সালমান শাহ হত্যা মামলা: রিভিশন বৃত্তে ১৪ মাস

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। মামলাটি আদালতের রিভিশন বৃত্তেই আটকা পড়ে আছে ১৪ মাস যাবত।

বৃহস্পতিবার এ মামলাটির পুনঃরিভিশন শুনানির জন্য দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য প্রস্তুত নয় মর্মে সময়ের আবেদন করলে বিচারক ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কেএম ইমরুল কায়েস ৪ আগষ্ট পরবর্তী দিন ঠিক করেন। সময়ের আবেদন করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।

মামলাটিতে র‌্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করেন। আর এই রিভিশন মামলার শুনানিতেই কেটে গেছে গত ১৪ মাস।

বাদী পক্ষে এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত ও ফারুক হোসেন এবং অ্যাডভোকেট মাহফুজ মিয়া শুনানি করেন।

এদিকে এ হত্যা মামলার ন্যায় বিচারের দাবিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের চত্বরে মিছিল করেছে আদালতে আসা সালমান শাহর ভক্তগন। তারা জানতে চেয়েছে, এ মামলার শেষ কোথায়?

এর আগে, প্রায় ১৫ বছর ধরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে সিএমএম আদালত সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন ও মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরীসহ ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর অভিযোগ প্রমানিত হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই বছর ২১ ডিসেম্বর নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরী আদালতে হাজির হয়ে নারাজী দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করেন।

নীলা চৌধুরী নারাজীতে মাফিয়া ডন আজিজ মোহাম্মাদ ভাইসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অপর ১০ জন হলেন, সালমান শাহের স্ত্রীসামিরা হক, সামিরার মা লতিফা হক লুসি, রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, এফ ডিসির সহকারী নিত্য পরিচালক নজরুল শেখ, ডেভিড,আশরাফুল হক ডন, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ, আবুল হোসেন খান ও গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের ওপর এ নারাজীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিএমএম আদালত র‌্যাবকে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। এ আদেশের পরপরই ফের আলোচনায় আসে সালমান শাহর এই মর্মান্তিক মৃত্যু। আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধেই এ রিভিশন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ফ্ল্যাশব্যাক
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের ১১/বি নিউস্কাটন রোর্ডের স্কাটন প্লাজার বাসান নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে প্রথমে হলি ফ্যামেলি পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এ নিয়ে সালমান শাহের পিতা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। উক্ত মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ পরে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির তদন্ত করেন। তদন্তকালে সালমান শাহর লাসের প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়না তদন্ত করেন। প্রতিবেদনে তারা সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যা জনিতকারণে হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন।

পরে সালমান শাহর পরিবার ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি দিলে সালমানের লাশ কবর থেকে তুলে ফের ময়না তদন্ত করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদনে, লাশ অত্যধিক পচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্নয় কারা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির আত্মহত্যা জনিতকারণে হয়েছে সালমান শাহর মৃত্যু হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে নারাজী দেন।

নারাজিতে তিনি সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, জনৈক আবুল হোসেন খান, বাসার কাজের মেয়ে ডলি, মনেয়ারা বেগম, সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল খালেক, সামিরার আত্মীয় রুবি, এফ ডিসির সহকারী নিত্য পরিচালক নজরুল শেখ ও ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত মর্মে উল্লেখ করেন।

নারাজীর পর আদালত ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মজিবুর রহমানের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। এ তদন্ত কর্মকর্তাও অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই সালমানের বাবার ডিওএইচএস (জোয়ার সাহারা) বাসায় রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামের জনৈক যুবকের আগমন ঘটে। মিথ্যা পরিচয়ে ওই যুবকের বাসায় প্রবেশের অভিযোগে তাকে কেন্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে একটি মামলা করা হয়।

ওই মামলায় রেজভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে সালমান শাহ হত্যার কথা স্বীকার করে তার সহযোগী হিসেবে ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মাদ ভাই, সাত্তার, সাজু, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা লতিফা হক লুসি ও জনৈক রুবির নাম প্রকাশ করে। পরে ১৯৯৭ সালের ২২ জুলাই আদালতে তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।

এরপর বাদী সালমানের বাবা কমর উদ্দিন অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তরের আবেদন করেন। এরপর আদালত ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই অপমৃত্যুর মামলা এবং কেন্টনমেন্ট থানার মামলা একত্রে তদন্তের জন্য সিআইডির ওপর তদন্তভার হস্তান্তর করেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান প্রায় সাড়ে ৩ মাস তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ২ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

উক্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বাদিপক্ষ মামলাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করলেও এবং জনৈক রেজভী হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত এবং অন্যানদের জড়িত থাকার বিষয় নাম প্রকাশ করলেও পরে জেলখানায় রেজভীকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে সালমান শাহ হত্যার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। এতে প্রমানিত হয় যে তার স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছা প্রদত্ত ছিল না।

মূলত সালমান শাহর সঙ্গে নায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের সূচনা হয়। দাম্পত্য কলহের কারণেই সে আত্মহত্যা করে। যা ময়না তদন্ত রিপোর্ট সমর্থণ করেন। তাই সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যাই।

আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ফের নারাজী দাখিল করা হয়। যার ভিত্তিতে আদালত ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।



মন্তব্য চালু নেই