‘সরকারের কর্মক্ষমতার অভাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেওয়া স্থগিত’

সরকারের ‘কর্মক্ষমতা’ ও ‘দূরদৃষ্টি’র অভাবে মালয়েশিয়া ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়া স্থগিত করেছে— এমন ইঙ্গিত দিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চ ও স্মারক সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া জাতীয় স্মৃতি কমিটি’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খবরের কাগজে পড়ে খুব খুশি হয়েছিলাম যে মালয়েশিয়া ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে। যে সরকারই হোক আমাদের দেশে ১৫ লাখ শ্রমিক বিদেশে যাবে এটা সকলের জন্য আনন্দের বিষয়। কিন্তু আজকে (শনিবার) খবর পেয়েছি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়া চুক্তি তারা বাতিল করে দিয়েছেন। এত কি বোঝা যায়, সরকারের দক্ষতা, কর্মক্ষমতা, দূরদৃষ্টি এগুলোর উপরইতো সবকিছু নির্ভর করে। আজকে কারা এই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা কারা তাদের চিহ্নিত করা উচিত। সরকারের উচিত হবে এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘এর মূল ও প্রধান কারণ হলো জবাবদিহিতা নেই। সরকারের কারো কাছে জবাবদিহিতা নেই। কারো কাছে যদি সরকারকে জবাবদিহিতা না করতে হয়, আর যে বিরোধী দল আছে, মাশআল্লাহ তাদের কাছে তো জবাবদিহিতার প্রয়োজন পড়ে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। এই পর্যন্ত কোনোটার বিচার হয়নি। এখন তারা থাবা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপরে। মানে শেষ, আমাদের রিজার্ভ অ্যাকাউন্টের উপরে হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশের থেকে বাইরে চলে গেছে। আমাদের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন দেশে যে আমাদের টাকা জমা ছিল— আমেরিকা, ফিলিপাইনে এগুলোর নিয়মে আছে ফরেন এক্সচেঞ্জের টাকা বিভিন্ন জায়গার রাখা হয়। এক জায়গায় রাখা হয় না। এটা কি কেউ বিশ্বাস করবে বাংলাদেশে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া হ্যাকারদের মাধ্যমে টাকা লুণ্ঠন হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ এটা বিশ্বাস করবে না।

তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কারগো বিমান বন্ধ করে দিয়েছে। একশ’ কোটি যে রফতানি হতো এগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া আমাদের সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে মানুষের কি অবস্থা হবে? বাংলাদেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। দেশে এখন এমন একটি শূন্যতা বিরাজ করছে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই এই নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রহীন সমাজে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদের উত্থান হতে বাধ্য। এখন উপলব্ধি করতে হবে গণতন্ত্রবিহীন সমাজটাকে কীভাবে অন্যশক্তি এসে এই শূন্যতাটাকে পূরণ করে, দেশে গণতন্ত্রকে বিনষ্ট করে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে এ সংকট কোনো দল নয়, এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপি, কোনো রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়। এটা সমস্ত জাতির সমস্যা। ঐক্যবদ্ধভাবে এর সমাধান করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি মনে করে পুলিশ আর র‌্যাব দিয়ে এটা মোকাবিলা করতে পারবেন তাহলে তারা ভুল করছেন। এই ভুলের মাশুল দেশের মানুষকে দিতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করি। সরকার যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আমরা সহযোগিতা করব।’

‘সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে, আসুন এই সংকট নিরসনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি। এই জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এখনও সময় আছে উদ্যোগ গ্রহণ করুন। ক্ষমতার মোহে আপনারা দেশটাকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আশা করি আপনারা দিবেন না।’ যোগ করনে তিনি।

‘সরকার যদি তার না করে তাহলে সকল গণতান্ত্রিকশক্তি সুশীল, ছাত্র সমাজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরে আনার আন্দোলনকে সফল করা হবে’— এমন আহ্বান জানান মওদুদ।

এ সময় তিনি মশিয়ূর রহমান যাদুর মিয়ার স্মৃতিচারণ করেন।

সংগঠনের আহ্বায়ক মো. শামসুল হকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন প্রমুখ।

এছাড়াও যাদু মিয়ার নাতী বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, কন্যা রিতা রহমান বক্তব্য দেন।



মন্তব্য চালু নেই