সাকা-মুজাহিদ-নিজামীর মামলার উত্তাপ সুপ্রিম কোর্টে

দীর্ঘ দেড় মাসের বাৎসরিক অবকাশকালীন ছুটি শেষে রোববার খুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত খোলার পরে সোমবার দ্বিতীয় দিন থেকেই সাকা চৌধুরী-মুজাহিদ-নিজামীর মতো কয়েকটি হেভিওয়েট মামলার শুনানিতে উত্তাপ বাড়বে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে। এই সময় সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি থাকবে সর্বোচ্চ আদালতের দিকে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামীকাল ২ নভেম্বর ধার্য রয়েছে।

এ ছাড়া নিজামী-মুজাহিদের আইনজীবীদের হয়রানি বন্ধের আবেদনের শুনানি, সাকা চৌধুরীর পক্ষে পাঁচ বিদেশিসহ আটজনের সাক্ষ্য দেওয়ার আবেদনের শুনানি, নাশকতার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আত্মসমর্পণের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের শুনানিও ২ নভেম্বর হবে।

একই দিনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপনির্বাচনের প্রার্থী কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ৩ নভেম্বর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানি শুরু হবে। জামায়াতের আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে নভেম্বর মাসেই।

এসব বড় মামলা নিয়ে আদালত অঙ্গনের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ময়দানও উত্তপ্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ : ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানি ২ নভেম্বর।

ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচতে এটাই তাদের শেষ আইনি লড়াইয়ের সুযোগ।

যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘রিভিউ শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা যেসব যুক্তি তুলে ধরবেন, সে বিষয়ে কোনো আদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমি আপিল বিভাগের রায় পড়ে এটাই বুঝেছি। তবে এ বিষয়ে শেষ কথা বলার এখতিয়ার আদালতের।’

ফৌজদারি মামলায় রিভিউ আবেদন গ্রহণের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করি রিভিউয়েও সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকবে।’

তবে আসামিদের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘রিভিউ শুনানিতে যদি সাক্ষ্য-প্রমাণের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড হয়তো টিকবে না।’

এর আগে গত ১৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের রিভিউ চেয়ে আপিল বিভাগে পৃথকভাবে দুটি আবেদন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী।

মোট ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন মুজাহিদ। রিভিউয়ের পেপারবুক দাখিল করা হয়েছে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার।

অন্যদিকে সাকা চৌধুরী তার মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন।

রিভিউ আবেদনের বিষয় নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

নিজামীর আপিল শুনানি : ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানি ৩ নভেম্বর শুরু হবে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ।

রায়ে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করার অপরাধে রায়ে নিজামীর ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। আটটির মধ্যে বাকি ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার দায়ে তাকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

বাকি আট অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তকে ওই সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ২৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন নিজামী। মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে এ আপিল করা হয়।

কাদের সিদ্দিকীর রিটের শুনানি : টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে ২ নভেম্বর আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৭ অক্টোবর টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ব্যক্তিগত ক্ষমতায় শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী।

এর আগে গত ২১ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

গত ২৬ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গত ২০ অক্টোবর টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই