সরকারি দল যেসব সুবিধা পাবে দলীয় প্রতীকে

সরকার স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরেই দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন করতে তড়িঘরি করে এ অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং বর্তমান আইনটির সংশোধনের অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এতে সরকারদলীয় প্রার্থীরা বিভিন্ন ‘সুবিধা’ ভোগ করবেন বলে অভিযোগ করে এ উদ্যোগ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদেও অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা বাচ্চু ভূইয়া, ফিরোজ আহমেদ, শ্যামলী শীল, তাসলিমা আখতার ও আবুল হাসান রুবেলের এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরেই নির্বাচন নিয়ে ঘোষণায়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বর্তমানের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যও সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই নতুন এই অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ বাতিল করতে হবে।

সরকারের বর্তমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, ‘ইতোপূর্বে এই নির্বাচন নির্দলীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতো। এতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ ছিল না বা নাই। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই এতে অংশগ্রহণ করতেন এবং নির্বাচিতও হতেন। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে না হবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল স্থানীয় পর্যায়ে যারা সামাজিকভাবে সক্রিয়, বিভিন্ন জনহিতকর কাজে যারা সংশ্লিষ্ট তারা দলভুক্ত হোন বা না হোন, যেন নির্বাচিত হবার সুযোগ পান। প্রশ্নটি যেহেতু স্থানীয় উন্নয়নের, স্থানীয় সমস্যা মোকাবেলার কাজেই দলীয় বিবেচনার চাইতে যাতে স্থানীয় বিবেচনাই প্রাধান্য পায়। এতে করে এমনকি দলীয় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের পরিবর্তে যাতে স্থানীয় বিবেচনা গুরুত্ব পায়। এর বিপরীতে কেউ রাজনৈতিক আদর্শ ও সামগ্রিক উন্নয়ন নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবেই স্থানীয় উন্নয়নের নীতি প্রণীত হবার গুরুত্বকে হাজির করতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য লোক বাছাইয়ের চ্যালেঞ্জটা তবে রাজনৈতিক দলের। স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা যাতে জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে গৃহীত হতে না পারে তার জন্য রাজনৈতিক চিন্তার সামগ্রিকতায় তাকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারেন। এমনকি দুর্নীতি রোধে কেন্দ্রীয় নজরদারির সুবিধার কথাও আসতে পারে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘নীতিগতভাবে স্থানীয় সরকারের বিশেষত্ব ও আপেক্ষিক স্বাধীনতার ধারণা প্রত্যাখ্যান করে তাকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিম্নতম অধীনস্ত সংস্থা হিসেবে হাজির করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করা হয়েছে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে সরকারি দলের নেতাদের যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে তার সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়-

১) এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশেষতঃ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবার মাধ্যমে একাধিক প্রার্থীজনিত জটিলতা এড়ানো যাবে। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী নির্ধারণ করা যাবে এবং কেউ তা না মানলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।
২) বিরোধীয় দলীয় প্রার্থীদের সহজেই চি‎হ্নিত করা যাবে এবং তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
৩) দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে প্রশাসনের ব্যক্তিদেরকে সরকারদলীয় প্রার্থী তা চি‎হ্নিত করতে সুবিধা হবে।
৪) বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা এবং উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচিত হবার পর
তাদের বহিষ্কার করে যেভাবে প্রশাসক নিয়োগ করতে হেছে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

অর্থাৎ বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বিদ্যমান যে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামো শাসক দলগুলোতে বিদ্যমান তাকে আরো শক্তিশালী করার পক্ষে এই সিদ্ধান্তকে কাজে লাগানো, বিরোধী দল এমনকি স্থানীয় পর্যায়েও যাতে জনপ্রতিনিধিত্ব লাভ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা এবং রাষ্ট্রকে দলীয় স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রয়োজনেই স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এই প্রস্তাব রাষ্ট্র ও সমাজের রাজনৈতিককীকরণের নয় বরং দলীয়করণের এবং কর্তৃত্ববাদী রূপান্তরেরই অংশ।’



মন্তব্য চালু নেই