সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে চায় ৫ পাকিস্তানি!

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ৫ প্রভাবশালী পাকিস্তানি নাগরিক সাক্ষ্য দিতে চায় দাবি করে খবর প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বুধবার, ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদক ডেভিড বার্গম্যানের এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে তারা। তবে, ওই প্রতিবেদনে ট্রাইব্যুনালের তরফের কোন বক্তব্য নেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ট্র্যাইবুনালের একজন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।

এরইমধ্যে আদালতে রিভিউ আবেদন করেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ৫ পাকিস্তানি নাগরিক হলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরো, জাতীয় পরিষদের সাবেক মন্ত্রী ইশাক খান খাকবানি এবং ডন মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপার্সন হারুন সাইগল। আর বাকি দুজন ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

পাকিস্তানের ‘সাক্ষীদের দাবি’র বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পাঁচ পাকিস্তানি নাগরিক ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে চাইলেও আদালত তা খারিজ করে দিয়ে বলেছে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হয়ে ৫ জনের বেশি সাক্ষ্য দিতে পারবেন না। তারপর তাদের পক্ষ থেকে একটি খসড়া হলফনামা জমা দেয়া হলে তাও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে আপিল ডিভিশন খারিজ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন পাকিস্তানিরা।

BzanYTM

পাকিস্তানি ব্যবসায়ী মুনীব আর্জমান্দ খানের দাবি তার সাক্ষ্য ‘আদালতের পুরো কার্যবিবরণীকেই পাল্টে দিত।’ তার দাবি, ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় আক্রমণ করার চারদিন পর অর্থাৎ ২৯শে মার্চ তিনি ছেলেবেলার বন্ধু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে করাচি বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। এরপর হারুনদের বাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন সপ্তাহ ওই বাড়িতে কাটানোর পর পড়াশোনার জন্য সালাউদ্দিন লাহোর চলে যান।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৩ই এপ্রিল ও ১৭ই এপ্রিল সংঘটিত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে মুনীবের দাবি, সাকা চৌধুরীর করাচিতে কাটানো ওই তিন সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার দাবি, ‘আমরা কোন কিছু সাজিয়ে বলছি না। যা বলছি সবই সত্য।’

১৯৭১ সালে ২০ বছর বয়স ছিল আরেক পাকিস্তানি হারুন সাইগালের। তারও দাবি, ওই সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাদের বাড়িতেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘মার্চের শেষের দিক থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দুই-তিন সপ্তাহ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমাদের বাড়িতে ছিলেন। খেতে বসে বাবা-মা-বোন সবাই মিলে আমরা একসঙ্গে গল্প করতাম।’

হারুন সাইগালও দাবি করেন, ‘এটা সত্য। আদালত মঞ্জুর করলে কারও জীবন বাঁচাতে অবশ্যই আমি সাক্ষ্য দিতে বাংলাদেশে আসতাম।’

article-d38003d8-236d-43a4-8c5b-2bc035ea76f6-6VCa59cOCHSK2-804_634x462

ছবি: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে (ফাইল ছবি/ ডেইলি মেইল)

পাকিস্তানের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরোও দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের ওই সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী করাচিতে ছিলেন। তার দাবি, ‘লাহোর যাওয়ার আগে তিনি (সালাউদ্দিন) প্রায়ই আমার সঙ্গে দেখা করতেন।’

তার অভিযোগ, ‘এটি এক নিষ্পাপ লোককে দোষী সাব্যস্ত এবং অবিচার করার চরম রূপ। মিয়া সুমরোর দাবি, ‘ন্যায়বিচারের নামে হলেও সাক্ষীদের উপস্থিত হওয়ার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন আর হলফনামার আওতায় যেকোনসময় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আমি প্রস্তুত।’

Salauddin-Quader-afp-640x480

ছবি: আদালতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (ফাইল ছবি/এএফপি)

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের এপ্রিলে সংঘটিত যে ৪টি অপরাধের জন্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেময়ে তিনি করাচিতে ছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই ৫ পাকিস্তানি নাগরিক। একাত্তরের মুত্তিযুদ্ধের সময়কার ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের হাতে অনেকে হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীই হবেন প্রথম বিএনপি নেতা যার ফাঁসি কার্যকর হবে। তবে এখন পর্যন্ত দলটির তরফে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেছে আল জাজিরা।

সূত্র: আল-জাজিরা



মন্তব্য চালু নেই