সীমান্ত দিয়ে আবারো আসছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারো বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। গত দু’দিনে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে তারা।

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আয়ুব আলী মাঝি এ বিষয়ে বলেন, ক্যাম্পে আমাদের ব্লকে গত দুই দিনে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আসছে। গত বুধবার উখিয়ার বালুখালীতে নতুন করে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশদ্বারে সদ্য বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দেখা গেছে। এ সময় অনেকের সঙ্গে ছিল শিশু। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র দেড় ঘণ্টায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এই ক্যাম্পে প্রবেশ করেন। তাদের অনেকের সঙ্গেই ছিল বস্তাভর্তি বিভিন্ন জিনিস।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পোয়াংখালী গ্রামের লাইলা বেগম (৩০), শফিউল আলম (৩৫), ফাতেমা (১৪), ফাতলী বেগম (১২), নাইংসন গ্রামের আবদুর রহিম (৪০), আবুল হোসেন (৩২), বুচিদং গ্রামের দিল মোহাম্মদ (৪৫), হামিদা বেগম (৩৫), নূরজাহান (২৩), গোল মেহের (১২), বেলাল উদ্দিন (২৫) এবং কৈয়ারি পাড়া গ্রামের শফি আলম (৪৫), মোহাম্মদ কাদের (৬০) ও ধলা বিবির (৫০) সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফের অভিযান শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা শান্ত। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণের কথা জেনে তারা বাংলাদেশে চলে আসছেন, কারণ রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মাত্রা একটু কমলেও রোহিঙ্গাদের কোনো কাজে বের হতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা রোহিঙ্গারা তাই ত্রাণের খবর পেয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসছে।

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা লালু মাঝি বলেন, নতুন করে ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গারা ত্রাণের আশায় আসছে। রাখাইনের পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা শান্ত হলেও পুলিশ প্রতিটি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. সেলিম মাঝিও জানান, তাদের ক্যাম্পে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে।

টেকনাফ ২ নম্বর বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী অবশ্য নতুন রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত স্বাভাবিক রয়েছে। দুই মাস আগে রোহিঙ্গারা যেভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল, এখন সে অবস্থা নেই। এরপরও সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এটা স্বাভাবিক, উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তবে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কক্সবাজার অফিসের কর্মকর্তা সৈকত বিশ্বাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর এর দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। এরপর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়। জাতিসংঘের হিসেবে অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।



মন্তব্য চালু নেই