সিসি ক্যামেরায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে গোয়েন্দা পুলিশ
যে কোনো ধরনের অপরাধী পাকড়াও করতে গোয়েন্দা পুলিশ এখন সিসি ক্যামেরার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় সিসি ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়লে সেটি নিয়ে গোয়েন্দারা তদন্ত কাজ শুরু করেন। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এমন এলাকায় সিসি ক্যামেরা না থাকলে তদন্তকাজও ঝিমিয়ে পড়ে। আবার সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেটির ছবি স্পষ্ট না হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা রীতিমতো ঝামেলায় পড়ে যান।
সম্প্রতি কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর সিসি ক্যামেরা থাকা না থাকা এবং সেই ক্যামেরার ছবি নিয়ে রীতিমতো ঝামেলায় পড়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রাইজিংবিডির কাছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ কথাই বলেছেন।
গত ৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে জুমার নামাজের সময় সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে গলা কেটে হত্যা করে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে। ওই বাসায় সিসি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তকাজ করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে ঘাম ঝরাতে হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কোনো সদস্যকে (যাকে এর আগেও গ্রেফতার করা হয়েছিল) গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এতে তদন্তকাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।
এর কিছুদিন পর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজকে কাজে লাগানো হয়। সেই ফুটেজ অনুযায়ী হামলাকারী এবং হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত হয়। মোটরসাইকেল উদ্ধার ও হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর বাড্ডায় খিজির হায়াত খান হত্যার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাননি গোয়েন্দারা। তবে হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া আলামতের ওপর নির্ভর করে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
হোসেনি দালানে বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও এতে ধারণকৃত বোমা হামলার দৃশ্য স্পষ্ট নয়। কারণ, রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় মানুষের ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেনি। আর তাই গোয়েন্দারাও সেই ঘটনার কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না।
একইভাবে লালমাটিয়ায় প্রকাশক টুটুলসহ তিন ব্লগারের ওপর হামলার স্থল এবং আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় কাউকে শনাক্ত করতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা। ওইদিনই শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে আরেক প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার তদন্তও অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে। কারণ, আজিজ সুপার মার্কেটে বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা বসানো থাকলেও হামলাকারীর কোনো ছবি ধরা পড়েনি।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দারা আগের মতো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন না। অনেকটা সিসি ক্যামেরার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ফলে অনেক মামলার তদন্তকাজের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। তিনি বলেন, গোয়েন্দাদেরকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরো বেশি আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া দরকার।
এসব ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা শুধু সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ওপর নির্ভরশীল নন। তারা একের অধিক তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তকাজকে এগিয়ে নিয়ে যান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কেবল সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে এ যুগে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা নগরীর গুলশান এলাকায় ৭০০’র মতো সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা, ধানমন্ডিসহ বেশকিছু এলাকায় আংশিকভাবে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে ক্যামেরা লাগিয়েছেন। তবে পুলিশের আওতার মধ্যেও রাজধানীর রাস্তাগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মিলি বিশ্বাস জানান, পুলিশ পরিচালিত সিসি ক্যামেরাগুলো মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে কোন জায়গায় কতটা জ্যাম রয়েছে, তা দেখার জন্য। সে ক্ষেত্রে কোন রাস্তা কীভাবে চালাতে হবে, তা সহজেই নিরূপণ করা যায়।
তিনি আরো জানান, এভাবে পুরো ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসতে পারলে যানজট নিরসন সহজেই সম্ভব। নিরাপত্তার জন্যও এটা ভালো সহায়ক।
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশ সিসি ক্যামেরার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছুটা তো নির্ভর করতেই হয়। আগে সিসি ক্যামেরা ছিল না, তাহলে তখন কি অপরাধীরা ধরা পড়েনি? অবশ্যই পড়েছে। এখনও পড়বে। তবে অপরাধীদের ধরার জন্য আধুনিক কৌশলের পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অত্যাধুনিক দক্ষতারও প্রয়োজন রয়েছে।’রাইজিংবিডি
মন্তব্য চালু নেই