সাংবাদিক হতে চান নির্যাতিত ববিতা !

সাংবাদিক হতে চান নড়াইলের শালবরাত গ্রামে গাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহবধূ ববিতা। নির্যাতিত হওয়ার পর গণমাধ্যমের ভূমিকায় তিনি অভিভূত ও কৃতজ্ঞ। বারবার তার বক্তব্যে ঝরে পড়ছে সেই কৃতজ্ঞতার ভাষা। সাংবাদিকদের প্রতি এখন বিশেষ অনুপ্রাণিত তিনি। আর সেই সূত্র থেকেই তিনি হতে চান এক সাহসী সাংবাদিক। যে সাংবাদিকের কলমে উঠে আসবে সমাজের নানা অনিয়ম ও অন্যায়।

গাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহবধূ ববিতা খানম (২০) নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী। তিনি তার সে আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার স্বাভাবিক ইচ্ছা ছিল, আমি সাংবাদিক হব। দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াব। আর সমাজের খারাপ কাজ তা তুলে ধরব। আর আমার এই (গাছে বেঁধে নির্যাতন) ঘটনার পরে আকাঙ্ক্ষাটা আরো বেড়ে গেছে। যদি সুযোগ পাই তাহলে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করব। সমাজে এমন দৃশ্য যেন আর কখনো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখব। এসব খারাপ কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।’

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ববিতা জানান, উচ্চমাধ্যমিকে তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। বর্তমানে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত। শারীরিকভাবে মারাত্মক আহত ববিতা সুস্থ হয়ে আবারও লেখাপড়া করবেন এবং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার সুযোগ পাবেন- এমন প্রত্যাশা তার পরিবারেরও।

ববিতার ছোট বোন কাশিপুর আম্বিকাচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিসরী খানম বলেন, ‘আপুর শখ সাংবাদিক হওয়ার। আর সাংবাদিকরা যেভাবে আপুর পাশে দাঁড়িয়েছেন, কলম ধরেছেন, তাতে আপুর সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা আরো প্রবল হয়েছে। ’

ববিতার ভাবি জলি বেগম জানান, ববিতা লেখাপড়ার পাশাপাশি আনসারে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পারদর্শী। কিন্তু ববিতার ওপর যে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে, সেই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠবে ববিতা!

ববিতার বাবা লোহাগড়ার এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্যা বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর থেকে আমি এমন নির্যাতন দেখিনি। বাবা হয়ে মেয়ের ওপর এ নির্যাতন সহ্য করা যায় না। আমার মেয়ের কোমরে এবং ডান হাতে কী যে নির্যাতন করা হয়েছে, তা না দেখলে বোঝা যাবে না। আর কোনো নারী যেন এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।’

ববিতার বাবা জানান, যৌতুক হিসেবে তার কাছে ববিতার শ্বশুর ৫ লাখ টাকা, মোটরসাইকেলসহ আসবাব দাবি করে আসছিলেন। সেই দাবি পূরণ করতে না পারায় ববিতাকে মেনে নিতে পারেনি। অবশেষে ববিতাকে গাছে বেঁধে তার শরীরে লাঠিপেটাসহ নির্মম নির্যাতন করা হয়।

ববিতার মা খাদিজা বেগম জানান, তাদের অভাবী সংসারে ববিতার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ৩০ এপ্রিল নির্যাতনের পরে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ ব্যয়ভার বহন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমার একটাই দাবি, আমার মেয়েকে মারধরের সঠিক বিচার চাই।’

ববিতার ভাই হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আসামিপক্ষের লোকজন আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। মোবাইল ফোনে আমাদের ভিটেবাড়ি ছাড়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের (ব্র্যাক) পক্ষ থেকে নির্যাতিত ববিতাকে আইনি সহায়তা দেব।’ এদিকে ববিতার প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই