‘সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন-গণভবনের দূরত্ব কয়েক লাখ কিলোমিটার!’

অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দুই সপ্তাহ, দুই মাস বা দুই বছর আপনার কাছে একই, আবেদনে শব্দ চয়নও একই।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ফের সময়ের আবেদন দাখিল করলে আজ সোমবার তিনি এ মন্তব্য করেন।

আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগে গেজেট প্রকাশের বিষয়ে শুনানির আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন জানান। সে সময় আদালত বলেন, ‘এখানে কোনো গেজেট দেখছি না। এটা কী? এটা তো সময় আবেদন।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর কোনটি। নিউইয়র্ক না টোকিও? আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর ঢাকা। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন ও গণভবনের দূরত্ব কয়েক লাখ কিলোমিটার। আড়াই বছরেও পাড়ি দেওয়া হয়নি। আড়াই হাজার বছরেও সম্ভব হবে না? আড়াই বছর ফাইল চলাচলে সময় লাগে। আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?’ মাহবুবে আলম বলেন, ‘সময় চাচ্ছি’।

আদালত বলেন, ‘এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হল।’ তখন মাহবুবে আলম বলেন, ‘আবার তাহলে সময় চাইতে হবে।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘দুই সপ্তাহ দুই মাস বা দুই বছর সবই আপনার কাছে এক। শব্দও একই।’

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। ওই বিধিমালা সংশোধন করে দেন আপিল বিভাগ। এ খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এই বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করে তা দাখিল করতে গত বছরের ২৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কয়েক দফা সময় নেয়।

আপিল বিভাগের নির্দেশে গত ১২ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব আদালতে হাজির হন। এর ঠিক এক দিন আগে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত খসড়া গেজেট প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ওই দিন আপিল বিভাগ বলেন, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন, এখানে কোনো আপস নেই। ১২ ডিসেম্বর আদালত গেজেট প্রকাশের জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কয়েক দফা সময়ের আবেদন করে।



মন্তব্য চালু নেই