সেই দিনে ইন্দিরা গান্ধী যা চেয়েছিলেন শেখ মুজিবুরের কাছে!

১৯৭১ সালের পরবর্তী অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে ভারতীয় সেনা থাকার চুক্তি করতে। ভারত একইভাবেই ভুটানে স্থায়ীভাবে সেনা প্রেরণ করেছিল। ইন্দিরা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা তার চাওয়াকে পূর্ণ করবে। নতুন সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেই তার ইচ্ছার গুরুত্ব দেবেন। তবে বাংলাদেশে কিছু গোয়েন্দা ইন্দিরা গান্ধীর এই ইচ্ছাকে গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক হাইকমিশনার আফ্রাশিয়াব তার রচিত ‘১৯৭১ : ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিকশন ভিউস অ্যান্ড পারসেপসনস ইন পাকিস্তান, ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে ১৫১ পৃষ্ঠায় এই সব তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বাংলাদেশে ২০১১ সালের আগস্ট থেকে ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। বইটি প্রকাশিত হয় লাহোর থেকে গত বছরের মে মাসে।

আফ্রাশিয়াবের বইয়ে আরও লেখা হয়েছে, এমনকি বর্তমানেও ভারত পাকিস্তানে কাজ করেছেন এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে এ ধরনের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পছন্দ করে না। শেখ মুজিবুর রহমানও এ ধরনের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করতেন না। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এ ধরনের যেসব কর্মকর্তা পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন তাদের বিশেষ পরীক্ষা দিতে হয়েছিল যে, তারা ফের পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতী রয়েছেন কি না।

আফ্রাশিয়াব লিখেছেনÑ ঢাকার অধিকাংশ সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা জানায়, নয়াদিল্লির ইচ্ছায় ঢাকার অধিকাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়। এটি শুধু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদেও নয়াদিল্লির ইচ্ছার বেশ গুরুত্ব রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদেও দিল্লির এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়।

বাংলাদেশে সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিবের মতে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করা হয়। তাকে কিছু ব্যক্তির নামের তালিকা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দীপুমনির নামও ছিল। তাতে স্পষ্ট বলা হয়Ñ বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদে দীপুমনিকে যেন সংযুক্ত করা হয়।
তিনি লিখেছেনÑ বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে বলা হয়, কোনো কালক্ষেপণ না করে এই তালিকাটি যেন বাংলাদেশে দ্রুত পাঠানো হয়। তারপর বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদে দীপুমনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

নয়াদিল্লির বিশেষ ইচ্ছায় দীপুমনি বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদে স্থান করে নেন। তারপর তিনি নিয়োগদাতা ভারতের স্বার্থে কাজ শুরু করেন। সৌদি আরবে ওআইসির বৈঠক শেষে বা ইসলামিক কোনো দেশের রাজধানীতে সম্মেলন করে তিনি দিল্লিতে প্রথমে তার নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, পরে তিনি ঢাকায় ফেরেন।



মন্তব্য চালু নেই