গুলশান হামলা__________________________________________________

সিসিটিভি ফুটেজ ঝাপসা, পাঠানো হচ্ছে এফবিআই ল্যাবে

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর ওই এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজগুলো ঝাপসা। তাই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করতে এসব ফুটেজ পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ল্যাবে।

সিসিটিভি ফুটে বিশ্লেষণে হামলা শুরুর পরে গুলশান ২ নম্বরের ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে প্রথমে দুই যুবক ও পরে আরো এক যুবকে যেতে দেখা যায়। তবে ওই সময় আলো কমে আসায় ফুটেজে তাদের চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।

এই মামলার তদন্ত তদারকীর দায়িত্বে থাকা এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ফুটেজে ওই দিন সন্ধ্যায় তিন যুবককে বেশ দ্রুততার সাথে ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের চেহারা বা তাদের সঙ্গে কোনো ব্যাগ জাতীয় কিছু ছিল কি না সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। এগুলো স্পষ্ট করার কারিগরি সুবিধা দেশে না থাকায় এফবিআই ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি) উপ-কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিরা যেখানে হামলা চালিয়েছে, তার আশপাশের প্রায় সবগুলো সিসিটিভি ফুটেজই সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই এলাকায় বেশ কয়েকজনকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। কিন্তু ফুটেজগুলো রাতের হওয়ায় ওই ব্যক্তিদের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।’

এফবিআই এর সহায়তা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও সিঙ্গাপুর এই মামলার প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল, তাই প্রয়োজন হলে তাদের সহায়তা নেয়া হবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন ওই তিন যুবককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের গতিবিধি ও সময় বিবেচনায় মনে হয়েছে তারা হামলাকারীদের সাথেই এসেছিল। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ না করে বাইরে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল।

এদিকে নজরদারিতে থাকা জঙ্গিদের পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলার তিন মাস আগে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। ওই বাসা থেকে পরিচালিত হয় কিলিং মিশন।

হামলার দিন সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে পৃথক তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলাকারীরা রওনা হয় গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের দিকে। প্রথম গ্রুপে ছিল নিবরাস ইসলাম ও মীর সামিহ মোবাশ্বের। তারা হেঁটে নর্দা কালাচাঁদপুর হয়ে ইউনাইটেডের পাশ দিয়ে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের দিকে যায়। একই সময়ে রোহান ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম পায়েল বাড্ডা নতুন বাজার হয়ে ওই রেস্টুরেন্টের দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলও নর্দা কালাচাঁদপুর হয়ে হলি আর্টিসানের সামনে যায়। এরপর একত্রিত হয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে গুলি চালাতে চালাতে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে পরদিন সকাল ৮টার পর। কিন্তু তার আগেই জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। আগের দিন রাতে তাদের বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে ওই রেস্তোরাঁর শেফ সাইফুল চৌকিদারসহ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।



মন্তব্য চালু নেই