সাবধান! বিমানবন্দরে বিকাশ পার্টি, প্রতারিত হতে পারেন আপনিও!

চট্টগ্রামে থাকেন সাইফ সুমন। দীর্ঘ দিন ধরেই একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার জন্য অনলাইনে পণ্য বেচা-কেনার বিভিন্ন সাইটে খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। এই সময় বিক্রয় ডট কমের একটি পোস্ট নজরে আসে তার। মাত্র ২২ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে ডিএসএলআর ক্যামেরা। যদিও ক্যামেরাটির বাজার মূল্য ন্যূনতম ৯০ হাজার টাকারও বেশি। পোস্টে দেওয়া নম্বর দেখে সাইফ ফোন করলে তার কল কেটে একটি মেসেজ আছে তার নম্বরে।

মেজেজে ক্যামেরা মূল্য ইংরেজিতে লেখা ২২ হাজার টাকা। এই পণ্য নতুন, কখনও ব্যবহার হয়নি। আমি আমার অফিস এয়ারপোর্ট কাস্টম থেকে এটি সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আমি এটি আনঅফিসিয়ালি বিক্রি করছি। তাই মার্কেটে বা সরাররি আমি উপস্থিত হয়ে বিক্রি করতে পারছি না। আপনি যদি কিনতে আগ্রহী হন, তাহলে টাকা বিকাশ করুন। টাকা পাঠিয়ে এয়ারপোর্টের কাস্টমস অফিসের সামনে এসে ফোন দিন। তখন আমার পিয়ন আপনাকে ক্যামেরা দেবে। কোনও নগদ টাকা বা অন্য পদ্ধতিতে বিক্রি হবে না। যদি আপনার বিশ্বাস হয়, তাহলে যোগাযোগ করুন। ইফতেখার আহমেদ, সিকিউরিটি ইনচার্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

মূল্য দেখে সাইফ সুমনের এটি বিশ্বাস হচ্ছিল না, আবার লোভও সামলাতে পারছিলেন না তিনি। সুমন আবার কল দিয়ে সেই নম্বরে কথা বলেন। পুরো বিশ হাজারের বদলে অর্ধেক দশ হাজার টাকা বিকাশ করে বাকি টাকা ক্যামেরা কেনার সময় দেওয়ার প্রস্তাব করলেন। অন্য প্রান্ত থেকেও সম্মতি আসে। চট্টগ্রাম থেকেই ১০ হাজার টাকা বিকাশ করেন সুমন। আর ঢাকাতে থাকা তার এক আত্মীয়কে যেতে বলেন এয়ারপোর্টে। দাঁড়িয়েই থাকতে হয় সাইফ সুমনের আত্মীয়কে, কেউ আর আসেন না। তার সেই নম্বরও হয়ে যায় বন্ধ। ততক্ষণে সাইফ বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছে। তবে, প্রতারিত হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেননি তিনি।

জানা গেছে, প্রায় একই রকমভাবে প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই। বিমান বন্দরকেন্দ্রিক ঘটনা হওয়ায় সেখানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও অভিযোগ করেছেন কেউ-কেউ। তবে, এ সব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ না করায়অপরাধীরা থেকে যাচ্ছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

bb589083e28f49832deb9b8b2701d0cf--2-

এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এয়ারপোর্টে বিভিন্ন সময়ে মালামাল আটক হয়। অনেকেই ভাবেন এ সব মালামাল চাইলেই বিমান বন্দরের কর্মকর্তারা বিক্রি করতে পারেন। ফলে এমন প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হন কেউ-কেউ। ব্র্যান্ড নিউ ক্যামেরা, মোবাইল, ল্যাপটপ এ সবের বাজারমূল্য লক্ষ টাকা হলেও বিক্রয় মুল্য দেওয়া হয় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রিয় ডট কম, এখানেই ডটকমসহ বিভিন্ন সাইটে দেওয়া হয়। এয়ারপোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দেওয়া সব মেসেজ দেখে অনেকেই বিশ্বাস করেন। এ ধরনের প্রতারক চক্র ‘বিকাশ পার্ট’ হিসেবে পরিচিত।

7c7efd3a67b3bae0d950ec54487c6ffe--1-

 

মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মূলত লোভকে পুঁজি করে একটা চক্র এ ধরনের প্রতারণা হচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দেওয়া কোনও নম্বর বিমান বন্দরের বা কোনও কর্মকর্তার নয়। এমনকি বিমানবন্দরের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সবার সতর্ক থাকা উচিত। কেউ প্রতারিত হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অনলাইনে যেকোনও ধরনের অপরাধ, প্রতারণার ঘটনা ঘটলে, সাইবার ক্রাইম টিমের কাছে অভিযোগ এলে আইন-অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাইবার ক্রাইম টিম ছাড়াও থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।-বাংলাট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই