সিনেমা কিংবা উপন্যাসের নয়, সত্যিকারের টারজান!

কাল্পনিক টারজানের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। সিনেমা কিংবা উপন্যাসের টারজান নামক সেই মানুষটি বড় হয়েছিল জঙ্গলে। পরে ফিরে এসেছিল সভ্য জগতের জীবনে।

তবে শুধু গল্পের কাহিনিতেই নয়, বাস্তবেও টারজানের মতোই জীবনযাপন করেছেন ভিয়েতনামের হো ভ্যান থান এবং হো ভ্যান ল্যাং নামক দুই ব্যক্তি। সম্পর্কে এই দুজন বাবা-ছেলে।

সভ্যজগতের নিষ্ঠুরতায় ভীত হয়ে ভিয়েতনামের একটি গভীর জঙ্গলে টানা চল্লিশ বছর জীবনযাপন করেছেন। সভ্যজগতের তুলনায় জঙ্গলকেই বেছে নিয়েছিলেন আপনভাবে। চল্লিশ বছরে প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন সভ্য মানুষের চালচলন।

তবে চার দশক আগে তাদেরকে প্রাণ বাঁচানোর আশ্রয়টুকুও দিতে পারেনি যে সমাজ, আশ্রয় দিয়েছিল যেই জঙ্গল, সেই জঙ্গলের সুখী জীবন ৮০ বছর বয়সী হো ভ্যান থান এবং তার ছেলে ৪১ বছর বয়সী হো ভ্যান ল্যাংকে ২০১৩ সালে জোর করে নিয়ে আসে সেই সমাজই।

চার দশক আগে ভিয়েতনামের ছোট্ট গ্রাম ‘ত্রা কেম’-এ তিন ছেলে ও স্ত্রীকে সুখের সংসার ছিল হো ভ্যান থানের। কিন্তু ভিয়েতনামে শুরু হওয়া যুদ্ধে চোখের সামনে বোমা বিস্ফোরণে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নারকীয় ভাবে মরতে দেখেন থান। কনিষ্ঠ সন্তান ল্যাংয়ের বয়স তখন মাত্র দুই। সেই শিশুকে নিয়েই সমাজ ছেড়ে গহীন জঙ্গলে চলে গিয়েছিলেন থান। কখনো আর ফিরে আসার কথা ভাবেননি।

চল্লিশ বছর পর ২০১৩ সালে কাঠের খোঁজে কুয়াং গাই প্রদেশের তে ত্রা জেলার গভীর জঙ্গলে ঢুকেছিলেন কাঠুরেরা। সেসময় তারা দেখেন, আকার প্রকারে মানুষের মতো দেখতে দু’জন জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরে স্থানীয় প্রশাসন তাদের জঙ্গলের জীবনে ছেদ টেনে জোর করে নিয়ে আসে।

এই চল্লিশ বছর ধরে কীভাবে জঙ্গলে তারা কাটিয়েছেন, কী খেয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেচেঁছেন কীভাবে, অসুস্থতার সময় তা মোকাবেলা করছেন কীভাবে- সেসময় এসব বিস্ময় বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেননি। কারণ সময়ের ব্যবধানে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল তাদের। থান যদিও অল্পস্বল্প কিছু বলতে পারেন, ল্যাংয়ের সম্বল বলতে মাত্র কয়েকটা শব্দ।

সুতরাং শারীরিক, মানসিক, সামাজিকতা ফেরাতে শুরু হয় তাদের ‘রিহ্যাবিলিটেশন’। যে সমাজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন তারা, সে সমাজেই ফেরার জন্য নতুন করে সব কিছু শিখতে বাধ্য করা হয় তাদের। বর্তমানে ফের সমাজকে মানিয়ে নিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি বিখ্যাত ফটোগ্রাফার অ্যালভারো সেরেজোর উদ্যোগে ৩ বছর পর ফের সেই জঙ্গলে গিয়েছিলেন হো ভ্যান ল্যাং। যেই জঙ্গলে হো ভ্যান ল্যাং জীবনের ৪০টি বছর কাটিয়েছেন, সেই জঙ্গলে আবারো পুরো একটি দিন কাটিয়ে অতীত উপভোগ করেছেন।-রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই