সুস্থ থাকার বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি!

সকালে খোলা বাতাসে খানিক সময়ের জন্যে হাঁটা কিংবা রাতে খাবার পর একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসা- এরকম পরামর্শ প্রায়ই চিকিত্সকেরা দিয়ে থাকেন। শুধু চিকিত্সকেরা কেন? সাধারণ কোন মানুষও এটা জানেন যে, হাঁটা ভালো অভ্যাস। কিন্তু কেন হাঁটা ভালো? কারণ এই যে, বাইরে একটু হেঁটে বেড়ালে অল্প সময়ের জন্যে হলেও প্রকৃতির সান্নিধ্য পাই আমরা। আর বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণিত যে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে অল্প একটু হাঁটলে সেটা আমাদের শরীর ও মনকে তো ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেই। সেই সাথে প্রভাবিত করে আমাদের মস্তিষ্ককেও!

প্রথমত, প্রকৃতির সাথে খানিকটা সময় কাটালে সেটা মানুষের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা হতাশা ও উদ্বিগ্নতাকে কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা শহর ও গ্রামের মানুষের ভেতরে তুলনামূলক পর্যালোচনা করেন আর বুঝতে পারেন যে, শহরের মানুষের ভেতরে গ্রমের মানুষের তুলনায় অতিরিক্ত মানসিক সমস্যা থাকে। এছাড়াও শহরের বাসিন্দাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন উত্পন্ন হয় বেশি পরিমাণে (লাইফহ্যাক)। আর সেটা থেকেই ভাবনাটা আসে যে, সত্যিই কি প্রকৃতি মানুষের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে? আর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ইতিবাচক।

দ্বিতীয়ত, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থী ও এর বাইরের শিক্ষার্থীদেরকে। আর সেখান থেকেই জানা যায় যে, প্রকৃতির মাঝে খানিকটা হেঁটে বেড়ানো আমাদের মনোযোগ আর লক্ষ্যকে শাণিত করে তোলে। এক্ষেত্রে এ দুটো দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা বেশ এগিয়ে থাকে অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে, যারা কিনা ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনের ভেতরেই সময় কাটাতে অভ্যস্ত। বিজ্ঞানীদের মতে, এর আরেকটি কারণ নিয়মের প্রতি হতাশা সৃষ্টি। একটি ভুল পরিবেশ ও অসহ্যকর পরিবেশকে যখন আমরা সহজাত বলে বুঝতে পরি সেটা আমাদের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করে। আর যখন এটা জানতে পারা যায় যে, এই অবস্থার পরিবর্তন কোনভাবেই হবেনা তখনই পুরো পরিবেশটাই হতাশাজনক বলে মনে হয়। মনোযোগ বা লক্ষ্য কোন কিছুই ঠিক থাকেনা (সাইকোলজি টুডে)।

তৃতীয়ত, গাছপালা আর সবুজের সান্নিধ্য আমাদের মস্তিষ্ককে অনেকটাই শান্ত ও সুস্থ করে তোলে ( নিউইয়র্ক টাইমস )। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা কিছু রোগীকে বেছে নেন আর তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন কামরায় রাখেন। কিছু কামরার জানালার সামনে রাখা হয় একটি গাছ। আর বাকীগুলোর সামনে রাখা হয় ইটের দেয়াল। আর অত্যন্ত আশ্চর্জজনকভাবে খেয়াল করা হয় যে, ইটের দেয়ালের চাইতে গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা রোগীরাই দ্রুত সুস্থ হয়ে গিয়েছে।

চতুর্থত, প্রকৃতির ভেতরে হাঁটলে আমাদের মস্তিষ্ক দৈনন্দিন যত ঝামেলা, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা খারাপ লাগা থেকে মুক্ত হয়ে যায় (নিউ ইয়র্ক টাইমস)। এটি পরীক্ষার জন্যে গবেষকেরা স্বেচ্ছাসেবকদের দুটি দল তৈরি করেন। একটি দলের সবাইকে একজন একজন করে হাঁটতে বলা হয় কোলাহলপূর্ণ রাস্তা দিয়ে। অন্য দলকে বলা হয় শান্ত প্রকৃতির ভেতর দিয়ে হাঁটতে। পরীক্ষা শুরুর আগে এ দুটো দলের সবাইকে কিছু প্রশ্ন করা হয়। হাঁটা শেষ হবার পর কোলাহলপূর্ণ স্থান দিয়ে হেঁটে আসা মানুষদের উত্তর অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু অন্যদের উত্তর অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাদের সবার শরীর স্ক্যান করে বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা মানুষের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

তাই বলা যায় যে, প্রকৃতি কেবল আমাদের চোখ বা বাইরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেই প্রভাবিত করেনা। অনেকটা পরিবর্তন এনে দেয় আমাদের মন আর মস্তিষ্কেও। সুস্থ একটা শরীর, সুস্থ একটা জীবনের জন্যে সুস্থ মন আর মস্তিষ্ক প্রচন্ডভাবে দরকার আমাদের। আর তাই সার্বিকভাবে ভালো থাকতে প্রকৃতির ভেতরে দিনের খানিকটা সময় অবশ্যই আমাদের হেঁটে বেড়ানো উচিত।



মন্তব্য চালু নেই