সিজারিয়ান নিয়ে যা জানা জরুরি

আজকের পৃথিবীতে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ গর্ভজনিত জটিলতা। অধিকাংশ প্রসবকালীন জটিলতার সহজ মীমাংসা হচ্ছে ‘সিজারিয়ান সেকশন’। মায়েদের মৃত্যুর হার কমাতে সিজারিয়ান অপারেশন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও উৎসাহিত করার দিন এসেছে। সিজারিয়ান সেকশন একটি অপারেশনের নাম। স্বাভাবিক অবস্থায় বাচ্চা যোনিপথ দিয়ে জন্মায়। কিন্তু অনেক সময় যোনিপথে বাচ্চা প্রসব করানো মা ও নবজাতকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন একটি বিকল্প পথ দিয়ে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। একটি অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা উদরের বিকল্প পথ দিয়ে মায়ের গর্ভ বা জরায়ু থেকে বের করে আনা হয়। এটাই হচ্ছে সিজারিয়ান সেকশন। কিন্তু এই সিজারিয়ান সেকশন সম্পর্কে অনেকের মনেই রয়েছে নানা রকম ভুল ধারণা।

অনেকেই বলে থাকেন একজন সিজারিয়ান মহিলাকে পরবর্তী সব প্রসবের সময়েই সিজারিয়ান অপারেশন করতেই হবে। কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সব সময় সিজারিয়ান করতে হয় না। আবার অনেকেরই ধারণা, সিজারিয়ান অপারেশন করে দুই বারের বেশি বাচ্চা নেয়া যায় না। এই ধারণাটিও পুরোপুরি ঠিক নয়। যতদূর জানা যায়, পৃথিবীতে একই মহিলার সাতবার সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে প্রসবের ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকজন মহিলা রয়েছেন যাদের অন্তত পাঁচবার সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে।

তবে বারবার সিজারিয়ান অপারেশনের সফলতা আরো দু’একটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন একবার সিজারিয়ান অপারেশন হওয়ার পর পরবর্তী সন্তানের জন্য কমপক্ষে ৩-৫ বছর অপেক্ষা করা ভালো। এই সময়ের মধ্যে মায়ের শারীরিক গঠন পূর্ণতা ফিরে পায়। অপারেশনের পর অন্তত তিনমাস পূর্ণ বিশ্রামে থাকা উচিত আর ছয়মাস কোনো রকম ভারী কাজ করা উচিত নয়। এতে কাটাস্থান ফাঁক হয়ে যাওয়ার প্রবনতা কমে যায় এবং সেই ফাঁক গলে দেহ গহ্বরে অবস্থিত অঙ্গসমূহ বেরিয়ে আসার (ইনসিসনাল হার্নিয়া হওয়ার) সুযোগ থাকে না। কিন্তু সন্তান প্রসবের জন্য প্রত্যেকবারই সিজারিয়ান অপারেশনের দরকার হলে তিনটির বেশি সন্তান না নেয়াই ভালো। কারণ তখন প্রসবজনিত কোনো জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে জরায়ু ফেটে যেতে পারে এবং জরায়ুর এই ফেটে যাওয়া মেরামত কোনো সহজসাধ্য ব্যাপার নয়।

সিজারিয়ান নিয়ে আরো ভুল ধারণা আছে। যেমন কেউ কেউ মনে করেন সিজারিয়ান অপারেশনের পর শরীর মোটা হয়ে যায়। আবার সিজারিয়ান অপারেশনের পর তলপেটে দাগ থেকে যাবে বলে অপারেশন করতে চান না অনেকে। কিন্তু আজকাল চামড়া সিল্ক দিয়ে সেলাই না করে ত্বকের নিচে দিয়ে বিশেষ ধরনের সুতোর সাহায্যে সেলাই দেয়া হয়, শুকাবার পর সুতোটি টেনে বের করে আনা হয়, এ পদ্ধতিতে দাগ অনেকটা বোঝাই যায় না।

কেউ কেউ মনে করেন সিজারিয়ান সেকশন করার দরকার না থাকলেও চিকিৎসকরা একটি বিশেষ কারণে তড়িঘড়ি করে সিজারিয়ান করে থাকেন। এই ধারণাও ঠিক নয়। কারণ গর্ভবতী এবং গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন ঝুঁকির কথা ভেবেই সিজারিয়ান করা হয়। কিন্ত কোনো গর্ভবতী কিংবা কোনো স্বামী সেই ঝুঁকি নিতে রাজী থাকার পরও বিনা অনুমতিতে কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কখনো কি কারো সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন, না করতে পারেন?

লেখক : ডা. সজল আশফাক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক



মন্তব্য চালু নেই