সুলতান সুলেমান ও হুররামের কণ্ঠ কারা দিয়েছেন?

অটোমান সাম্রাজ্যের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিয়ালটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ভিনদেশি সিরিয়ালটিতে বাংলায় ডাবিং করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পীরা বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

সিরিয়ালটির অন্যতম প্রধান দুই চরিত্র সুলতান সুলেমান ও তাঁর স্ত্রী হুররাম সুলতানের অভিনয় অনেক প্রশংসিত হয়েছে। চরিত্র দুটিতে অভিনয় করেছেন তুর্কি অভিনয়শিল্পী হেলিট এরজেনস ও মেরিয়ম উজেরেলি।

আর তাঁদের দেওয়া সংলাপগুলো বাংলায় ডাবিং করেছেন দীপক সুমন ও মেহবুবা মিনহাজ। সুলতান সুলেমানের কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি সিরিয়ালের সব বাংলাদেশি ডাবিং শিল্পীর কণ্ঠ দেওয়ার বিষয়টি সমন্বয় ও পরিচালনা করেছেন দীপক সুমন নিজেই।

দীপক সুমন মঞ্চ ও টিভি অভিনেতা। অন্যদিকে, মেহবুবা মিনহাজও একজন মঞ্চ নাট্যকর্মী। বেশ কিছু টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। সুলতান সুলেমানে কণ্ঠ দেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা দুজন।

দীপক সুমন বলেন, “ডাবিংয়ের সময় আমরা বুঝেছিলাম, ‘সুলতান সুলেমান’ বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। কারণ, সিরিয়ালের গল্পটাই জমে যাওয়ার মতো, মানে অসাধারণ। আমাদের ধারণাই সত্যি হয়েছে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারা পর্যন্ত ‘সুলতান সুলেমান’ দেখছেন। প্রশংসা করছেন। আমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে। খুব আনন্দ নিয়ে কাজটা আমরা করেছিলাম।”

অন্যদিকে মেহবুবা মিনহাজ বলেন, ‘আমি তো মঞ্চনাটকে অভিনয় করি। টিভি নাটকে খুব কম অভিনয় করেছি। কিন্তু হুররাম সুলতানের ডাবিং করা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। আপনি খেয়াল করবেন, হুররাম সুলতানের সংলাপগুলোতে অনেক আপ অ্যান্ড ডাউন রয়েছে। কখনো হুররাম সুলতান কাঁদেন আবার কখনো জোরে জোরে হাসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর নিশ্বাস ছাড়ারও অভিনয় রয়েছে। এসব আমি করতে পেরেছি, কারণ কণ্ঠ দেওয়ার আগে হুররাম সুলতানের অভিনয় খুব ভালোভাবে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। খেয়াল করতাম, সে কীভাবে কথা বলছে, হাঁটছে, সবকিছুই। যদিও তুর্কি ভাষার আমি কিছুই বুঝি না। ’

এদিকে, সুলতান সুলেমানের কণ্ঠশিল্পী হওয়ার পর অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে দীপক সুমন ও মেহবুবা মিনহাজের। দীপক সুমন জানান, তাঁর সাত বছর বয়সী ছেলে ও তার বন্ধুরা মিলে খেলার ছলে স্কুলে সুলতান সুলেমানের অভিনয় করে। কিন্তু তাঁর ছেলের বন্ধুরা কেউই জানত না, সুলতান সুলেমানে কণ্ঠ তাঁর দেওয়া। একদিন এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তাঁর বাসায় ছেলের বন্ধুর মায়েরা এসে যখন সুলতান সুলেমান সিরিয়ালের প্রশংসা শুরু করেন, তখন তাঁর স্ত্রী নাকি বলেই ফেলেন, ‘তোমাদের সুলতান সুলেমান এখানেই আছে। সুমন সুলতান সুলেমানের কণ্ঠ দিচ্ছে।’ আর তখনই সবাই নাকি তাঁর সেলফি আর অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, মেহবুবা মিনহাজ জানান, তিনি হুররাম সুলতানের কণ্ঠ দিচ্ছেন, এটা তাঁর বন্ধুরা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন। তবে সেটা কণ্ঠ শুনে নয়, তাঁরা নাকি বুঝতে পেরেছিলেন হাসির শব্দ শুনে। একদিন তাঁর এক বন্ধু ফোন করে বলেছিলেন, ‘কীরে হুররাম সুলতানের হাসি আর তোর হাসির মধ্যে এত মিল কেন? ঘটনা কী?’ বন্ধুর কথা শুনে অনেক মজা পেয়েছিলেন মেহবুবা। সঙ্গে সঙ্গে সত্যি কথাটাও বন্ধুকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর সিরিয়ালে ‘সুলেমান…’ ডাকার সংলাপটাই নাকি বেশি প্রিয় মেহবুবার। বন্ধুরা এটা নিয়েও মাঝেমধ্যে তাঁকে খেপায়।

ডাবিং রুমে কণ্ঠ দেওয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দীপক সুমন আরো বলেন, ‘একটি দৃশ্যে সুলতান সুলেমান হুররাম সুলতানকে চুমু দেন। এখন চুমুর শব্দটা আমরা কীভাবে রেকর্ড করব, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে আমি আমার নিজের হাতে চুমু দিয়েছিলাম। সেই চুমুর শব্দটাই রেকর্ড করা হয়। মেহবুবাও তাই করেছে। কণ্ঠ দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের।’

অন্যদিকে, হুররাম সুলতানের কণ্ঠ যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারার জন্য দীপক সুমনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মেহবুবা মিনহাজ, কারণ নির্দেশনা দীপক সুমনের দেওয়া ছিল।



মন্তব্য চালু নেই