সেই দম্পতির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা

একই ঘরে মূর্তিপূজা ও কোরআন পাঠের অভিযোগে গত মঙ্গলবার আটক সোলেমান (৬১) ও নূরজাহান (৪৫) দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকমর্তা আমজাদ হোসেন শুক্রবার জানান, ওই দম্পতি একইসঙ্গে মূর্তিপূজা ও কোরআন পাঠের কথা স্বীকার করেছেন। তারা আরো জানান, প্রতি মাসে একশ বাড়ি থেকে টাকা ও চাল সংগ্রহ করতেন। ১৫ বছর ধরেই বাড়িটিতে নিয়মিত মিলাদ-মাহফিল ও জিকির-আজকারের আয়োজন হতো। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ এসে জড়ো হতো। এ সময় কালি মূর্তি কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতেন যাতে মুসলামনরা দেখতে না পারে।

আর কয়েক দিন পর একই নিয়মে হিন্দু বাড়িতে কাছে টাকা ও চাল সংগ্রহ করে স্বপ্নে মূর্তি পূজার কথা বলে তাদেরকে বাসায় নিয়ে আসতো। রাতে বেলা পূজা অর্চনার আয়োজন করা হত।

স্থানীয় প্রতিবেশি মিজানুর রহমান ওই দম্পতির ২৬ বছর বয়সী একমাত্র সন্তানের বরাত দিয়ে জানান, তার বাবা-মা এনায়েতপুরী পীরের সাগরেদ। তারা গোপনে ঘরের মধ্যে কালিমন্দির স্থাপন করেছিলেন। আবার ওই ঘরেই প্রতিদিন কোরআন পাঠ ও জিকির মাহফিল হতো। তাদের দু’টি ঘর। একটি ঘরে অসুস্থ বাবা প্রায় সবসময় শুয়ে থাকতেন আর অপর ঘরটির এক কোণায় কালিমূর্তি রাখা হয়েছিল। সে ঘরেই মিলাদ ও জিকির হতো। এসময় কালিমূর্তিটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হতো। এ কারণে এতো দিন প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানতে পারেনি। ১৫ বছর ধরে তারা এ কাজ করে আসছিলেন।

আটক সোলেমান জানান, আগে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন অসুস্থ। এনায়েতপুরী পীরের সাগরেদ হওয়ায় বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের টাকা-পয়সা চাল দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে।

এসব করে মানুষকে প্রতারিত করছেন এমন প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো মানুষের সাথে প্রতারণা করি নাই। যারা এনায়েতপুরী পীরের সাগরেদ তারা বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের জন্য কিছু অনুদান দেয়।’

মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল দাবি করেন, ওই পরিবারটি র্দীঘদিন ধরে মানুষের সাথের ধর্মের কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল। তারা দুটি ধর্মের অনুভূতিকে আঘাত হেনে মুসলামদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফকে অবমাননা করেছে। তাই এলাকাবাসীর প্রতিনিধি হিসেবে ২৯৫ ধারায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

এদিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের হামলার খবর পেয়ে আমরা ওই দম্পতির নিরাপত্তার খাতিরেই থানায় এনেছিলাম। পরে আদালতে প্রেরন করলে আদালতে পুলিশ হেফাজতে দিলে ওই দম্পতি দায় স্বীকার করেছেন বলে তিনি জানান। তাদের বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার অভিযোগ এনে স্থানীয় কাউন্সিল একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা তদন্ত অনুযায়ী আবার আদালতে প্রেরণ করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই