সৃজনশীল পদ্ধতি প্রশ্ন ও বিশৃঙ্খল পাঠ্যপুস্তক

তানভীর আহম্মেদ : বর্তমান সরকারের সময় শিক্ষায় যতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সৃজনশীল পদ্ধতি অন্যতম ।যদিও সৃজনশীল পদ্ধতি কতোটুকু কাজে দিচ্ছে তা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতভেদ আছে ।তবে যতো মতভেদ থাকুক না কেনো আমার কাছে মনে হয় সৃজনশীল পদ্ধতিটি অবশ্যই যুগোপযোগী ।তবে প্রত্যেক ভালো কাজের যে রকম কিছু ট্রুটি থাকে তেমন এখানেও কিছু ট্রুটি আমার দৃষ্টিতে এসেছে । তার মধ্যে উন্নতম বহুনির্বাচনী প্রশ্নের পরীক্ষা সংযোগ ।এখানে আমার প্রশ্ন হলো পদ্ধতি যখন সৃজনশীল তখন কেনো মুখস্তবিদ্যা ।অথবা চুরি বা জোতচুরি করে নাম্বার নেওয়া ।আমি এখানে চুরি বলতে বুঝাতে চাচ্ছি মুখস্ত বিদ্যাকে।আর জোতচুরি হচ্ছে প্রশ্ন আউট করে বা কোনো শিক্ষকের সহযোগিতায় উত্তর প্রদান অথবা পরীক্ষা হলে মেধাবী ছাত্রদের সহযোগিতায় দূর্বল ছাত্রও তাদের সমান নাম্বার পাওয়াকে । অপরদিকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকায় দূর্বল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বিষয়টি আরও কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে । বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য । এর সঙ্গে অপর একটি বিষয় যা সৃজনশীল পদ্ধতিকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তা হচ্ছে সৃজনশীল বিষয়ের বই সমূহ। আমি মনে করি পাঠ্যপুস্তক এমন হওয়া উচিত যেখানে সিলেবাসের সকল বিষয় থাকতে হবে ।এবং প্রশ্ন যেরকম হবে তার সাথে পাঠ্যপুস্তকের মিল থাকতে হবে ।কিন্তু দুঃখজনক বিষয় বর্তমান পাঠ্যপুস্তক কোনোভাবেই এই চাহিদা পুরুন করতে পারছেনা ।এবং কোনো পাঠ্যপুস্তকই সিলেবাস কভার করছে না ।এবং কোনো বই সৃজনশীল আকারের না।বই সমূহে কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেয়া আছে এই মাত্র।যা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের চাহিদা পুরুন করছেনা ।এই কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । কিছুদিন পূর্বে ড.জাফর ইকবাল স্যার এক মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বই তিনি নিজে বোঝেন না শিক্ষার্থীরা কি বুঝবে ?যদিও কথাটি তিনি রশিকতা করে বলেছেন কিন্তু কথাটি সত্য।বিজ্ঞান বিষয়ের বই গুলোতে এতো বেশি পাঠ্য সূচী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা কোনো ভাবে দুই বছরে কভার করা সম্ভব না।এটি শুধু নবম-দশম শ্রেণীর জন্যই প্রযোজ্য নয় এটি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্যও প্রযোজ্য ।অবাক লাগতে হয় বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের একাদশ -দ্বাদশ শ্রেণীর বই দেখলে ।যেই বই ভালোভাবে পড়ানো হলে কোনোভাবেই ছয়টির বেশি চেপ্টার শেষ করা সম্ভব না।সেখানে ১০/১১ টি চেপ্টার রয়েছে।যা শেষ করা কোনোভাবে সম্ভব না।আর এই চেপ্টার সমূহের মধ্যে রয়েছে একাধিক চেপ্টার যা বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে ।যার ফলাফল হাতেনাতে পাচ্ছে দেশ ।বিজ্ঞানে যতো শিক্ষার্থী ফেল করছে তার সিংহভাগ ফেল করছে পদার্থে ।আবার পদার্থের জন্যই ভালো ফলাফল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ।যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানে পড়ার আগ্রহ হেরে ফেলছে । যার প্রভাব পরছে গ্রাম এলাকার প্রতিষ্ঠান সমূহে। সর্বশেষ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন তিনি যেনো বিষয়টি অনুধাবন করেন । এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ।যেনো আর কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

লেখক : প্রভাষক, পদার্থবিজ্ঞান; আবাদপুকুর মহাবিদ্যালয়, রাণীনগর, নওগাঁ



মন্তব্য চালু নেই