সুভাষ বসুর গোপন ফাইল প্রকাশ করছেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ঘোষণা করেছেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত ৬৪টি গোপন ফাইল প্রকাশ করা হবে। ফাইলগুলো এতোদিন তার সরকারের হেফাজতে ছিল।

আগামী শুক্রবার সেগুলো প্রকাশ করার কথা রয়েছে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা নথি ওই ফাইলগুলিতে রয়েছে বলে মনে করা হয়।

তবে ফাইলগুলো থেকেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুভাষ বসু সম্পর্কিত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথি রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। সেগুলি তারা প্রকাশ করতে এখনও রাজি নয়।

গবেষকরা বলছেন, ফাইলগুলো সামনে এলে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসই সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যেতে পারে।
আজাদ হিন্দ ফৌজ নেতাদের কয়েকজন

মমতা ব্যানার্জী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সংক্রান্ত যতগুলো গোপন ফাইল আমাদের কাছে আছে, তার মধ্যে কিছু মূখার্জী কমিশনের কাছে গোপনে আমরা পাঠিয়েছিলাম, সেগুলো আবার ফেরত আনা হয়েছে। এসব ফাইলই আমরা গবেষক আর সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রকাশ করবো শুক্রবার।’

আজাদ হিন্দ ফৌজ নেতাদের কয়েকজন
আজাদ হিন্দ ফৌজ নেতাদের কয়েকজন

ফাইলগুলির বেশিরভাগই ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সাল সময়কালের, যার একটা বড় অংশ ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের জোগাড় করা তথ্য।

সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে ভারত সরকারের কাছে অতি গোপণীয় যেসব নথি রয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা করেন অনুজ ধর। তার কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গের এই ফাইলগুলিতে মূলত ‘শৌলমারীর সাধু’কে নিয়েই বেশি তথ্য থাকবে। এ ছাড়াও জওহরলাল নেহরু ও পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মূখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া বেশ কিছু নথি ও চিঠিপত্রও থাকা উচিত। আর সুভাষচন্দ্রের পরিবারের ওপরে যে নজরদারী রাখতেন গোয়েন্দারা, সে সংক্রান্ত তথ্যও ফাইলগুলিতে পাওয়া যাবে।’

শৌলমারীর ওই সন্ন্যাসী আসলে সুভাষ চন্দ্র বসু কী না, তা নিয়ে এক সময়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যেমন বিতর্ক রয়েছে অযোধ্যা- ফৈজাবাদে বসবাসকারী গুমনামি বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর আসল পরিচয় সুভাষ চন্দ্র বসু কি-না তা নিয়েও।

এ বিষয়ে সম্প্রতি অনেক তথ্য উঠে আসছে, যা থেকে অযোধ্যার ওই সন্ন্যাসীর সঙ্গে সুভাষবসু চেহারার অদ্ভূত মিল যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনই তার কাছে পাওয়া চিঠিপত্র ও অন্যান্য নথির মধ্যে আজাদ হিন্দ ফৌজের পরিচিতদের তালিকা, হাতে আঁকা সাইবেরিয়ার মানচিত্র প্রভৃতিও আছে।

আজাদ হিন্দ ফৌজের প্যারেডে সুভাষ চন্দ্র বসু
আজাদ হিন্দ ফৌজের প্যারেডে সুভাষ চন্দ্র বসু

ওই সন্ন্যাসীর সঙ্গে বসু পরিবার আর আজাদ হিন্দ ফৌজের কয়েকজন ১৯৮৫ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত নিয়মিত কেন অতি গোপনে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন, সেই প্রশ্নও উঠছে।

সুভাষচন্দ্র বসুর ফাইলগুলি প্রকাশ্যে আনার দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন যে গবেষক, সেই রাজীব সরকার বলছিলেন এই সব প্রশ্নের উত্তর পশ্চিমবঙ্গের ফাইলগুলোয় সম্ভবত নেই।

সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালে তাইওয়ানের তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় যে মারা যাননি, সেকথা স্পষ্ট করেই জানিয়েছে বসুর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে গঠিত সর্বশেষ বিচারবিভাগীয় কমিশন –মূখার্জী কমিশন। কিন্তু ওই দিনের পরে সুভাষচন্দ্র বসু কীভাবে কোথায় গেলেন, সে সম্বন্ধে ওই কমিশন কোনও আলোকপাত করেনি।

ভারত সরকার বারেবারেই এক বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়া, আর পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার অজুহাতে সেই সব ফাইল প্রকাশ করতে চায়নি।

গবেষকরা মনে করেন ওইসব ফাইল সামনে এলে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসই সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যেতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই