সম্মেলনে আলো ছড়াতে পারেন যে নারীরা

আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে নতুন মুখ হিসেবে বেশ কয়েকজন নারী দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কমপক্ষে ৭-৮ জন নারীর দলে অর্ন্তভুক্তি অনেকটাই নিশ্চিত। এক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ত্যাগকেই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নারী কোটার বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেও এবার নারী নেতৃত্বের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়।খবর পরিবর্তনের।

এর আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন চালুর শর্ত মেনে রাজনৈতিক দলগুলো গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে ২০২০ সালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পদে নারীদের রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত ৮ বছরে এ শর্ত পূরণে অন্য দলগুলো তেমন উদ্যোগী না হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। ওই নিবন্ধনের পর ২০০৯ ও ২০১২ সালে সম্মেলন করেছিল দলটি।

বর্তমানে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর ১২ সদস্যের মধ্যে নারী চারজন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩১ সদস্যের মধ্যে নারী সাতজন ও উপদেষ্টা পরিষদের ৩৪ জনের মধ্যে নারী দু’জন। শতকরা হিসাবে কমিটিতে নারী সদস্য ৭ দশমিক ৩৪ ভাগ। ফলে শর্ত পূরণ থেকে অনেক পিছিয়ে আছে দলটি। এ অবস্থায়ই শনি ও রোববার (২২ ও ২৩ অক্টোবর) ২০তম সম্মেলন করবে আওয়ামী লীগ।

তবে দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দলে নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে দলপ্রধান শেখ হাসিনার সদিচ্ছা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নারী তাদের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। ফলে এবারের সম্মেলনে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা অনেকাংশে বাড়তে পারে।

নেতারা বলছেন, এবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ৮১ সদস্যের বর্ধিত কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন করা হবে। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সদস্য থাকবেন।

এর মধ্যে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবার দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকই তার সর্বোচ্চ দলীয় পদ ছিল।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের মেয়ে চুমকি ২০১৩ সালে থেকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নারী মন্ত্রীদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন।

১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হলেও ২০০৮ সালে গাজীপুর-৫ আসনে নির্বাচিত হন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দলে গুরুত্বপূর্ণ পদের আলোচনায় রয়েছেন তারানা হালিমও। নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম এবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

টাঙ্গাইলের মেয়ে তারানা হালিম পাঁচ বছর বয়সেই নাটকে অভিনয় শুরু করেন। ছোটপর্দার একসময়ের জনপ্রিয় এ মুখ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকা বোর্ডে নবম স্থান অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াকালীন তিনি যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দলীয় নেতারা বলছেন, বিভিন্ন দায়িত্বে দক্ষতা প্রদর্শন করে আস্থা অর্জন করেছেন তারানা হালিম। তাই এবারের সম্মেলনে তিনি নিশ্চিত পদ পাচ্ছেন।

২০০৩ সাল থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা আশরাফুন নেসা মোশাররফেরও দলে পদপ্রাপ্তি অনেকটাই নিশ্চিত। তার স্বামী ডা. মো. মোশাররফ হোসেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর| তিনি মুজিবনগর সরকারের স্বাস্থ্য পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন| প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য মোশাররফ হোসেন স্বাধীনতা পদকও পেয়েছেন। ফলে রাজনৈতিক দক্ষতা ও পারিবারিক ত্যাগের কারণে সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফুন নেসাকে এবার মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

২০০৪ সাল থেকে যুব মহিলা লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন নাজমা আক্তার। আওয়ামী লীগের সহযোগী এ সংগঠনটিতে দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় তাকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হচ্ছে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের পদপ্রাপ্তির গুঞ্জনও রয়েছে। মূলত: পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছেন অপু উকিল।

যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা জানিয়েছেন, সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা আওয়ামী লীগে জায়গা পাবেন বলেই এক যুগ হয়ে যাওয়ার পরও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

দুইবারের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পিও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাপ্পী দলের দুঃসময়েও সক্রিয় ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালেরও এপিপি ছিলেন তিনি। সংসদে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। ঢাকার প্রভাবশালী নেত্রী সানজিদা খানমেরও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত।

এছাড়া গাইবান্ধার সংসদ সদস্য ও হুইপ মাহবুব আরা গিনি, মুন্সিগঞ্জের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, নুরুজাহান বেগম মুক্তা, মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, ডা. নুজহাত চৌধুরীও এবার কমিটিতে আসতে পারেন।

আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছাত্রলীগের দুঃসময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মারুফা আক্তার পপির জায়গা হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। রাজনীতিতে ত্যাগ থাকার পরও এতদিন তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যায়নি। ফলে এবার তাকে মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা রয়েছে দলীয় হাইকমান্ডের।

শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার বেশ কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। দলীয় সভা-সেমিনারে প্রায়ই অংশ নেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রচারণা দলের সদস্য হিসেবে শমী কায়সার উত্তরাঞ্চলে সভা-সমাবেশে অংশ নেন।

এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শমী কায়সারের মা পান্না কায়সার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতিতেও সক্রিয়তা ও পারিবারিক অবস্থানের কারণে তিনি এবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে পারেন।

এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার আব্দুল আলিমের মেয়ে ডাক্তার নুসরাত জাহান সম্পাও কমিটিতে স্থান পেতে পারেন বলে জানা গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শমী কায়সারের মতো তিনিও সোচ্চার।

নতুন কমিটিতে নারীর অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, ‘এটা তো সম্মেলনের আগে বলা মুশকিল, সম্মেলন হলেই বোঝা যাবে। তবে আওয়ামী লীগের কমিটিতে যত নারী আছেন অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে এত নারী নেই। আওয়ামী লীগ যোগ্য নারীদের মূল্যায়ন করে।’

সাবেক এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নেত্রী নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। এবারের সম্মেলনে নিশ্চয়ই নারীর সংখ্যা বাড়বে, নতুন নারী আসবে।’



মন্তব্য চালু নেই