সাইকেল চালানোর রাস্তা চায় অর্পিতা

ফারিহা জাহান অর্পিতা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। নিরাপদে নিয়মিত স্কুলে যেতে চায় সে। কিন্তু স্কুলে যেতে হলে যানবাহনে যেতে হয় তাকে। তাতে ওঠাও দায়! রিকশার ভাড়াও বেশি। তাই সাইকেলে যাওয়ার আগ্রহ ক্ষুদে এ শিক্ষার্থীর। তাতেও বিপত্তি! অস্বচ্ছল বাবার সামর্থ নেই তাকে সাইকেল কিনে দেয়ার। পিতার কাছে না পেয়ে একটি সাইকেল আবদার করে চিঠি লেখে নগরপিতা সাঈদ খোকনের কাছে। সাঈদ খোকনও হতাশ করেননি তাকে। অর্পিতার হাতে লাল টকটকে একটি সাইকেল তুলে দিয়েছেন তিনি।

নগরপিতা হিসেবে অর্পিতাকে সাইকেল উপহার দিয়ে কৃতিত্ব পেয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মেয়র যে কারণে সাইকেল দিয়েছেন অর্পিতার সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে কি? ঘুম থেকে ওঠে সাইকেলটির প্যান্ডেল ঘুরিয়ে নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে কি? নাকি এই সাইকেলটিই আবার বয়ে আনবে অর্পিতার জীবনে অজানা কোনো অধ্যায়!

অর্পিতার মতো অন্য শিশুরাও যাতে স্কুল যাতায়াতের সুযোগ পায় নগরপিতা হিসেবে মেয়র সাঈদ খোকনকে সে ব্যবস্থাও করতে হবে বলে মনে করছেন নগরবিদরা। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেন, অর্পিতাকে সাইকেল দিয়ে মেয়র একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। তবে তাকে সেই সাইকেল চালানোর রাস্তাও দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আসলে মেয়র নিজেই নগরীতে সাইকেল ও সাইকেল লেনের উপকারিতা বোঝেন। এখন তার পরবর্তী কাজ হবে অর্পিতাকে নিরাপদে স্কুলে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দেয়া। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে ও নিরাপদে চলাচল করার জন্য পৃথক সাইকেল লেনের কোনো বিকল্প নেই।’

‘এমনিতে যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। এছাড়া ফুটপাত দখল হওয়ায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ কেউ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না। এজন্য সিটি করপোরেশনকে প্রথমে জনসাধারণের চলার পথ (ফুটপাত) উন্মুক্ত করতে হবে। আর সাইকেল চালানোর জন্য প্রয়োজন সাইকেল লেন। নিরাপদ সড়ক এবং পৃথক সাইকেল লেন বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। তাহলে শুধু অর্পিতা নয়, অনেক শিক্ষার্থীই সাইকেলে স্কুলে যেতে পারবে’ বলেন তিনি।

ইউথ ভয়েস অব বাংলাদেশের সভাপতি জাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় নগরীর সড়কগুলোতে সাইকেল লেন স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছি। যেটা এখন মেয়র নিজেই বুঝতে পারছেন। আসলে অর্পিতাদের শুধু সাইকেল দিলেই হবে না, তাদের চলার উপযোগী রাস্তাও দিতে হবে। তাহলে তার এ উদ্যোগ সার্থক হবে।

তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সড়কে সাইকেল লেন রয়েছে। তারা সাইকেলে চড়েই কর্মস্থলে যান। এতে যেমন খরচ কম তেমনি পরিবেশ বান্ধবও। ঢাকার সড়কগুলোতে যদি সাইকেল লেন স্থাপন করা যায় তাহলে দুর্ঘটনা কমবে।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, অর্পিতাকে যে সাইকেল দেয়া হয়েছে সে সাইকেল চালানোর উপযোগী রাস্তা কি তাকে দেয়া হয়েছে? যদি নাই দেয়া হয় তাহলে এই সাইকেল দেয়ার সার্থকতা কি?

সুন্দর ঢাকায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য আবদার করে মেয়র সাঈদ খোকনের কাছ থেকে সাইকেল পেলেও নিরাপদ সড়কের অভাবে এখনো নগরীতে ঘুরে বেড়াতে পারেনি অর্পিতা। বাসার চার দেয়ালের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে অর্পিতার সাইকেল।

মেয়র সাঈদ খোকনওকাছে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে নগরীর যে অবস্থা তাতে শুধু অর্পিতা নয়, তার চেয়ে বড়রাও নগরীর সড়কে নিরাপদে সাইকেল চালাতে পারবে না। কারণ সড়কগুলো এখনো সাইকেল উপযোগী নয়।

তবে সিটি করপোরেশন সড়কে সাইকেল লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাইকেল লেন তৈরি করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে নগরীর সব সড়কে সাইকেল লেন স্থাপন করা হবে।

মেয়র বলেন, সাইকেল চালানোর জন্য ব্যাপক সচেতনা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যাতায়াতে সাইকেলের ওপর নির্ভরতা বাড়ালে দুর্ভোগ ও ব্যয় দুটোই কমবে। নগরীর সড়কগুলোও ভালো থাকবে। জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই