সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে যাত্রীবাহী জাহাজ

দেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যাত্রীবাহী নৌযান।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) অধীনে উপকূলীয় এলাকায় চলাচলের লক্ষ্যে নির্মিয়মান তিনতলা বিশিষ্ট এই আধুনিক জাহাজের ধারণক্ষমতা ৭০০ জন।

নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শনিবার এর ‘কিল লেইং ও বটম কনস্ট্রাকশন’ (মূল অবকাঠামো) কাজের উদ্বোধন করেছেন। সরকারের অর্থায়নে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জাহাজটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থ্রি এ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড।

বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, স্বাভাবিক বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উপকূলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত এই নৌযান চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল নৌপথে চলাচল করবে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসির তত্ত্বাবধানে উপকূলীয় এলাকায় চলাচলরত তিনটি যাত্রীবাহী জাহাজ থাকলেও সেগুলো বিদেশ থেকে ক্রয় করা। এর দুটির অর্থনৈতিক আয়ূস্কাল ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অপরটিও ১৫ বছরের পুরানা।

উপকূলে সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের স্বার্থে ১৯৬০ সালে জার্মানী থেকে প্রথম কেনা হয়েছিল ‘এমভি আলাউদ্দিন’ ও ‘এমভি মনিরুল হক’। এর দীর্ঘ চার দশক পর ২০০০ সালে চীন থেকে ‘এমভি বারো আউলিয়া’ নামে আরেকটি জাহাজ ক্রয় করে বিআইডব্লিউটিসি।

যাত্রীচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এবং বয়সের কারণে জাহাজগুলো বারবার মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় উপকূলে আরো একাধিক নতুন জাহাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

তবে বিদেশ থেকে আমদানি করতে ব্যয় অনেক বেশি হওয়ার কারণে দেশেই এই জাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর উন্মুক্ত দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যাদেশ দেয় বিআইডব্লিউটিসি।

এ জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার নয়ানগরে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্রি এ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের নিজস্ব শিপইয়ার্ডে। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শনিবার শিপইয়ার্ড পরিদর্শন এবং জাহাজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক বিএন, বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) ফারুক আহমেদ ও গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা বিলকিস।

অনুষ্ঠানে থ্রি এ্যাঙ্গেল মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সোহেল ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম রাসেল উপস্থিত ছিলেন।

নতুন এই যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী বলেন, সরকার নৌ-দুর্ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বাড়াতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে উপকূলের যাত্রীদের জন্য নতুন এই জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণশিল্প এগিয়ে গেছে। দেশের মেধাবী নৌ স্থপতি ও নৌ প্রকৌশলীরা তাঁদের মেধা ও মনন দিয়ে বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ করছেন। এখন আর বিদেশ থেকে জাহাজ আমদানি করতে হয় না। বরং বাংলাদেশ বিদেশে জাহাজ রপ্তানি করছে। তাই রাষ্ট্রের ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই এই জাহাজ তৈরি করা হচ্ছে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০ মাসের মধ্যে জাহাজের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। তবে ১৭ মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করে বিআইডব্লিউটিসির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই