সাগরে নিম্নচাপ : সংকেত বেড়ে ৪

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ (তিন) নম্বর সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪ (চার) নম্বর হুঁশিয়ারি স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পাঠানো এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় ভারি বর্ষণের সঙ্গে ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তার নাম হবে ‘নাডা’।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কি. মি পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কি.মি পশ্চিমে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮০০ কি.মি দক্ষিণ পশ্চিম ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮২০ কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কি.মি এর মধ্যে বাতাসের টানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কি.মি যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কি.মি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর উত্তাল রয়েছে বলেও জানানো হয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর থেকে।

সেন্টমার্টিনে আটকা শতাধিক পর্যটক

সতর্ক সংকেতের ফাঁদে সেন্টমার্টিনে ফের আটকা পড়েছেন শতাধিক পর্যটক। আবহাওয়া অধিদফতরের ৩নং সতর্ক সংকেতের কারণে শুক্রবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো সেন্টমার্টিন না ফেরায় প্রায় দু’শতাধিক পর্যটক সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছেন।

সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, সংকেত আরো বাড়তে পারে এ শঙ্কায় হোটেল-মোটেল ও বাজারে পর্যটকদের অবস্থান না করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছিল। তারপরও থেকে যাওয়া দুই শতাধিক পর্যটক শুক্রবার আটকা পড়েন।

সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর জানান, আটকা পড়া পর্যটকদের মধ্যে শুক্রবার সকালে দুইটি ও বিকেলে আরো একটি ট্রলারে মোট ১২৭ জন টেকনাফে ফিরে গেছেন।

সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, এখনও শ’খানেক পর্যটক বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন।

গত ১১ অক্টোবর সতর্ক সংকেতের কারণে একইভাবে জাহাজ চলাচল না করায় ৩ শতাধিক পর্যটক সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম জানান, আটকা পড়া পর্যটকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। হোটেল মালিকদেরও এ ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-চলাচল বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় নাডা’র প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট-নলচিরাঘাট রুটে চলাচলকারী সী-ট্রাকসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সারাদেশের সঙ্গে হাতিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।

হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট-নলচিরাঘাট রুটে শনিবার সকাল থেকে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।

হাতিয়ার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা নৌপথে সী-ট্রাক বন্ধ থাকায় শত শত যাত্রী সাধারণ চেয়ারম্যানঘাট-নলচিরাঘাট রুট দিয়ে জেলা শহর মাইজদী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যাতায়াত করতে না পেরে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, টানা বর্ষণ ও জোয়ারে মেঘনা নদীতে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এমন বৈরী আবহাওয়ায় নদীতে নৌযান চলাচল ঝূঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক। তাই হাতিয়ার উত্তর পাড়ের চেয়ারম্যানঘাট থেকে দক্ষিণ পাড়ের নলচিরাঘাট রুটে সী-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসনাত মো. মঈন উদ্দিন জানান, বৈরী আবহাওয়ায় সী-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় উপজেলা থেকে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ যাত্রী ও প্রশাসনের লোকজন নদী পারাপারে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।



মন্তব্য চালু নেই