সালমান শাহ স্মরণে শাবনূরের স্মৃতিচারণ

১৯ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর জন্মদিন আর মৃত্যুদিন ৬ সেপ্টেম্বর। সালমান শাহ মারা গেছেন ১৯৯৬ সালে। মাত্র পাঁচ বছরের চলচ্চিত্রজীবনে তিনি অভিনয় করেছেন ২৭টি ছবিতে। তাঁর প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত। তাঁর বেশির ভাগ ছবিই দারুণ ব্যবসাসফল হয়। দর্শক এখনো মনে রেখেছেন প্রয়াত এই নায়ককে। এই দুটি দিনকে ঘিরে চলচ্চিত্রমহল এবং তাঁর পরিবার থেকে নানান আয়োজন করা হয়। তাঁর সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাবনূর। তিনি স্মরণ করেছেন সালমান শাহকে।

দিন-তারিখ ঠিক মনে নাই। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির শুটিং। মা আর এহতেশাম দাদুর সঙ্গে এফডিসি গিয়েছিলাম। ঝর্না স্পটে একটি গানের শুটিং হচ্ছে। মৌসুমী আপু ছিলেন ওই গানের শুটিংয়ে। ইশারা করে এহতেশাম দাদু বললেন, ‘ওই যে দেখ নতুন হিরো। নাম সালমান।’ তখন আমি কেবল চলচ্চিত্রে আসছি। এই হচ্ছে সালমান শাহর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। তবে সেদিন আমাদের কোনো কথা হয়নি। সুযোগও ছিল না। দেখেই চলে আসি।
পরে মনে হলো, ধুর, এটা কোনো হিরো হইলো নাকি।

যেদিন ছবিটা রিলিজ হলো, আমি ছবিটা দেখতে এহতেশাম দাদুর সঙ্গে হলে যাই। মৌসুমী আপুও সেদিন সঙ্গে ছিলেন। সেনানিবাসের একটি হলের পর্দায় সালমানকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। এত চমৎকার অভিনয়। এত স্টাইলিশ একজন নায়ক।

সালমানের সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয় তুমি আমার ছবির শুটিংয়ে। ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে। পরিচয় হওয়ার পর সালমান বলল, ‘এই পিচ্চি, তুমি কাজ করবা? তুমি শুটিং করবা?’

সালমানের সঙ্গে আমার প্রথম ছবি তুমি আমার। তারপর থেকে ও আমাকে পিচ্চি বলেই ডাকত। আমাকে কখনো নাম ধরে ডাকেনি। একসময় আমরা একজন আরেকজনকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতাম। সালমান বলত, ‘আমার কোনো বোন নাই তো, তুই আমার বোন।’

আমরা দুজন প্রথম একসঙ্গে ঢাকার বাইরে যাই রাঙামাটিতে। তুমি আমার ছবির শুটিং। আমরা একই হোটেলে ছিলাম। সালমানের স্ত্রী সামিরাও ছিল। সামিরা সব সময় আয়াতুল কুরসি পড়ত। সালমান আমার মাকে খুব সম্মান করত। ও তখন আমার মাকে বলত, ‘আন্টি আন্টি, আমার কলিজাটাকে (সামিরা) একটু দেখে রাইখেন।’ আম্মার সঙ্গে সামিরার চমৎকার সম্পর্ক ছিল।

নৃত্য পরিচালক বাবু ভাইকে খুব ভয় পেত। বাবু ভাই না থাকলে ও আমার কাছ থেকে নাচটা দেখে নিত। সালমানের মা-বাবা দুজনই আমাকে খুব আদর করতেন। তাঁরাও আমাকে মেয়ের মতোই দেখতেন।

সালমান আউটডোরে কোথাও শুটিং করতে গেছে, সেখানে জুতা পছন্দ হয়েছে। কিংবা কোনো জামা পছন্দ হয়েছে। আমার জন্য সেই জুতা কিংবা জামা কিনে নিয়ে আসত। হঠাৎ এমন উপহার পেলে খুব ভালো লাগত। সালমানের চেয়ে সামিরা আমাকে বেশি উপহার দিত। দেখা গেল, কোনো শুটিংয়ের সময় ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করা কোনো গয়না তাঁর কাছে আছে, সঙ্গে সঙ্গে তা আমাকে দিয়ে দিত। চুড়িও পরিয়ে দিত। আমাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিত। গাড়ি চালাতে সালমান খুব ভালোবাসত। ও খুব ভালো ড্রাইভ করত।

সালমান অনেক বড় মনের একজন মানুষ ছিল। ও মানুষকে শ্রদ্ধা করতে জানত। একদিন আমার মা শুটিংয়ের সেটে গেছে, সেখানে বসার কিছু ছিল না। হঠাৎ ও পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে প্রোডাকশনের একজনকে বলল দ্রুত একটা মোড়া কিনে নিয়ে আসার জন্য। মুরব্বিদের কীভাবে শ্রদ্ধা, ছোটদের কীভাবে আদর করতে হয়, সেটা সালমান খুব ভালো করেই জানত। সালমান মারা যাওয়ার পর প্রোডাকশনের এমন কোনো ছেলে বলেনি যে তাদের বাসায় সালমান যায়নি। প্রোডাকশন ছেলেদের সুখে-দুঃখে সালমান সব সময় পাশে ছিল। টাকা দিয়ে কিংবা মানসিকভাবেই হোক, সালমান তাঁর অবস্থান থেকে সবাইকে সহযোগিতা করে গেছে। চলচ্চিত্রের কেউ বিপদে পড়েছে অথচ সালমানের কাছে গিয়ে সহযোগিতা পায়নি, এমন নজির নাই। ভালো মনের একজন মানুষ। ওর যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল, তা এখন অনেকের মাঝেই দেখি না।



মন্তব্য চালু নেই