সাপে কামড় থেকে রেহাই পাবেন যেভাবে…

সাপকে ভয় পান না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর সাপে কাটলে তো কথাই নেই। তবে বিশ্বে যত সাপ আছে তাদের বেশিরভাগই বিষহীন। বিষযুক্ত সাপের সংখ্যা কম। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ ব্যক্তি সাপে কাটার শিকার হন। এঁদের মধ্যে ২৫ লাখ বিষযুক্ত সাপে কাটার শিকার হোন এবং মারা যান প্রায় লাখ খানেক। সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও আমাদের দেশে সাপে কাটার হার কম নয়। সাধারণত গ্রামে বেশি সাপে কাটে।

১৯৯৬-৯৭ সালের একটি সার্ভেতে জানা যায়, দেশে প্রতি লাখে প্রায় ৪ জন সাপে কাটার শিকার হন। এদের মধ্যে মৃত্যুহার প্রায় ২০ শতাংশ। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে সাপে কাটার হার বেশি, প্রতি লাখে ৭ জনের মতো। অধ্যাপক এম এ ফয়েজ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৯৩-২০০৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক হাজার ৬৬৬ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বিষধর সাপে কেটেছে ২৮.৫ শতাংশ ব্যক্তিকে আর মারা গেছেন মাত্র আটজন। তবে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন সাপে কাটা ব্যক্তির পাঁচজনই মারা গেছেন। কাজেই সাপে কাটলে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মৃত্যুহার কমে আসে।

বিষহীন সাপ কাটলে ভয়ের কিছু নেই। তবে বিষধর সাপ কাটলে রোগীকে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নিতে হবে। যদি সাপে কাটা স্থানে দুটি বা একটি ক্ষত চিহ্ণ দেখা যায় সেই সাথে সাপে কাটা স্থানে তীব্র ব্যথা বা জ্বালা করে, স্থানটি ফুলে লাল হয়ে যায়, রক্তিম রস ক্ষরণ হয়, ঘুম ঘুম ভাব হয়, মাথাব্যথা ও মাথা ঝিম ঝিম করা অনুভূতি হয়, বমি বমি ভাব হয় এবং বমি হয়, রক্ত বমি হয়, দুর্বল লাগে, একটি জিনিস দুটি দেখে, শ্বাসকষ্ট হয়- তখন বুঝতে হবে বিষধর সাপে কেটেছে।

তবে যদি ছোট ছোট অস্পষ্টভাবে অনেকগুলো দাঁতের চিহ্ণ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে সাপটি বিষহীন। প্রথমে সাপে কাটা রোগীকে বোঝাতে হবে ভয়ের কিছু নেই। সেই সাথে সাহস জোগাতে হবে। রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে থাকুন আর কেউ একজন প্রাথমিক সেবা প্রদান করুন। সাপে কাটা অংশ সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। রোগীকে শুইয়ে দিয়ে যে অঙ্গে সাপ দংশন করেছে সে অঙ্গটি নড়াচড়া সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করে দিতে হবে। হাড় ভেঙে গেলে যেভাবে বাঁশের কঞ্চি বা সোজা লাঠি দিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয় সেভাবে বাঁধুন। হাত-পায়ে দংশনের ক্ষেত্রে একটি মোটা কাপড় বা গামছা দিয়ে পুরো হাত-পা পেঁচিয়ে দিন বা দংশিত স্থানের উপরে খুব শক্ত না হয় এমন করে গিট দিন। অসংখ্য শক্ত গিট দেবেন না। এতে করে দংশিত অঙ্গে পচন ধরতে পারে। দংশিত স্থান ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে আবৃত করে রাখুন। দংশিত স্থানের আশপাশে কাটাকাটি করবেন না,সুই ফোটাবেন না,রক্ত চুষে বের করবেন না, বিভিন্ন গাছ-লতাপাতার রস,গোবর লাগাবেন না। যদি কথা বলতে বা গিলতে সমস্যা দেখা দেয় তবে কোনো কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। ওঁঝা-বৈদ্যের কাছে সময় নষ্ট না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করুন। হাসপাতালে রোগীকে অ্যান্টিভেনাম,টিটেনাস প্রতিষেধক দিতে হবে।

সাপে কাটাও প্রতিরোধ করা যায়। অবাক হচ্ছেন? সাপ স্বভাবতই মানুষকে ভয় পায়। সাপ বিপদে না পড়লে, সাপকে উত্তেজিত না করলে সাধারণত কামড়ায় না। তাই সাপ দেখলেই মারতে যাবেন না। বাড়িতে ইঁদুর ও সাপের অন্যান্য খাবার বেশি হলে সাপ খাবার ধরতে বাড়িতে চলে আসে। তাই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেও সাপে কাটার হার কমনো যায়। যেসব এলাকায় সাপ থাকতে পারে সেসব এলাকায় চলাফেরা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বাইরে বের হলে অবশ্যই লাইট বা বাতি নিয়ে বের হতে হবে। ট্রাকিংয়ে গিয়ে অনেকেই সাপে কাটার শিকার হন। জুতা পরে নিলে সম্ভবনা কমে। ঝোপঝাড়, বড় ঘাস, গর্তে সাপ থাকতে পারে। সাপ শব্দ শুনে চলে যেতে পারে। তাই এমন জায়গায় চলতে হলে আগে শব্দ করে নিন। মরা সাপ থেকেও সাবধান থাকুন, সাপটি মৃত নাও হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত সাপের সামনে পড়ে গেলে দৌড়াদৌড়ি না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। সাপকে চলে যেতে দিন। যদি সরে না যায় বা কামড়াতে আসে তাহলে বুদ্ধিমত্তার সাথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। ধীরে ধীরে পেছনের দিকে সরে আসুন। ভয় পাবেন না। সাহসের সাথে মোকাবিলা করুন।

লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।



মন্তব্য চালু নেই