সরকারি দল-বিরোধী দল মিলেমিশে টিআইবির সমালোচনা

দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ব্যাপক সমালোচনা করেছেন সরকারি দল ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা। বক্তব্যের জন্য টিআইবিকে ক্ষমা চাইতে হবে. তাদের প্রিভিলাইজড কমিটিতে ডেকে আনতে হবে- এমন দাবি জানানোর পাশপাশি সাংসদরা বলেছেন, তাদের (টিআইবি) প্রতিজ্ঞা করতে হবে তারা পার্লামেন্ট নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো মন্তব্য করবে না। অবশ্য যে বক্তব্যের জন্য টিআইবির এতো সমালোচনা হলো সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য, এটি তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান নয়।

সোমবার রাতে দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জামালপুর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, মইনুদ্দিন খান বাদল, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী টিআইবির ব্যাপক সমালোচনা করেন। এ সময় সংসদে সভাপতির চেয়ারে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রওশন এরশাদ বলেন, তারা কি তাদের গণ্ডির মধ্যে থেকেই সংসদ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছে? টিআইবি এই সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালা বলেছে। এটা কি তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে থেকেই বলেছে? টিআইবি বিরোধী দলকে কথিত বিরোধী দল বলেছে, তারা কোন ধরনের বিরোধী দল চেয়েছিল। আগের বিরোধী দল এই সংসদে ফাইল ছোড়াছুড়ি করেছিল, নেতাকর্মীদের নিয়ে গালিগালাজ করতো, এমনকি প্রয়াত নেতাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হতো। তারা হয়তো এ ধরনের বিরোধী দলই চেয়েছিল।

বিরোধী দলীয় নেতা আরো বলেন, টিআইবির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, নতুন নির্বাচন দাবি করেছে, এটা তাদের কর্মক্ষেত্রের মধ্যে কতটুক যৌক্তিক?

ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, টিআইবি কি আইনের ঊর্ধ্বে? রাষ্ট্র, সংসদ কি এতই অসহায়? তারা কি এর বাইরে? না, তারা আইন, সংবিধান ও পার্লামেন্টের অধীন। এক ইঞ্চি তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তারা যে ধরনের মন্তব্য করেছে, তার জন্য অবিলম্বে ক্ষমা চাইবে এবং বলবে আর কখনো পার্লামেন্ট নিয়ে কোন মন্তব্য করবে না। সাংবিধানিকভাবে তাদের এমন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি যে, তারা পার্লামেন্ট-সংবিধানের অবজ্ঞা করবে। এসব করলে তারা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। এটা শেখ হাসিনা চাইলেও পারবে না। সরকার আসবে যাবে, কিন্তু সংবিধান থাকবে। পার্লামেন্ট দেশ চালায়। পার্লামেন্টের সংবিধানকে অবজ্ঞা করলে আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে অখ্যায়িত করা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ টিআইবির মন্তব্যের বিপরীতে বলেন, কোন মুহূর্তে টিআইবি এ কথা বলেছে তা আগে জানতে হবে। যখন প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে দারুণভাবে উপস্থাপন করছে এবং চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কারের মতো অর্জন তার ঝুলিতে আসছে। এখানে টিআইবি কী চায়? তারা বলেছে, দেশে সব সমস্যার সমাধান হবে যখন দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তার মানে এটা খুব সহজে বোঝা যায় যে তারা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের। কারণ, খালেদা জিয়াও দেশে নির্বাচন চায়। কারণ খালেদা যখন বিদেশে বসে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তখন তো টিআইবি কিছু বলে না, যখন তারা দেশে জ্বালাও পোড়াও করে বেড়াচ্ছে তখন তো কিছু বলে না। কেন?

টিআইবির মন্তব্যের জন্য তাদের প্রিভিলাইজড কমিটিতে হাজির করার জন্য অনুরোধ জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তারা কীভাবে এসব কাগজ পায়, কোথা থেকে এসব তথ্য জানে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, বলেন তোফায়েল।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা পুতুল নাচ নাচি না। আমরা সংসদে নাটক করতে আসি নাই। পুতুল নাচ আপনারাই নাচেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দেশের পদকে ভূষিত হয়। তখন তো কেউ আপনারা জানেন না, কোনো কথাও বলেন না। বিদেশি সূতার টানে আপনারা নাচেন। আমরা নাচি না।

টিআইবিকে সাবধান হয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর টিআইবি কার্যালয়ে দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন নিয়ে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, সংসদের অধিবেশন যখন চলে তখন আমাদের কাছে পুতুল নাচের নাট্যশালার মতো মনে হয়। ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য দাঁড়িয়েছে জাতীয় সংসদে। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশের রাজপথ ও সংসদকে অকার্যকর করার জন্য টিআইবি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত করছে। ক্ষমা না চাইলে টিআইবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ২৯ অক্টোবর মন্তব্য ছিল ১৪ দলের মুখপাত্র মো. নাসিমের।



মন্তব্য চালু নেই