ড কনওয়ের মতে, সমকামিতার সামাজিক উপকারিতা থাকতে পারে, কিন্তু এর সাথে প্রোজেস্টেরনের সংযোগ করাটা সম্ভবত বানোয়াট।

(মূল: Macrina Cooper-White, Huffington Post)



মন্তব্য চালু নেই