সেই ফেলে দেওয়া শিশুটি যেভাবে বাঁচলো

সেদিন ছিল মঙ্গলবার (৮ মার্চ ২০১৬)। দিবাগত রাত প্রায় ৩টা। হঠাৎ একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাস এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ালো। এরপর একজন মহিলা বের হয়ে একটি পুটলির মতো কি যেন রেখেই আবার গাড়িতে উঠে টান দিয়ে চলে গেলেন। (ফাইল ফটো)

ঠিক ওই সময় রাস্তার পাশে ফুটপাতে ছিলেন এক নারী। ফেলে দেওয়া ওই পুটলির মধ্য থেকে বাচ্চার চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে এসে পরম মমতায় শিশুটিকে বুকে তুলে নেন।

ঘটনাস্থল রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের পিছনে পরীবাগে ওয়াপদা কলোনির সামনের সড়ক। এ সড়কে একটি পোলের পাশে ফুটপাতে মাথা গোঁজার ঠাই করে নিয়েছিলেন তাসলিমা নামের ওই নারী। বেশভুষার কারণে সেখানে সবার কাছে তার পরিচয় পাগলি হিসেবে।

এদিকে সকাল হওয়ার আগেই শিশুটি খাবারের জন্য চিৎকার শুরু করে। উপায় না পেয়ে তাসলিমা তার জমানো কয়েকটি টাকা দিয়ে দোকান থেকে দুধ কিনে এনে খাওয়ানো শুরু করেন। এরপরেও যখন কান্না থামছিল না তখন নিজের বুকের দুধ পান করানোর জন্য এগিয়ে দেন। যদিও কোন দুধ বের হয়নি তাতে। কিন্তু শিশুর কান্না থামাতে এই অভিনয় করেছেন তিনি।

ঘটনার পরিধি বাড়তে থাকে। এলাকার শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। ওই শিশুটিকে কোথায় পেয়েছো? কার বাচ্চা ওটি। তাসলিমা শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য ঘটনা খুলে বলে সবাইকে। শোনার পর অনেকে এগিয়ে আসেন। কেউ টাকা দেয়, কেউ দুধ কিনে দেয়। কেউবা চিনি আবার কেউবা সুজি কিনে দিয়ে তাসলিমাকে সহায়তা করেন। অনেকে ওষুধও কিনে দিয়েছেন।

কিন্তু এরই মধ্যে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পাতলা পায়খানা আর প্রচন্ড জ্বরে যখন শিশুটি একেবারেই কাহিল হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই তাসলিমা আশেপাশের কয়েকজন ছেলেকে ডেকে তার অসুস্থতার কথা জানায়। শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসার কথা বলেন। তখন সেই ছেলেরা শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিশুসহ তাসলিমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিয়ে আসে।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাকির হোসেন বলেন, ‘যারা শিশুটিকে নিয়ে এসেছেন তারাই শিশুটির নাম আল মামুন দিয়ে ভর্তি করিয়েছেন। মামুনের শরীরে প্রচণ্ড জ্বর রয়েছে। পায়খানাও হচ্ছে ঘন ঘন। ভর্তির পর শিশু ওয়ার্ডের ২০২ নম্বর বেডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আশঙ্কার কিছু নেই। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠার আশা করা হচ্ছে।’

এদিকে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ছেলেদের মধ্যে একজন ফাহাদ। তিনি সবেমাত্র সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়াশুনা শেষ করেছেন। তিনি জানান, তিনিসহ কয়েকজন বন্ধু মিলে তাসলিমার অনুরোধে শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখন হাসপাতালের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তুলবেন। পাশাপাশি বিষয়টি হাসপাতালের ফাঁড়ি পুলিশকেও জানানো হয়েছে। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, শিশুটিকে এই মুহুর্তে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর কোথায় রাখা যায় তা চিন্তা করা হচ্ছে। আর তাসলিমা রাস্তার পাগলি। তার কাছে দিয়েও তেমন কোনো লাভ হবে না। কারণ সে নিজেই খেতে পারে না। তাসলিমার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

এর আগে কাফরুল থানা এলাকায় জঙ্গলের ভেতর থেকে কুকুরে কামড়ানো অবস্থায় এক শিশুকে লিপি নামের স্থানীয় এক মহিলা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই শিশুটি সুস্থ হওয়ার পর এখন লালবাগের সোনামনি নিবাসে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই