২ শিক্ষার্থী নিহত, আহত ১০

সাতক্ষীরায় সাংবাদিক সমাবেশের ওপর হামলা

নিহত শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার পপি ও নাজমুল হাসান রাজু

জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম-এর বিশেষ প্রতিনিধিকে (সাতক্ষীরা অঞ্চল) অপহরণ ও ক্রসফায়ারের হুমকির প্রতিবাদে ডাকা সাংবাদিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক ও স্থানীয় আওয়ামী কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ আহত ও ২ নিহত হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাংবাদিকদের ডাকা এ সমাবেশ করার প্রস্তুতিকালে স্থানীয় ছাত্রলীগের বহিস্কৃত ও আলোচিত ছাত্রনেতা শেখ জুয়েল হাসান ও নাজমুল হুদা পলাশের নেতৃত্বে কিছু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা এসে বাঁধা প্রদান করলে সাংবাদিকদের সাথে তাদের ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে সাংবাদিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এলোপাতাড়ি পেটাতে শুরু করে। এতে করে সাংবাদিক মীর মোস্তফা আলী, আতিকুর রহমান ও বদরুজ্জামানসহ আরো অনেকেই আহত হয়।

সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর যেন কোন সংঘাত ও সংঘর্ষ না হতে পারে সেজন্য প্রেসক্লাব সংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন সুজন বলেন, কে বা কারা এ সমাবেশে হামলা করেছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয় সাংবাদিকরা ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করেছে এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার দাবি করেছে। তাদের মতে, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে এই হামলা হয়েছে, কেননা তাদের এ সমাবেশ সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন আগে থেকেই অবগত থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে যথাযত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন। জানতে চাওয়া হলে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহম্মেদ বলেন, আমি শান্তিপূর্ণ এ সাংবাদিক সমাবেশের উপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে পরে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনই দায়ী থাকবে। তিনি আরও বলেন, এ ধরণের ঘটনা স্বাধীন মতামত প্রকাশের পরিপন্থি। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকবে না।

এদিকে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে সংঘর্ষের মধ্যে আটকা পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী আপন দুই ভাই-বোন দ্রুত নিরাপদ স্থলে যাওয়ার প্রাক্কালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপের সাথে সজোরে আঘাত করলে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত ও জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। নিহতরা হলেন- সাতক্ষীরা নবারুন বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী মারুফা আক্তার পপি (১২) ও তার বড় ভাই নাজমুল হাসান রাজু (২৩), সে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।

এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও শোক রালী করেছে। গতকাল দুপুর ২টার পর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে তারা এ কর্মসূচী পালন করে।



মন্তব্য চালু নেই