সালমান শাহ’র মৃত্যুর কারণ স্ত্রীর পরকীয়া : নীলা চৌধুরী

সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর সারা দেশ কেঁদেছিলো। চলচ্চিত্রের মানুষেরা কেঁদেছিলেন। সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা কেঁদেছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী সামিরার চোখে এক ফোঁটা জলও ঝরতে দেখা যায়নি। তারমধ্যে বিধবার কোনো রেশমাত্র ছিলো না। শুধু তাই নয়, সালমানেরই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে বর্তমানে সংসার করছেন সামিরা।

এইসবই প্রমাণ করে সামিরা স্বামীকে ঠকিয়ে পরকীয়া করতেন। আর সেই পরকীয়ার জন্যই সালমান শাহ খুন হয়েছেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আজ রোববার (১৫ মে) দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বললেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী (নীলুফার চৌধুরী)।

সালমান হত্যার তদন্ত বিষয়ক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নীলা চৌধুরী। সেখানে তিনি পুত্রের খুনের বিচার নিয়ে টালবাহানার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘কষ্টে আমার বুক ফেটে যায়, গেল ৯ মাসে ১১ বার শুনানির পরও আমার ছেলের মামালার রায় প্রকাশ করা হয়নি। কেন হয়নি সেই জবাবের দাবি নিয়েই আমি সাংবাদিকদের সামনে আজ হাজির হয়েছি।’

সালমান শাহর মৃত্যুকে পরিকল্পিত খুন দাবি করে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সালমানের শরীরে কোনো ক্ষত চিহ্ন ছিলো না যাকে আত্মহত্যা বলা যায়। খালি ইঞ্জেকশন পুশ করে এবং জেসকিন ইঞ্জেকশন দিয়ে, গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই প্রমাণ পুলিশ ঘটনার পরপরই পেয়েছিলো। কিন্তু আজ সব উধাও হয়ে গেছে!’

কেন উধাও হয়েছে বলে আপনি মনে করেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার পরকীয়া সম্পর্ক এবং চলচ্চিত্রের সিন্ডিকেটের কারণেই আমার ছেলেকে খুন হতে হয়েছে। যারা এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন তারাই সব উধাও করিয়েছেন।’

সালমানের মৃত্যুতে স্ত্রী সামিরাকে দায়ী করে সালমানের মা বলেন, ‌‘সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবারকে আমার পাশে কোনো সময় দাঁড়াতে দেখিনি। স্বামী হারানোর কোনো কষ্টও দেখিনি তার মধ্যে। তাছাড়া সামিরা এখন সালমান শাহ’র এক বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করছে। এটা কি প্রমাণ করে না যে সামিরার পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো? এই পরকীয়ার বলি হলো আমার ছেলে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একজন মা হিসেবে ছেলে হারানোর শোক আমি কাকে বুঝাবো? আমি কিছু চাইনি। শুধু আশা করেছিলাম চলচ্চিত্রাঙ্গন সালমানের খুনের বিচারে সোচ্চার হবে। আশা করেছিলাম, রাষ্ট্র এই হতভাগী মাকে তার সন্তান খুনের বিচার করে দেবে। আমি তা পাইনি। আমার ছেলে গেছে, সে আর ফিরবে না। কিন্তু তার খুনের অপরাধীদের শাস্তি হয়েছে এটা দেখতে চাওয়া তো কোনো দুঃস্বপ্ন নয়।’

নীলা চৌধুরী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘আইনের শাসনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। এই দেশে আইনের সুশাসনের বহু নজির আছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশে এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আমি এই বরেণ্য দেশনেত্রীর কাছে একজন মা হিসেবে সন্তান খুনের বিচার চাইছি। আপনি একজন মা, এই অভাগী মাকে তার ন্যায় বিচার দিন। সালমান খুনের যে বিচার দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানার শিকার হচ্ছে আপনি এর প্রতি নজর দিন।’

নীলা চৌধুরী আরো বলেন, ‘বিশ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে এখনো দেশের বহুল আলোচিত এই খুনের বিচার হলো না। একটি খুনকে শুরু থেকেই ধামাচাপা দেয়ার জন্য সিআইডি ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে অপমৃত্যু উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’

এদিকে সর্বশেষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হলে তার বিরুদ্ধে নারাজি দেন সালমান শাহ’র মা নীলুফার চৌধুরী। আদালত নারাজির আবেদন মঞ্জুর করে পুনঃতদন্তের জন্য র‌্যাব-৩ কে নির্দেশ দেন। পরে পুনঃতদন্ত বাতিল চেয়ে অপমৃত্যুর আবেদনটি গ্রহণ করার আবেদন করে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

নারাজির আবেদনে সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী উল্ল্যেখ করেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এর পর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহ’র মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহ’র মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। আদালত নারাজির আবেদন গ্রহণ করে পুনঃতদন্তের জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।



মন্তব্য চালু নেই